এই আনন্দের মাঝেও চোখ ভিজে যায় জলে। যখন দেখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে শিশুদের জন্য নিম্নমানের ও নকল বই। আমাদের প্রকাশনা জগতে শিশুদের জন্য মানসম্মত বই তৈরির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একেবারে কম ছিল না। বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি ছাড়াও বইঘর, মুক্তধারা, সাহিত্য প্রকাশ, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, নওরোজ কিতাবিস্তান, আগামী, অনুপম শিশুদের জন্য বই তৈরি করেছে। এই বইগুলো লিখেছেন সেই সময়কার তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা। ওই লেখকদের কেউ কেউ শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা অব্যাহত রাখেননি। এসেছে নতুন প্রকাশক এবং লেখকও। এই নতুনদের বড় অংশটিই বইয়ের মান নষ্ট করেছে। দেশি-বিদেশি বই নকল করে ছাপছে। ইন্টারনেট থেকে বই নামিয়ে ছেপে দিচ্ছে। যাকে বলা যায় ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’। বইয়ের প্রকাশনা মানও নিম্নস্তরের। কয়েকটি জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রের নামে সস্তা বই প্রকাশের সুনামি চলছে। ছোটদের বর্ণমালা শেখান, ভূত ও কল্পবিজ্ঞান বইয়ের নামে যা প্রকাশ হচ্ছে, তাতে শিশুমনে বইয়ের প্রতি অরুচি তৈরি করছে। কয়েকটি পুরনো প্রকাশনা ঠিকই বজায় রেখেছে তাদের বইয়ের বিষয় ও মান। নতুনদের কেউ কেউ এসে অসম্ভব সুন্দর বই প্রকাশ করছে। কিন্তু নকল বইয়ের প্লাবনে শিশুরা সেই বইগুলো খুঁজে পাচ্ছে না।
অমর একুশের গ্রন্থমেলা এবার দর্শনার্থী বা পাঠক মাত্রই প্রশংসা কুড়িয়েছে। বেশ খোলামেলা। বসার জায়গা আছে। খাবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা। শিশু চত্বর গেলোবারের চেয়ে এবার আরও আকর্ষণীয় হয়েছে। দুই দিক দিয়ে শিশু চত্বরে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বৃত্তাকার নকশায়। কিন্তু এই সুন্দর আয়োজনের মাঝে অসুন্দর হয়ে আছে শিশুচত্বর ঘিরে থাকা অসুন্দর, নকল বইয়ের ভিড়। শিশু চত্বরে থাকা ৬/৭টি স্টলের বাইরে বাকি প্রকাশনীগুলো পাঠকের কাছে অপরিচিত। এমনকি প্রকাশকদের কাছেও। এদের দেখা মেলে কেবল একুশের বইমেলায়। এই প্রকাশনাগুলোর বিষয়ে সৃজনশীল ও রুচিবান প্রকাশকদের আপত্তি আছে। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক ভোট রাজনীতির কারণে তাদের আপত্তি জোরালো হয় না। তাই বাংলা একাডেমিও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোরদের বইয়ের রুচি তৈরি করতে হলে, বাংলা একাডেমিকে সুঅভিভাবকের দায়িত্বটি পালন করতেই হবে। তাহলে একুশের বইমেলায় আমাদের সুন্দরেরা এসে কোনও অসুন্দরের স্পর্শ পাবে না। আমরা সুন্দরের সঙ্গে বইমেলায় উড়ে বেড়াতে চাই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি