৮ মার্চ সরকারিভাবে দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলো যখন, তখন থেকেই আমরা জানি অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর নাম। বিশেষ করে মাদারীপুরের শিবচর, মানিকগঞ্জের শিবালয় এবং নারায়ণগঞ্জের কথা জানা ছিল। তখনই পুরো দেশ থেকে এই এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেতো। দিলে এখানকার মানুষগুলো অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো না। কিন্তু লোকে কী ভাবে, এর মধ্যদিয়ে আবার প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায় কিনা, এই ভাবনায় এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন করা হলো না। এখন দেখা যাচ্ছে ওই এলাকাগুলোর মানুষ যে এলাকাগুলোতে গিয়েছে সেখানেও কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
সময়মতো এলাকাগুলো লকডাউন না করে, ১১ এপ্রিল এসে স্বীকার করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী—ওই এলাকাগুলো করোনা বিস্তারের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে না করায় এখানে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই।
পশ্চিমের দেশগুলোতেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল প্রার্থনা কেন্দ্র। তাই শুরু থেকেই মসজিদে জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে না পড়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। গণমাধ্যমের দিক থেকেও বারবার বিষয়টি নজরে আনা হচ্ছিল। কিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে দেওয়া এই নির্দেশনা যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন সরকার বাধ্য হয় সরাসরি মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার নির্দেশনা দিতে। কিন্তু ততক্ষণে সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। মীরপুর, বাসাবো অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রূপ নেয়। গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে কী থাকবে না, এই সিদ্ধান্ত নিতেও সময়ক্ষেপণ হয়। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক এসে ঢাকায় জড়ো হয়। শ্রমিকদের স্রোত কতটা সংক্রমণ ঘটিয়ে গেলো, তার ফল পেতে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা ধীরগতিতে চলেছি। পরীক্ষা যত কম শনাক্তও ততো কম। এভাবে হেঁটে যেতে যেতে বসন্ত বাতাস শরীরে লাগিয়ে ভেবেছি—কোভিড-১৯ বিশ্বের প্রতাপশালী দেশে কাঁপন ধরাতে পারলেও, আমাদের পারেনি। কিন্তু ফাগুন পেরিয়ে চৈত্রে এসে দেখলাম সর্বনাশ। পরীক্ষা যত বাড়ছে, তত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা।
অপরিচিত এই সময়টাকে মোকাবিলা করতে যেভাবে সম্মিলিত লড়াইয়ের প্রয়োজন, সেই লড়াইয়ে আমরা নামতে পারিনি এখনও। এলাকাভিত্তিক ঝাঁপি নামানো, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার দিকে তাকিয়েই আমরা বুঝতে পারছি কত অসমন্বিতভাবে কাজ করছি আমরা। ১১ এপ্রিলে এসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন—পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। নিতে হবে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত। কিন্তু দশদিন আগেও অধিদফতরের কণ্ঠে ছিল ভিন্ন সুর। কিন্তু যখন আমরা ভাবছি কোভিড-১৯কে পরাজিত করবো দৌড়ে, ততক্ষণে কিন্তু কোভিড-১৯ অনেক দূরে চলে গেছে। জানি না এই সমন্বয়হীন শক্তি নিয়ে ‘ট্র্যাক অ্যাড ফিল্ডে উসাইন বোল্টের ভূমিকায় পৌঁছাতে পারবো কিনা।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি