কতটা উষ্ণতা ছড়ালো আ. লীগের সম্মেলন

তুষার আবদুল্লাহএই শৈত্য প্রবাহে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন কী উষ্ণতা উপহার দিতে পারলো? রকমারি পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার অঙ্ক কষে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের থাকছেন না। ধানমন্ডি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও গণমাধ্যমে গুজব উড়ে বেড়াচ্ছিল। নানা জনের নাম উড়ে বেড়াচ্ছিল তুলোর মতো। ঘোষণার পর দেখা গেলো কমিটির আশেপাশেও তাদের কেউ নেই। উড়ন্ত তুলো কুয়াশায় ভিজে এলিয়ে পড়েছে কোথাও। দলীয় সভাপতির পাশে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণার পর, নেতাকর্মী ও রাজনীতিমনস্ক নাগরিকদের ওপর শীত যেন আরও জেঁকে বসলো। কোনও চমক নেই।
তবে, এককাপ চা-তুল্য উষ্ণতা হলেও পাওয়া গেছে শাজাহান খানকে সভাপতিমণ্ডলীর তালিকায় দেখে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্ত্রীত্বে থাকা না থাকা, উভয় সময়েই নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাকে নিয়ে। দলের অন্দরেও তাকে নিয়ে অস্বস্তি ছিল বলে শোনা যাচ্ছিল। সেই শাজাহান খানকে সভাপতিমণ্ডলীতে দেখে চমকে গেছেন দলের ভেতরের বাইরের অনেকেই। খালি চোখে অনেকে ভাবতে পারেন জাহাঙ্গীর কবির নানক পদোন্নতি বা নেতৃত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু যারা সংগঠন মনষ্ক তারা বুঝতে পারছেন, আগামীতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে গেলো তার। তিনি এই পদের দাবিদার বা ওই পদ ঘিরে তার নাম উচ্চারিত হয়ে আসছিল প্রবলভাবে। পদোন্নতির কথা বলা হলে বলতে হবে ড. হাছান মাহমুদের কথা। তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। সঙ্গে এলেন বাহাউদ্দিন নাসিমও। মির্জা আজম ও এস এম কামালের কথাও বলতে হয়। দু’জনেই সাংগঠনিক সম্পাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। উঠে এলেন বিপ্লব বড়ুয়াও। তিনি পালন করবেন দফতরের দায়িত্ব। মেহের আফরোজ চুমকিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের। পাঁচজন নারী পেলেন সম্পাদকের দায়িত্ব। বলা যায় প্রথমবারের মতোই। চমকে চোখ ছানাবড়া না হলেও, নেতাকর্মীদের মধ্যে এই হিম হিম আবহাওয়ায় বেশ উষ্ণ আড্ডা জমে উঠেছে, একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।

আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ সাধারণ মানুষেরাও নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, এ পর্যন্ত ঘোষিত কমিটিতে উচ্চফলনশীল কারও নাম উঠে আসেনি। যে কয়টি পদ বাকি আছে, তাতেও এমন কোনও নাম উঠে আসার সম্ভাবনা দেখছেন না দলের কাউন্সিলররা। কারণ দলের শীর্ষ নেতা ২০০৮ সালের পর থেকে মূল দল, অঙ্গ-সংগঠন, সহযোগী সংগঠন এবং মন্ত্রিপরিষদে ঢুকে পড়া বা সুযোগ পাওয়াদের আমলনামা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে থাকাকালীন বিতর্কিত হয়েছে যতবার, বেশির ভাগের কারণ হয়ে উঠেছিল অনুপ্রবেশকারী অতি আওয়ামী লীগাররা। তাদের দাপটে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীরা ছিলেন কোণঠাসা। দল এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিব্রত হয়েছে সরকার। তাই এবারের কাউন্সিলে তাদের চৌহদ্দির মধ্যে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, তার ছুটির প্রয়োজন ছিল। বয়স বেড়েছে। দল ও রাষ্ট্র চালাতে কখনও ক্লান্তির ছায়া পড়া স্বাভাবিক। সাধারণ সম্পাদককেও জটিল অসুস্থতার ধকল সইয়ে দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় থাকতে হচ্ছে। কারণ তারা জানেন, মাঠের প্রতিপক্ষ বিএনপি সাংগঠনিকভাবে চরম দুর্বল সময়ের মধ্যে থাকলেও রাজনৈতিক ঘূর্ণির শঙ্কা থাকে সবসময়ই। তাই দলকে মজবুত রাখতে হয় প্রতিমুহূর্তে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত স্তম্ভ শক্ত রাখার মতো নেতৃত্ব এখনও তৈরি হয়নি। বা বলা যায় ভরসা রাখার মতো কোনও মুখ উঠে আসেনি। এই ঘাটতি সরকারি দলে থাকেই। নানা প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক একনিষ্ঠতা নষ্ট হয়। আদর্শচ্যুতি ঘটে। সাধারণ সম্পাদকতো বলেছেনই—কেউ কর্মী থাকতে চান না। সবাই নেতা হয়ে গেছেন। অতীতেও আওয়ামী লীগকে এই সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিএনপিও এই পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল ২০০১ মেয়াদে। সেই সঙ্গে ক্ষমতার প্রাপ্তি যোগে দলের নেতা-কর্মীরা দুর্নীতির সঙ্গে লেপ্টে যায়। তার দায় নিতে হয় দলকেই। তাই আগামী দিনগুলোতে বাইরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেয়ে দলকে শুদ্ধ করা বা রাখার চ্যালেঞ্জটাই নতুন কমিটির কাছে বড় হয়ে উঠবে। দলের সভাপতি সেই ভাবনা বিবেচনায় রেখেই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইলেন না হয়তো।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি