ডেঙ্গু আসবে এমন সতর্কতা থাকার পরেও তারা জড় পাথর হয়ে রইলেন। ভুল ওষুধ, নকল ওষুধ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেন। মিথ্যে অভয় বাণী দিলেন। পরে সামলে উঠতে না পেরে বললেন, সত্যি আমরা ডেঙ্গুর ভয়াবহ শিকারে পরিণত হচ্ছি ক্রমশ। এবং এই ভয়াবহতা সামাল দেওয়ার সাধ্য-অভিজ্ঞতা তাদের নেই। যাই হোক, আক্রান্তই যখন হলাম, তখন চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার তো আছে আমাদের, তাই না? সেখানেও হয়ে গেলাম রোগী নামের শোষিত। মশার চাইতেও মারাত্মকভাবে আমাদের শুষে নিচ্ছে দানব হাসপাতালগুলো। আমরা এখন চিকিৎসার হাটের পণ্য।
বাজারেও আমাদের অবস্থা শোচনীয়। অসহায় ক্রেতা। তিনবেলা খাবার মুখে তোলার মধ্যেও সুখ নেই স্বাদ নেই। পরিতৃপ্তি নিয়ে খাওয়ার অধিকার নেই। আম-দুধ-মাছ থেকে শুরু করে যে পণ্যতেই হাত দেবো সেখানে বিষের ভয়। বিষ নিয়েও জমজমাট বাণিজ্যিক খেলা। সকালে যে খাবারের বিষের কথা শুনি, বিকালেই সেই খাবার বিষমুক্ত। সত্যিই যেন এক জাদুর শহরে আছি আমরা। এখানে নানা উপায়ে সুখে থাকার প্রলোভন আঁকা থাকলেও, লুকিয়ে রাখা আছে অসুখের মরণ জাল।
এই অসুখ থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় কই? ওষুধ কেনা সাধ্যে কুলোয় না। যতটুকু ধার-কর্জ করে কিনতে পারি, তাও ভেজাল নকল। ওষুধে অসুখ মরে না।
পথ চলবো সেখানেও উদ্বেগ যানজট, গণপিটুনি, যৌন নিপীড়নের। পথ চলাতে আনন্দ নেই আর। কেমন করে যেন সকলে একলা হয়ে গেলাম। আমাদের সেই একাকিত্বের ফলাফল—সন্তানরা ক্লাস রুমে নেই। তাদের হাতে বই নেই মাদক, অস্ত্র। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন কোচিং সেন্টারের কাছে বন্দি।
তাহলে আমরা কী করবো, এই সমাজচিত্রে আমরা ভালো থাকি কী করে? ভালো আছি—এই উচ্চারণ আজ শুধু সৌজন্যতা মাত্র!
সৌজন্যতার মেয়াদ কতদিনের? খুব অল্পতে যে মনের কথা আর ঠোঁটের কথা এক হবে, সেই আভাস তো পাচ্ছি না। দুর্নীতির কারেন্ট জালে আটকে আছি সবাই। সবাই ঢোল বাজিয়ে দুর্নীতির ময়দানে নামিনি। অধিকাংশকেই দুর্নীতির কাছে নতজানু হতে হয়েছে। টিকে থাকার স্বার্থে। দুর্নীতি এখন গৌরবের। পুরোটাই প্রকাশ্য। দুর্নীতি দমন করার কথা যার, যাদের, তারাই এখন দুর্নীতির তারকা। এই তারকাদের যারা সন্তান, তারা কি দুনীতির দুষ্টচক্র থেকে রক্ষা পাবে?
আমাদের স্কুলে যাওয়া সন্তানরা জেনে গেছে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করলে সাত খুন মাফ। এখন থেকেই তারা শিক্ষকদের চোখ রাঙিয়ে বলছে—ক্লাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের বড় ভাই আছেন। তিনি তাদের ওপরের ক্লাসে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন। সমাজকে বুঝানো হয়েছে কোনও দ্বিমত নেই, সবাই সহমত। এই সহমতের সমাজে ভুল ধরা পড়ে না। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের সংগঠনগুলো কোনও পাপ করতে পারে না। এত ভালোর মাঝে কী করে ভালো থাকা যায়? যায় কি? উপায় যে কেউ বলে না!
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি