এ ছাড়াও আরও অনেকে আছে বিচারের অপেক্ষায়, আর দুজনের ফাঁসি হয়েছিল আগেই। তবে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আরেক সাবেক মন্ত্রী ও মৌলবাদী দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হওয়াটা ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
তারা ছিল এমন দুজন, যাদের ভেতর বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না। তারা ১৯৭১ সালের পর কখনই বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেনি, এমনকি একটি স্বাধীন দেশের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও। তারা তাদের যে প্রভুদের হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তাদের দাস হয়েই ছিল।
আর তাই এখন সময় জাহানারা ইমামকে স্মরণ করার, যিনি ছিলেন একাত্তরেরর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা; তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সংঘটিত গণহত্যার বিচার চাওয়ার জন্য তিনিই আমাদের মতো অনেককে পথ দেখিয়েছিলেন। যে সময় মারা গিয়েছিল ৩০ লাখ নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালি এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছিল আড়াই লাখ নারী।
সাহসী এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা জাহানারা ইমাম তার প্রচারণার কাজে আমাকে ও আমার মা হাসনা হেনা কাদিরকে নিয়ে এসেছিলেন। তারা এখন আমাদের মাঝে নেই। তবে আমি জানি দুজনই তারা স্বর্গে আজকের এই বিজয় উদযাপন করছেন।
বাংলাদেশের অনেকেই তখন বিশ্বাস করেনি যে বিশ্বের নানা প্রান্তে শক্তিশালী সম্পর্ক থাকা ওই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হবে। যখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে দুজন গ্রেফতার হয় তখন তারা হেসেছিলেন এবং চৌধুরী তো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালকেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সবসময়ই বিচারক ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে এসেছিলেন।
মুজাহিদও তার মতো করে নিশ্চিন্তে ছিলেন যে দল জামায়াত ও তাদের জঙ্গি ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির এটা নিশ্চিত করবে যে তার ফাঁসি হবে না।
তবে যাবতীয় ধারণা ও অনুমান মিথ্যে প্রমাণিত হলো যখন তারা দুজন তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। তবে সেটাও তাদের বাঁচাতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি তাদের আবেদন নাকচ করে দিলে ২২ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়।
পাকিস্তানি আর্মির এই দুই কুখ্যাত দোসরকে বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল যে তাদেরকে দ্বিতীয়বারের মতো হারতে হয়েছে। প্রথমবার হেরেছিল যখন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, আর দ্বিতীয়বার হারলো যখন কিনা তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল।
২০১৫ সালে যখন এ জাতি তার বিজয় দিবস উদযাপন করছে, বাংলাদেশ তখন স্যালুট দিচ্ছে সেই নারীকে যিনি কিনা এই দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ৯৯.৯ শতাংশ বাঙালির দাবি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি কোনও দয়া না দেখিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক চাপ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রভু পাকিস্তানের কটূবাক্য উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাদেশকে করেছেন আরও গর্বিত।
তিনি আমাদের একটি অনবদ্য বিজয় দিবস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক। জয় বাংলা।
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
/এফএ/