X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণ: যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ

নাদীম কাদির
০৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৭আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৭

সত্তর দশকে যখন আমি সেন্ট যোসেফ হাইস্কুলে পড়তাম তখন আমার এক শিক্ষক ছিলেন প্রয়াত ব্রাদার রালফ বেয়ার্ড, সিএসসি। তিনি প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গেলে আমাকে চিঠি লিখতেন। কিছু দিন আগে ব্রাদার রালফ পরলোকগমন করেন। আজকের লেখাটি তার সৃষ্টির প্রতি উৎসর্গ করছি। ঈশ্বর যেন তাকে খুব শান্তিতে রাখেন।

ঢাকা শহর প্রায় প্রতিদিনই বায়ুদূষণে গর্বের সঙ্গে বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু আমি চিন্তা করে দেখলাম শুধু বায়ুদূষণই না, বরং বিভিন্ন ধরনের শব্দদূষণ আমাদের জীবনটাকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। যেমন ধরেন মোবাইল ফোনের রিং বাজে, স্কুলের মাঠে বার্ষিক খেলাধুলার প্রতিযোগিতা হচ্ছে, যা লাউডস্পিকারে দিয়ে মাইলের পর মাইল জোর করে শোনানো হচ্ছে, আরও আছে রাজনৈতিক প্রচারণায় অপ্রয়োজনীয় মাইকিং-দূষণ, যানবাহনের হর্ন-দূষণ এবং অফিসের নানা ধরনের যন্ত্রপাতি-দূষণ।

ব্রাদার রালফ ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে যান এবং আমাকে একটি মজার চিঠি লেখেন। বিষয়বস্তু ছিল- কী করে তার দেশে বিভিন্ন ধরনের দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথমত দোকানপাটে টেইলর মেশিনের টিংটিং শব্দ, নানা ধরনের টেলিফোনের শব্দ, এছাড়া রাস্তাঘাটে বিভিন্ন যানবাহনের হর্নে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এটাকে কি সিভিলাইজেশন বলে? যদি তাই হয় তাহলে এর নাম দেবো ‘শব্দদূষণ সিভিলাইজেশন’।

কথাগুলো মনে পড়লো যখন আমি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি ঢাকা শহরে। ডাক্তার আমাকে বলেছে খুব নিরিবিলি চুপচাপ থাকতে। এছাড়া টেলিভিশন দেখা, টেলিফোনে কথা বলা, পত্রিকা অথবা বই পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই বেছে নিলাম ডেমরায় আমার ছেলের বাসা। সবুজ গাছপালা দিয়ে ঢাকা একটি স্থান, যেখানে মোটামুটি দূষণমুক্ত বাতাস উপভোগ করা যায়। কিন্তু ওপরে যেসব দূষণের কথা বললাম, যেমন- শিক্ষাদূষণ, রাজনীতিদূষণ আমার কাঙ্ক্ষিত নিরিবিলি পরিবেশ হাইজ্যাক করে ফেলে। মনে পড়লো ব্রাদার রালফ-এর সেই কথা ‘শব্দদূষণ সিভিলাইজেশন’।

ভেবে দেখলাম, আমাদের সরকার ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ কোটি কোটি টাকা খরচ করে পরিবেশ সম্মেলন করে যাচ্ছে একটার পর একটা। তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে কত টাকা উন্নত দেশগুলো দেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। কিন্তু বাস্তবতা খুব কঠিন। সরকারি এবং বেসরকারি কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে এই পরিবেশ রক্ষার জন্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল চলছে যেখানে প্রচুর পরিমাণে বায়ু ও শব্দদূষণ হচ্ছে। কেউ কি থামাতে পারছে এই দূষণ?

তাই বলছিলাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক ধরনের দূষণের সঙ্গে রাজনৈতিক দূষণও বাংলাদেশের ঘাড়ে এসে চেপেছে।

ব্রাদার রালফ তার চিঠিতে লিখেছিলেন আমাকে ৭০ দশকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে পরিবেশ দূষণ করতে শুরু করেছে। আজকে বাংলাদেশ তার মুখোমুখি।

বলতে চাই আমি আমাদের বিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের সময় বিদেশ ভ্রমণ না করে একটু ঘরের দিকে তাকান। দেখেন, নদীদূষণ, সমুদ্রদূষণ এসব তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমার ঘুম হারাম করা শব্দদূষণ।

আমি মনে করি বড় বড় দূষণ ঠেকাতে যাওয়ার আগে সেই অর্থ দিয়ে নিজ ঘরের এসব দূষণ বন্ধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমি একটা প্রশ্ন রেখে শেষ করছি আর তা হলো, কেন জনগণকে অত্যাচার করা হয়? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া বা অন্যান্য অনুষ্ঠান কেন সবাইকে মাইকে প্রচার করে শোনাতে হবে? পিকনিকে যাবেন ভালো কথা, কিন্তু বস্তাপচা হিন্দি গান অথবা উদ্ভট প্রেমের গান কেন জোর করে সবাইকে শোনাতে হবে?

ছোট্ট একটা অনুরোধ, যারা আপনারা ক্ষমতাবান কর্মকর্তাগণ দেশ-বিদেশ ছুটে বেড়াচ্ছেন দূষণ ঠেকাতে, দয়া করে এসব শব্দদূষণ বন্ধ করে আমার মতো আরও অনেককে একটু শান্তিতে ঘুমাতে এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার সুযোগ করে দেবেন।

শেষকথা: আমার মনে হয় আমরা আমাদের অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করতে পারছি না। আসলে কোন দূষণ যে কে ঠেকাবে তা ঠিক করতে করতে যেন আমরা নিজেরাই দূষিত হয়ে পড়ছি। ঘরের ভেতর ছোট ছোট যেসব কাজ করা দরকার সেগুলো আগে করলে বড় কাজগুলো করা সহজ হবে।

লেখক:  জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ