সারিয়াকান্দির ওই দোকানে থাকা জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মাঝে তরুণও ছিলেন অনেকে। বললাম, আপনারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাদের সঙ্গে বয়স্করাও যোগ দেন। তাদের কথা, তরুণদের পাশাপাশি তারাও মাঝে মধ্যে দেখেন। এখানেও ভারতীয়সহ বিদেশি গান, সিনেমা এবং ধারাবাহিক। অবাক হয়েছি সারিয়াকান্দির তরুণদের মধ্যে জাপানি ও কোরিয়ান সিরিজের জনপ্রিয়তা দেখে। তাদের কথা হলো, বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেল দেখে তারা হাঁপিয়ে উঠেছে। বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য নেই। স্বাস্থ্য, ধর্মীয়, রন্ধন প্রণালি, উপদেশ আর সস্তা যৌনতার সুড়সুড়ি ছাড়া নতুন কিছু নেই। রাজনৈতিক গালি পাল্টা গালিও এখন কানে নতুন স্বাদ দেয় না। তাই তারা টেলিভিশনের মতো ইউটিউব, ইন্টারনেটের বাংলাদেশের পসরা থেকেও মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন। পত্রিকার দুর্গতি তো আরও আগেই শুরু হয়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি থেকে যাত্রা করি নীলফামারীর ডালিয়া। মাঘের যেমন শীত ও কুয়াশা আশা করছিলাম, তা মোটেও নেই। ভোরের চায়ের জন্য তিস্তা ব্যারাজ পার হয়ে যাই লালমনিরহাট প্রান্তে। সেখানে দেখা হয়ে শৈশবের দুর্লভ বিস্কুটের সঙ্গে। চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খেতে খেতে গল্প করি স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে। তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ে হতাশ। বিশেষ করে ছেলে সন্তানরা সারা দিন মোবাইল-ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকে। গরু বিক্রি করে মোবাইল কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মোবাইলে আজেবাজে ভিডিও দেখেই নাকি গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য তারা গণমাধ্যমকে দায়ী করলেন। তাদের মতে, গণমাধ্যম দিকনির্দেশনামূলক কোন অনুষ্ঠান দেখায় না। আগেকার নাটক সিনেমা যেমন ছিল এখন সেটা বদলে গেছে। এখন যেদিন দেখা, সেদিনই প্রেম ভালোবাসা এবং সবকিছু। রাজি না হলে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া বা ধর্ষণ। তারা বলছেন, আগে প্রেম হতো ধীরে। এখন গণমাধ্যম প্রেম ভালোবাসা নিয়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
চা শেষ করে অটোরিকশা নিয়ে ফিরছিলাম জলঢাকার দিকে। সঙ্গী হলেন স্থানীয় এক ব্যাংক কর্মকর্তা। কুশল বিনিময়ের পরেই বললেন, আপনারা নাকি ভালো নেই। চোখের ইশারায় জানতে চাই, কী? তিনি বললেন, মিডিয়ার বেতন ভাতায় নাকি টান পড়ছে? ছাঁটাইর খবরও পাই বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে। বললাম, কোথাও কোথাও হয়তো এমন খবর আছে। তিনি বললেন, গণমাধ্যম পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে আটকায়ে গেছে বুঝলেন? বললাম, বুঝতে পারিনি। তিনি হেসে উত্তর দেন, পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন, ওয়েবপোর্টাল, ইউটিউব, সবখানে একই আলাপ, একই কথা। রান্নার নতুন তরকারি লাগবে ভাই। স্বাদ না বাড়ালে আপনাগো বিপদ বাড়বেই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি