ঢাকাসহ সারা দেশের সড়কে গাড়ির চাপ প্রায় স্বাভাবিক। ঈদের বাজার ঢাকাতে মহল্লাভিত্তিক যেমন জমে উঠেছে, তার চেয়েও কয়েক গুণিতক হারে বেড়েছে গ্রামেগঞ্জে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিকে তোয়াক্কা না করেই চলছে কেনাকাটা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা না মেনে চলছে ইবাদত। সড়কে ও হাটে বাজারে ভিড় করছে কারা? বিপন্ন বা নিম্নবিত্তদের ভিড় নেই। তারা আছেন ত্রাণ আর কাজের খোঁজে। ধারণা করা হচ্ছিল করোনাকাল কত দীর্ঘ হবে তা এখনও অনিশ্চিত জেনে মানুষ তাদের সঞ্চয় ধরে রাখবে। ঈদ বাজারে ভিড় করবে না। ধারণাকে উল্টে দিয়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত, এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্তের একটি অংশ। তারা ঈদকে ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব দিচ্ছে বেঁচে থাকা বা মৃত্যু ভয়কে পেছনে রেখে। বাবা-মা, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়ার যে গোয়ার্তুমি, সেখানে একরত্তি ভাবনা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না যে, তার এই কাছে যাওয়া বা ছুটে যাওয়া বাবা, মা, সন্তান এবং স্ত্রীর জীবন বিপন্ন করতে পারে। এই কাছে যাওয়া প্রিয়জনকে হারানোর উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
মানুষ কেন বেপরোয়া হয়ে উঠলো? সরকারি বা স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা কেন মানতে চাইছে না। এর প্রধানতম কারণ হলো জোয়ার ভাটা সিদ্ধান্ত। কোভিড-১৯কে ঘিরে নেওয়া নির্দেশনাগুলোর কঠোরতা মুহূর্তের মধ্যেই চুপসে গেছে। ‘সীমিত’ শব্দটি গোলমাল করেছে বেশি। ‘সীমিত’ আকারে বাজার হাট, মসজিদ খুলে দেওয়া হলো, কিন্তু সেখানে পরিমিতিবোধ রক্ষা করা গেলো না। রেস্টুরেন্ট খোলা হলো প্রথমে, তারপর অন্যান্য বিপণি বিতান। দুপুর দুইটা থেকে সরতে সরতে রাত আটটায় গিয়ে ঠেকলো। আটটার মধ্যে সব বন্ধ। আটটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত বাইরে থাকা যাবে না। যেন এ সময়টুকু কোভিড-১৯-এরও বিশ্রামের সময়। কাউকে এ সময়ে সংক্রমিত করবে না। সীমিত আকারে উন্মুক্ত করার ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বা হয়েছে বলেই হয়তো ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছে। তাই এখন পথে নেমে পড়া যায়। তাই নেমেছেন তারা। সর্বশেষ যখন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঈদে বাড়ি যাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হলো, তখন তো সোনায় সোহাগা। এবারের বার্তা তো আরও ‘ফকফকা’। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ঈদে যে যেখানে আছেন থাকুন, আবার অন্যদিকে দাওয়াত কার্ড এলো নিজ গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার। তাহলে করোনা আসলে সীমিত কিছু মানুষকেই ছোবল দেবে। সকলের দিকে তার নিশানা নেই। অতএব ‘চল বাড়ি যাই’। ঈদের উপহার হিসেবে আরেক দফা কোভিড-১৯ বিতরণ শুরু হয়ে গেলো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের স্বাস্থ্য দফতরও সতর্ক করে বলছে- এই যাত্রা মরণযাত্রার শামিল। কিন্তু তাদের কথা কানে তোলার সময় কই। ঘাটে ঘাটে, সড়কে সড়কে এখন ঘরমুখো কোভিড-১৯-এর ভিড়। এই যাত্রা নিরাপদ হোক সেই প্রত্যাশা করতেও তো বুকে বল পাই না। তারপরও স্বভাবসুলভ বলতে হয়- ‘যাত্রা সংক্রমণমুক্ত হোক’।
লেখক: বার্তাপ্রধান, সময় টিভি