আমরা যদি ২০০০-২০০১ এর দিকে ফিরে যাই, দেখবো তখন থেকেই কিন্তু ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ ও এডিস মশা নির্মূলে নাগরিক সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা সিটি করপোরেশন তখন বিভক্ত হয়নি। সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন তখন এডিস মশা নির্মূলে রকমারি সচেতন কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে। গণমাধ্যম তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তখন নগরবাসীর মধ্যে তাৎক্ষণিক কিছু সচেতনতা লক্ষ করা গেছিল। প্রাণ বাঁচাতে সচেতন হতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক-দুই বছরের তাৎক্ষণিক সচেতনতা উৎসবের পর নগরবাসী চুপসে গেলো। সদর রাস্তা দূরের কথা, নিজের ঘরও পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীকে নড়তে-চড়তে দেখা গেলো না। সংগঠনগুলোও যেন ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা যদি রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে অলিগলির দিকে হেঁটে যাই, দেখবো এডিস মশা চাষের কী সুন্দর আয়োজন করে রেখেছি আমরা নগরবাসীরা। বাড়ির সামনে, উঠোনে বৃষ্টির পানি জমে থাকার উৎসের শেষ নেই। সেখানে এডিসের জন্মোৎসব। একই উৎসব দেখতে পাবো শহরের দালানগুলোর বারান্দা, ছাদে।
সিটি করপোরেশন তাদের লোকবল এবং বাজেট দিয়ে এডিস নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে দেড় যুগে। তাদের কামান অকার্যকর। এ সত্য প্রমাণিত। আমরা গত বছরও দেখেছি জনপ্রতিনিধি কামানের ধোঁয়ায় শহর অন্ধকার করে দিচ্ছেন। তাদের সেই আয়োজন গণমাধ্যমের ক্যামেরার মাঝেই সীমিত ছিল। ক্যামেরা সরে গেলে কামানের গোলাও ফুরিয়ে গেছে। এডিস মশা চতুর। তারা এ ধরনের সাজসজ্জাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জন্ম বিস্তার ঘটিয়েই গেছে। ডেঙ্গুর সঙ্গে গতবার যোগ হয়েছিল চিকুনগুনিয়া। এই রোগের পীড়ন আরও যন্ত্রণার। সেই ভয়াবহ পীড়নও রাজধানীবাসীকে দায়িত্বশীল নাগরিক করতে পারেনি। এবারের বর্ষাতেও এডিসের আনন্দের সীমা নেই। তারা ঠিক আগের মতোই প্রজনন ক্ষেত্র পেয়ে গেছে। বাম্পার জন্ম হচ্ছে এডিসের। যে পরিবারে ডেঙ্গু, তাদের বিপর্যস্ত অসহায় অবস্থা করুণ। কিন্তু তারপরও কি সেই পরিবার এবং তাদের প্রতিবেশীরা সচেতন হচ্ছে, বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখছেন? মোটেও না। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোরও সাড়া নেই। সকলে হাত গুটিয়ে বসে আছে দুই নগর পিতার ভরসায়। কিন্তু তারাও তো অসহায়, কারণ এডিস যে এখন তাদের চেয়েও শক্তিশালী। তর্ক অনেক দূর চলে গেছিল। যেতে যেতে যে মাইলফলকে গিয়ে থামতে হয়, সেখানে লেখা—নগর পরিচ্ছন্নতার কাজ নিজের, অর্থাৎ ব্যক্তি থেকেই শুরু করতে হবে। ব্যক্তির শক্তি অসীম।
লেখক: কলামিস্ট