এই সুরের সঙ্গে আমাদের অভ্যস্ততা নতুন নয়। ঈদের দুই উৎসব ছাড়াও সরকারি ২-৩ দিনের ছুটির ফাঁদের সময়েও সড়ক ও রেলপথের এমন ধীর লয়ের সঙ্গে যাত্রীদের পরিচয় আছে। কেন যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয়, কেন গাড়ির গতি শ্লথ হয়, সেই কারণ কোনও দফতরের অজানা নয়। রেললাইনের অসুখের কথা কার অজানা? শুধু প্যারাসিটামল আর অন্ধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে এখন আর রেলপথ সচল রাখা সম্ভব নয়। রোগ শনাক্ত হওয়ার পরেও প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার ছাড়া চলছে রেলপথ। স্বাভাবিক শিডিউল সহ্য করার ক্ষমতা যে রেললাইনের নেই, তার ওপর যখন বাড়তি শিডিউল চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন তো বিদ্রোহ করবেই। রোগ গোপন করে রাখতে রাখতে এবার আর রেলপথ বিভাগ চেপে রাখতে পারলো না। শিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে নিতে হয়েছে। ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে, ট্রেন ঈদ পর্যন্ত এই বিপর্যয় নিয়েই চলবে। যাত্রীরা চাইলে টিকিট জমা দিয়ে টাকা তুলে নিতে পারবেন। অথচ যদি আগে থেকেই তদারকি, মেরামত কাজ ঠিকঠাক মতো হতো তাহলে রেলপথের ট্রাফিক এই পর্যায়ে বিপর্যস্ত হতো না।
বন্যা, বৃষ্টিতে সড়কপথের কিছুক্ষতি হবেই। ঈদের চাপ সামলাতে সেই রাস্তা মেরামত করা যেতো। করা হয়নি। মহাসড়ক, সড়কের কোন কোন স্থান যানজট তৈরি করে, একথা হাইওয়ে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের অজানা নয়। ওই স্থানগুলোতে বাজার-হাট বসতে না দেওয়া, রাস্তার মাঝখানে বাস রেখে যাত্রী ওঠা-নামা করতে না দেওয়া, দ্রুত টোল আদায়ের কোনও পদ্ধতি সাময়িকভাবে চালু করা বিশেষ করে ট্রাক এবং বাসকে অযথা তল্লাশি, মামলার হয়রানির মধ্যে না ফেলা, কোরবানির পশু বহনকারী ট্রাকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সুবিধার্থে কৃত্রিম জট তৈরি না করা। উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালানো বা ওভারটেকিং বন্ধ রাখা। এদিকগুলো খেয়াল রাখলে সড়কপথে যান চলাচলে গতি আনা যেতো। দুঃখজনক হলো, হাইওয়ে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন এদিকটায় অন্যান্য সময়ের মতো এবারও গাফিলতি করে গেছে। যার ফলাফল ঘরমুখো যাত্রীরা পথে বসে আছেন। এখানে বাসের বাড়তি ভাড়া আদায় এবং রেল কর্মচারীদের টিকিট কালোবজারির কথাও যোগ করা উচিত। কারণ এই দুইয়ের কারণে ঈদ যাত্রাপথের সুর আনন্দময় না হয়ে করুণ লয়ে বাজছে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি