এই লেখক ও বচনওয়ালাদের আচরণ পণ্য বিক্রেতাদের মতোই। তারা বিনোদন বিলি করার বিষয় হিসেবে নারীকে বেছে নেন। নারীর পোশাক, উচ্চতা, সৌন্দর্য, কাজকে কটাক্ষ করে লিখে যান, বলে যান। এতে নারীরাও যে বিনোদিত হয়ে হেসে কুটিকুটি হন না, তা বলবো না। কারণ নারীদের একটি সময় পর্যন্ত এক প্রকার সম্মোহনের জাদুতে বেঁধে রাখেন তারা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক গণমাধ্যম। জাদুর আবহ কাটলেই নারীরা বুঝতে পারেন তারা কীভাবে ওই বিনোদনকারীদের স্থূল হাস্যরসাত্মক চুটকিতে রেসিপি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। নারীরা যখন বিষয়টি আঁচ করতে পারেন তখন অবশ্য নিশ্চুপ থাকেন না তারা। দীর্ঘ সময় ধরে বাতিঘর ভাবতে থাকা মানুষটির শলতেও নিভিয়ে দেয় এক ফুৎকারে।
শুধু কি নারী? নানা-পেশার মানুষ নিয়েও তাদের বচন ও লেখার শেষ নেই। কোনটি সমাজের জন্য উদ্দীপক বাণী আর কোনটি শ্রেণি সমাজের জন্য বিদ্বেষমূলক এটি বোঝার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তারা। একজনকে আলো ভেবে অন্যরাও বিদ্বেষের ফানুস ওড়ান। ভাবেন পুকুরে ঢিল ছুড়লে যে ঢেউয়ের দোলো দেখা যায়, তাই প্রকৃত হিল্লোল। আসলে সেটি পুকুরের নিজস্ব উচ্ছ্বাস নয়। প্রাকৃতিক বায়ু প্রবাহেই পুকুরের জল নিজের মতো করে হেসে ওঠে। আমাদের লেখক, কথকদের অনেকেই সহজাত সেই শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। দুঃখজনক হলো সাধারণ মানুষদেরও তারা একই ধরনের অক্ষম ভাবতে শুরু করেছেন। অনেকে বলছেন, ফেসবুক, ইউটিউব আসায় এই ধরনের স্থূলতা বেড়েছে। বিষয়টি আমরা অন্যভাবেও ভাবতে পারি। ফেসবুক ও ইউটিউবের কারণে ওই ধরনের বিনোদন বিলিকারকরা বড় জনগোষ্ঠীর নজরে এসেছেন। তাদের মান এখন যেমন, তখন তেমনই ছিল। আজকাল ওয়াজ-মাহফিলের কতিপয় বক্তা নিয়ে যে হাসির রোল বা বিতর্ক, এই বক্তাদের সঙ্গে কতিপয় বুদ্ধিবৃত্তিক দাবিদার বক্তাকে সাধারণ ভোক্তারা আলাদা করবেন কোন উপায়ে?
তাই বলে প্রকৃত রস উপহার দেওয়ার মতো বলা ও লেখার মানুষের কিন্তু ঘাটতি পড়েনি। তারা আছেন, চুপিচুপি লিখে যান। বলছেন কম। প্রকাশ্য হতে চান কম। আবার যারা প্রকাশ্যে আসেন, তারা ব্যাটারিচালিতদের আলোর তীব্রতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চান না। আড়ালে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন। খুব কম ভোক্তার চোখেই সেই প্রদীপের আলো চোখে পড়ে। ভোক্তাদেরই উচিত মোহভঙ্গের বেদনা এড়াতে ব্যাটারিচালিত বিনোদনবিলিওয়ালাদের কাছ থেকে দূরে থাকা। প্রদীপের উত্তাপ নেওয়াই মনের স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গল।
সস্তা বিনোদনের তিন অবস্থার দুর্বিপাক থেকে চলুন নিরাপদ থাকি।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি