কমিশনের পক্ষ থেকে অজুহাত তোলা হয়েছে, তারা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ভোটের আয়োজন করেছেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকবেই। কিন্তু জনস্বার্থে বা জননিরাপত্তায় সেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না, এমন নয়। যখন শুধু দেশ নয় পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এই মুহূর্তে মান্য করতেই হবে, এমন নয়। কারণ প্রজাতন্ত্রের সকল আইন তো জনগণের জন্যই।
যারা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, তারা যে দায়িত্বশীল ভূমিকায় আছেন এমন বলা যাবে না। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রচারের কথা। প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জনসমাগমের বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখছেন তারা। ভাবছেন সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিলেই কভিড-১৯ দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই অসচেতন নেতারা আবার আমাদের সেবা দেবেন, নিরাপত্তা দেবেন। এই আচরণে ভোটাররা যে তাদের ওপর আশ্বস্ত হতে পারছেন না, এই বোধটুকু প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের ওপর অনুপস্থিত। যদিও এই লেখাটি যখন লিখছি ঠিক তখনই ঘোষণা এলো ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই দিন অনুষ্ঠেয় বগুড়া-১, যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের আরও কয়েকটি ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলো এখনও নানা জায়গায় বিভিন্ন ছুঁতোতে জনসমাগম বা ব্রিফিং করছে। এগুলো অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হচ্ছে। আজকালের প্রযুক্তির দুনিয়ায় ঘরে বসে প্রেস রিলিজ বা ভিডিও বার্তা দেওয়া সম্ভব। সুতরাং লোক ডেকে ব্রিফিং করে সরকারের প্রোপাগান্ডা কিংবা সরকারের দোষের ফিরিস্তি তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। আমাদের সাধারণ জনগণের সার্বিক যে সচেতনতার ঘাটতি। তারই প্রতিফলন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বিদ্যমান, যা থেকে হয়তো নিজেদের বাইরে রাখতে পারলো না নির্বাচন কমিশনও। ভুল সময়কে বেচারারা তাদের মেরুদণ্ড প্রদর্শনের সময় বলে বেছে নিলো। তবে তিন উপনির্বাচন করে যে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা, সেখান থেকে কিছুটা হলেও মুখ বাঁচালেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট স্থগিত করে। ভবিষ্যতে প্রচারণায়ও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। অর্থাৎ কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি আছে এমন কোনও প্রচারণা যেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা না করেন।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি