দুপুরে দেখা আরেক দলের সঙ্গে। তাদের প্রশ্ন বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার রায়ের পরেও দণ্ডপ্রাপ্তদের যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের কেন দেশে আনা হচ্ছে না? বললাম, তারা যেসব দেশে আছে, সেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার রেওয়াজ নেই। তাই আইনগত জটিলতা আছে। ওরা বললো জটিলতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কূটনৈতিক তৎপরতা তো চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসগুলো এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে–এমন খবরতো পাই না। নিজেও ভেবে দেখলাম, ওরাতো ঠিকই বলেছে, তেমন আলোচনা তো শুনি না।
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপনের জন্য যখন তৈরি হচ্ছে দেশ, তখন তো শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের বকেয়া কাজটুকু সেরে ফেলা প্রয়োজন।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দণ্ডিত ফেরারি চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। এই তথ্য তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদেরও লজ্জিত করে।
সন্ধ্যায় পাড়ায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। ওদের আয়োজন চলছিল ভোরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যাওয়ার। তরুণদের একজন বললো, দেখুন আমরা কয়জন বুদ্ধিজীবীর কাজের কথা জানি? হাতেগোনা কয়েকজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর লেখা এবং তাদের পেশার কথা জানি। বাকিদের কাজ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। যারা শিক্ষক বা লেখক, সাংবাদিক ছিলেন, তাদের কয়জনের লেখা বা কাজ সাধারণের সামনে আনা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পাঠ্যপুস্তকে? অনেকের রচনা বা গ্রন্থ তো কবেই বাজার থেকে হারিয়ে গেছে, নতুন করে ছাপার উদ্যোগ নেই, সরকারি, বেসরকারি কোনও ব্যবস্থাপনাতেই। ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আটচল্লিশ বছরে তাদের কতজনকে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে জেনেছি? রাস্তা,পাঠাগার বা কোনও স্থাপনার নামকরণ করলেই, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়ে গেলো–তা বলা যাবে না। দেখলাম তরুণরা ঠিকই ভাবছে। ওরা ঠিক পথেই তো আছে। ওরা যেমন বলছে, একাত্তরে জীবন উৎসর্গ করা বুদ্ধিজীবীদের পরম্পরা উত্তরসূরিরা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে শুভবুদ্ধির পুনঃআত্মপ্রকাশ আর ঘটেনি।
ওদের আড্ডা থেকে ফিরতে ফিরতে দেখলাম দৈনিক সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক স্বীকার করেছেন, আবদুল কাদের মোল্লার নামের আগে শহীদ বিশেষণ ব্যবহার করাটা আইনসঙ্গত হয়নি। তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, ওই শব্দটি তারা আর লিখবেন না। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রভাত বেলায়।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি