সমাজ , রাষ্ট্রের স্লোগান এখন ‘দখলদার হয়ে যাও। যে যেখানে পারো পদ, পদবি, পুরস্কার, জল-স্থল-বায়ুর দখল নিয়ে নাও। দখল নিতে পারলেই তুমি আসল পুরুষ অথবা নারী।'
বললাম ‘তাহলে আপনি এগুলোর কোনোটি দখল করতে না পেরে বা আসল পুরুষ না হতে পেরেই কি আপনি হতাশ? তিনি হাসলেন, বললেন, বিষয়গুলো এত সহজ বা হালকাভাবে নিলে তো চলবে না। দুঃসময় আরও গাঢ় হচ্ছে। এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে আর হচ্ছে না। তাকে বলি, লিখছেন তো, হাত-পা গুটিয়ে রাখলেন কোথায়? আপনার কাজ লিখে যাওয়া। লিখে যান। আজ না হয় আগামী দিন ফল পাবেন। আপনার লেখা তো অপুষ্পক নয়। ফুল ফুটবেই। সেই ঘ্রাণ নাগরিকদের নাসিকায় পৌঁছবেই। তার গলায় উষ্মা, না রে ভাই। বললাম তো কিবোর্ড আর কলমের সঙ্গে এবার গলাও চড়াতে হবে। হেসে বলি, তাহলে টকশোতে নিয়মিত হচ্ছেন? তিনিও হেসে ফেলেন, মোটেও না। ওটা আরও অকার্যকর। জানতে চাই, তাহলে? তিনি বললেন, ময়দানে নামতে হবে। স্লোগান তুলতে হবে। বললাম, অনেকে তো নেমেছেন। নানা দলে আছেন। আপনি কোন দলে যাচ্ছেন? তার কণ্ঠে রাগ আরও চড়া হয়, ওদের জন্যই তো সর্বনাশ বেশি হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক কর্মীর চেয়ে এই দুঃসময়ের জন্য তারা বেশি দায়ী। রাষ্ট্রকে, নাগরিকদের তারা ভুল গল্প শুনিয়ে মজিয়ে রাখে। জানতে চাই, তাহলে আপনি ময়দানে নেমে কী করবেন? পাঠকপ্রিয় ওই লেখক বলেন, আন্দোলন করবো। বললাম, কার বিরুদ্ধে? তিনি বলেন, দেখুন আন্দোলন শুরু করতে হবে পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রকে অচল ও দুর্নীতিগ্রস্ত করতে দলান্ধ পেশাজীবীদের ভূমিকা বেশি। আপনার, আমার কেউ বন্দনা করলে, আমরা তো খুশি হবোই তাই না? যতই তেল ছাড়া রুটির কথা বলেন, তেলভেজা পরোটা কিন্তু মজা করেই খাই আমরা। সুতরাং তেলে মজেন সবাই। তাই পেশাজীবীদের আচরণ ও বচন যদি তেলমুক্ত করতে পারি, তাহলে সংকটের অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে। এই ধরুন শিক্ষকরাই যদি মুখ থেকে তেল শুষে নেন, দেখবেন তারা সাধারণ ছাত্রমনস্ক হয়ে উঠেছেন। উপাচার্যদের মতো বিশেষ সংগঠন, বা মন্ত্রীমুখী হয়ে থাকবেন না তারা।
জানতে চাই, নামবেন কবে? জানালেন তিনি, নামা তো দরকার এই মুহূর্তেই।আপাতত সমমনা মানুষ খুঁজছি। বললাম, সমমনা নাকি সহমত? লেখক জোর গলায় বললেন, সহমত ইয়াবার মতোই এক মাদক। ওই মাদকমুক্ত হলে তর্ক করার মানুষ লাগবে, দরকার প্রশ্ন করার মতো মানুষ। অমন মানুষ পেলে জানাবেন। পাঠক প্রিয় লেখক ভাবনায় ফেলে দিলেন। এই মহল্লায় প্রশ্ন করার মানুষ কোথায় পাই?
সেই মানুষ খুঁজতে শুরুর আগেই খবর এলো, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সঙ্গে শিক্ষক রাজনীতি। ফিরতি ফোন দিলাম পাঠকপ্রিয় সেই লেখককে। জানতে চাইলাম খবরটি তিনিও পেয়েছেন কিনা? তিনি জানালেন, এটা কোনও সমাধান নয়। বরং ষড়যন্ত্র। ছাত্ররা আদর্শিক রাজনীতি করবেন। তাদের লেজ না বানানোতেই সমস্যা। লেখক বললেন, ছাত্ররা রাজনীতি না করলে নেতা তৈরি হবে কী করে? এই যে দুঃসময়ে আছি, তা তো নেতাহীনতার কারণেই। তিনি জানান, এটা অ্যান্টিবায়োটিক হলো, সুচিকিৎসা হলো না।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি