ক্লাবগুলোর বাহ্যিক জৌলুস বেড়েছে। সাম্প্রতিক অভিযানে দেখলাম ক্লাবে অন্দরের চাকচিক্য কম বাড়েনি। কমেছে ক্লাব পরিচালনার দক্ষতা। দেখা দিয়েছে যোগ্য নেতৃত্বের। এই ক্লাবগুলো বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি বা শিল্পগোষ্ঠীর অনুদানে চলতো। ক্লাব পরিচালনা করতেন ক্রীড়ানুরাগী ব্যক্তি বা সংগঠক। স্থানীয় সমাজসেবীদের পাশাপাশি শিল্পগোষ্ঠীর মালিকরাও ক্লাব পরিচালনায় সক্রিয় থাকতেন। রাজনীতিবিদদের অনেকেও যুক্ত ছিলেন। ক্লাব থেকে আয় করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। তারা ক্লাবের জন্য নিবেদিত থেকেই খুশি ছিলেন। ক্লাবের নিজস্ব আয়েরও ব্যবস্থা ছিল। ‘হাউজি’ নামক জুয়ার একপ্রকার অলিখিত অনুমোদেন ছিল। রাতে চলতো হাউজি খেলা। এখান থেকে আসা আয় ক্লাবের খরচের খাতায় যেতো। ধীরে ধীরে দেখা গেলো, ক্রীড়ামোদী সংগঠকদের চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাবানরা অধিকাংশ ক্লাবের নেতৃত্বের দখল নিতে শুরু করে দিলেন। এক প্রকার ক্লাবের মালিকানা নেওয়ার মতো। খেলাপাগল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, প্রাক্তন খেলোয়াড় এমনকি খেলা মনস্ক রাজনীতিবিদ ক্লাবের উঠোন অনেকেই থেকে সরে আসতে বাধ্য হলেন। ধীরে ধীরে ক্লাবগুলো চলে গেলো রাজনীতির তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির নেতৃত্বের কাছে। যে কারণে আমরা দেখতে পেলাম প্রিয় ফুটবল, ক্রিকেট, হকি দলগুলোর অবনমন। ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা। মোটকথা পুরো ক্রীড়াঙ্গনই ক্রীড়ার মেজাজ হারালো। মেজাজ হারানোর কারণ অবশেষে আবিষ্কৃত হয়েছে। ক্লাবগুলো কতিপয় রাজনৈতিক লেবাসধারী মানুষের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে মূল খেলার চেয়ে মনোযোগ চলে গিয়েছিল জুয়ার বোর্ডে। জুয়ার বোর্ড থেকে টাকা এলেই হলো, মাঠে খেলা গড়াক বা না গড়াক।
ক্রীড়া ক্লাবগুলোর সাম্প্রতিক অভিযান নিয়ে নানা জনের নানা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। কিন্তু সবার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্লাবগুলোকে তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা। মাঠে নিয়মিত খেলার আয়োজন করা। খেলার মান বাড়ানো। এজন্য ক্লাবের আয়ের পথগুলো নিশ্চিত রাখতে হবে। সরকারি অনুদানে কোনও ক্লাব চলে না। এখানে প্রকৃত ক্রীড়ামনস্ক পৃষ্ঠপোষকদের প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। সাবেক খেলোয়াড়, দক্ষ ক্রীড়া সংগঠকরা নেতৃত্বে এসে ঠিক করুক ক্লাবের আয়ের উৎস কী হতে পারে। যদি হাউজি বা ক্যাসিনো সমাধান হয়, তাহলে তার বৈধতা দিতে হবে। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন কোনও অপরাধী ক্লাবের নিয়ন্ত্রক না হয়ে ওঠে সেদিকে ক্রীড়া পরিষদ ও মন্ত্রণালয়কে মনোযোগ দিতে হবে। যদি ক্রীড়াঙ্গনের প্রকৃত মানুষগুলোকে আবার ক্লাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে মোহামেডান, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র আবারও তাদের পুরনো ঐতিহ্যে ফিরবে। ফিরতে হবেই তারুণ্যের প্রয়োজনে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি