বোঝার চেষ্টা করছি দেশ চালাচ্ছে কে

আবদুল মান্নান‘আমাকে ছাড়া সকলকে কেনা যায়।’ এটি প্রধানমন্ত্রীর কথা। বঙ্গবন্ধু কন্যা সাহস করে অনেক কথা বলেন। এক সময় মানুষ বলতো তিনি একটু বেশি কথা বলেন, তবে যা বলেন সত্য বলেন। এখন বলেন কম, তবে সত্য কথাটা বলতে দ্বিধা করেন না। তিনি দেশের টানা তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। মোট চারবার। এই ভাগ্য অন্য কোনও দেশে ঘটতে তেমন একটা দেখা যায় না। চীন, রাশিয়া কিছুটা ব্যতিক্রম। সেখানে একদলীয় শাসন। দীর্ঘদিন ধরে তার রাজনীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। কেন জানি মনে হচ্ছে তার কৃপাধন্য ও অনেক কাছের মানুষ নিজের আখের গুছিয়ে নিজেদের সুখশান্তি ও সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দেশে যে এতবড় করোনা সংশ্লিষ্ট সংকট চলছে তার জন্য তার কোনও সংকট মোকাবিলা টিম (Crisis Management Team) আছে বলে মনে হয় না, যার ফলে দেশে অনেক অপরিণামদর্শী ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এবং দায়ভার গিয়ে পড়ছে সরকার তথা সরকার প্রধানের ওপর। সেই কারণেই শেখ হাসিনাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’। তার চারপাশে মানুষ আছে বেশ ক’জন, তবে তাদের অনেকেই শুধু মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মতো হয় যোগ্যতা নেই অথবা থাকলেও তা তাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

রমজান মাসের দু’একটি ঘটনা। ধর্মে বলে রমজান মাসে আল্লাহ শয়তানকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন যাতে মানুষ সৎপথে চলে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এই পবিত্র মাসে মর্ত্যে মানুষরূপী অন্য ধরনের শয়তানের আবির্ভাব হয়, যারা কোনও জাতপাত ধর্মের বাছ বিচার না করে হরদম সকলকে খারাপ কাজের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে এবং প্রায়শ সফল হয়। ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা বন্ধ ছিল পাঁচ দিন। আমার স্কুল জীবন হতে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। আমাদের দেশে অনেক প্রাইভেট নিউজ চ্যানেল আছে। দু’একটি বাদ দিলে সব চ্যানেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর পরিবেশন হতে বিরত থাকে নানা অজুহাতে। খবরের জন্য পত্রিকা আমার একমাত্র ভরসা। করোনাজনিত কারণে গত মার্চের শেষ সপ্তাহে আমার এলাকায় হকাররা পত্রিকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, ব্যতিক্রম ছিল সম্ভবত আমার হকার। একদিন হকার তো বলেই দিলো আমি পত্রিকা না নিলে সে নাকি বাড়ি চলে যেতো। সে আমাকে ডজনখানেক পত্রিকা দেয়, যার অধিকাংশই সৌজন্য সংখ্যা। ঈদ শেষে শুক্রবার পত্রিকা দিতে এসে হকার জানালো বাড়ি না গিয়ে সে ভালোই করেছে, কারণ তাদের বাড়িতে ছয়জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।

আমার কন্যা অ্যালকোহল দিয়ে ধুয়ে মুছে যখন একটা পত্রিকা হাতে দিলো, তখন প্রথম পৃষ্ঠার মূল খবরটা দেখে কিছুটা স্তম্ভিত হলেও অবাক হইনি। খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘২৫ মে ব্যক্তিগত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশ ছেড়েছেন সিকদার গ্রুপের দুই ভাই এমডি রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার। নিজস্ব এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ছাড়ার পূর্বে ‘মুমূর্ষু রোগী হলেন সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু সিকদার’। এই দুই গুণধর সিকদার ব্রাদার্স এক্সিম ব্যাংক থেকে লোন নেওয়াকে ইস্যু করে এক্সিম ব্যাংকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এই ঘটনায় এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গুলশান থানায় মামলাও করেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল ৭ মে আর মামলা হয়েছিল অনেক পরে। রন হক সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালক। তাদের পরিচালনা বোর্ড গঠনে ব্যাংকিং আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ আছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি বাংলাদেশের অন্য অনেক ব্যাংকের মতোই বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গ্রাহকদের অনেক টাকা এখন ভিন দেশে চালান হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এক সময় দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করেছিল। এখন তা মহামারির অজুহাতে বন্ধ হয়ে গেছে। এত দেরিতে কেন এক্সিম ব্যাংক মামলা করলো সেটাও বেশ রহস্যজনক। এর ক’দিন আগে এক্সিম ব্যাংকের একজন বড় মাপের কর্মকর্তা ও ব্যাংক মালিকদের নেতার দুই হাজার কোটি টাকার আরেক কেলেঙ্কারির খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। মামলাও হয়েছে। তবে এসব মামলার কিছু হবে তা কেউ বিশ্বাস করে না, কারণ এখন পর্যন্ত এসব দুর্বৃত্তের কোনও কিছু হয়েছে, তার নজির নেই। বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের নজির তো সামনেই আছে। কথায় বলে না, টাকা থাকলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়। শুধু সিকদার ব্রাদার্স নয় বৃহস্পতিবার, ২৮ মে চার্টার্ড বিমানে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বেগম জিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী। লন্ডনে মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খান সপরিবারে বসবাস করেন। মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা ছিল এবং দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। পাঠকদের মনে থাকতে পারে এর আগে যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ একই কায়দায় বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। টাকা সব সময় কথা বলে, তার কোনও রং নেই।

দেশ ছাড়ার পূর্বে ইমিগ্রেশনের সকল কর্মসূচি নির্বিঘ্নে সেরেছেন সিকদার ভ্রাতা ও মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী। সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি ছাড়া তাদের পক্ষে বিমান বন্দর ত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সিকদার ব্রাদার্সের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের জন্য গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস (ডেইলি স্টার ২৯ মে) । রীতিমতো থ্রিলার আর কী। টাকা থাকলে কী না হয়।

কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে একজন অফিস সহকারী মাত্র কুড়ি হাজার টাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল একজন স্বঘোষিত ছাত্র নেতার কাছে পাচার করে দিয়েছিল, যার ফলে খোদ প্রধানমন্ত্রীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির সহায়তা ছাড়া এমন একটি দুঃসাহসী কাজ করা একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারী বা ওই তথাকথিত ছাত্র নেতার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বোর্ড সদস্যের বিরুদ্ধে এমন জালিয়াতির সংবাদ অসংখ্য আছে। উপ-উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে এমন একটা কেলেঙ্কারি ঘটতে যাচ্ছিল কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দৃঢ়তার কারণে তা ঘটতে পারেনি। মঞ্জুরি কমিশনে আমার দায়িত্ব পালনের সময় একজন বোর্ড সদস্য তো প্রকাশ্যে বলেই ফেলেছিলেন টাকা দিলে সব কেনা যায়। শুধু চেয়ারম্যানকে কেনা গেলো না।

প্রধানমন্ত্রী হয়তো জানেন না সরকারের কত পদ পদবি নিলামে বেচা বিক্রি হয়। প্রতিষ্ঠান দখল হওয়ার নজিরও আছে। দখলকারী বেশ ক্ষমতাশালী। এর ফলে যারা প্রধানমন্ত্রীর প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী বা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী তারা প্রধানমন্ত্রী হতে অনেক দূরে সরে গেছেন, অভিমান করেছেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেঈমানি করেন না। এটা প্রধানমন্ত্রীর নিজের কথা।

দেশে করোনা নামের অতিমহামারি (pandemic) হানা দিলো মার্চের প্রথম সপ্তাহে। সকলে জানেন এই ভয়ঙ্কর অতিমহামারির উৎপত্তিস্থল চীনের উহান প্রদেশে। এখন ২১২ দেশে এর রমরমা রাজত্ব চলছে। রাজা উজির কোনও বাচ বিচার নেই। ধরছে অনেককে মারছে হাজারে হাজারে। এই পর্যন্ত মারা গেছে সারা দুনিয়ায় তিন লাখ সাতষট্টি হাজার সাতশ’ জনের ওপর (৩০ মে পর্যন্ত)। বাংলাদেশে নিজ থেকে এই অতিমহামারি হয়তো এক সময় আসতো, কিন্তু আমরাই আগ বাড়িয়ে ইতালি হতে বিমান ভর্তি করে শ’তিনেক বঙ্গ সন্তানকে করোনাসহ (অনেককে) নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলাম কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই। তারা নাকি সেখানে বেশ অর্থকষ্টে ছিলেন। কিন্তু বিমানে ফিরতি টিকেটসহ একেকজন কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা দিয়ে সেই দেশে দু’মাস থাকা যেতো। ইতালির মতো শীত প্রধান দেশে যেসব বাঙালি থাকেন, তারা এদেশে চলে আসেন সাধারণত ইতালির শীতের সময়, কারণ তখন সেখানে সবকিছুর ব্যয় বেড়ে যায়, বিশেষ করে বিদ্যুতের বিল। রুম গরম করার জন্য বিদ্যুতের বিল বেশ বড় আকারের হয়। সেই বিলের টাকা দিয়ে অনেকে দেশে আসেন। এবার মার্চের প্রথম দিকে যখন তারা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন ইতালি করোনাতে সম্পূর্ণ রূপে পর্যুদস্ত। তখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছে অথবা মরে পথে ঘাটে ও বৃদ্ধাশ্রমে পচেছে। যেসব বাঙলি ইতালি বা অন্য দেশে থাকেন তারা বেশির ভাগ ছোটখাট চাকরি করেন যেমন রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, মুদির দোকান, ডেলিভারি বয়, ট্যাক্সি চালক ইত্যাদি। আর যাদের চাকরি থাকে না তারা অনেকেই পর্যটকদের কাছে বাদাম বিক্রি করেন কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য। কেউ কেউ ফুলও বিক্রি করেন, আর কেউ বা ট্যুরিস্ট গাইড। কোনও কাজকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। তারা দেশে টাকা পাঠান। মার্চের প্রথম দিকে তারা যখন দেশে এলেন সরকার অনেকটা চটজলদি একটা কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিলো বিমান বন্দরের নিকটস্থ হাজি ক্যাম্পে। ইতালি ফেরত যাত্রীরা মনে করেছিলেন সেখানে ফাইভস্টার হোটেলের সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক। অস্বীকার করার উপায় নেই যে পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সেখানে অব্যবস্থাপনা ছিল। যাত্রীদের বলা হলো এটি সাময়িক ব্যবস্থা। পরীক্ষা করে যাদের কোনও সমস্যা নেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। সমস্যা থাকলে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তা শোনার পর এক শ্রেণির যাত্রীর সেখানে সেই কী হুংকার! এক তরুণ ভুল ইংরেজিতে তো বাংলাদেশেরই চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছিল। বারবার বলছিল সে নাকি ইতালির পাসপোর্টধারী। তাকে তখনই তার দেশে ফেরত পাঠানো উচিত ছিল। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। পরে জানা গেছে ইতালি ফেরত একজনের কাছ হতে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। আজ পর্যন্ত চুয়াল্লিশ হাজারের ওপর আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৬১০ জনের (৩০ মে পর্যন্ত)। ওই ইতালির নাগরিক নাকি দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সরকারি দলের এক নেতার হেফাজতে আছে।

দিন যতই যেতে থাকে পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকে। ২৬ মার্চ সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো, লক ডাউন বা কারফিউ না যা অন্য দেশে করেছে। ছুটি মানে অফিস আদালত, স্কুল কলেজ বন্ধ। দোকানপাট খোলা থাকতে পারবে। মানুষ বিষয়টাকে সেভাবেই নিয়েছে। বেশ কিছুদিন অফিস আর স্কুল কলেজ যাওয়া ছাড়া সকলের কাজ কারার আগের মতোই চললো। ছুটি পেয়ে কেউ কেউ কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান বেড়াতে গেলো পরিবার নিয়ে। কেউ গেলো গ্রামের বাড়ি। বিয়ের পিঁড়িতে বসলো অনেকে। খুনখারাবিও বন্ধ থাকলো না। আগে খাওয়া দাওয়ার বাড়িতে ডেলিভারি দেওয়ার একটি ভালো সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। এর সঙ্গে যোগ হলো মাদক। মদের হোম ডেলিভারি আর বেচা বিক্রির ধুমের পারদ বিশ্বের সকল দেশকে ছাড়িয়ে গেলো ভারত তথা পশ্চিম বঙ্গ। তারপর সরকার ঘোষণা করলো ছুটি বাড়বে, কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হতে বিরত থাকলো। এর সঙ্গে যোগ হলো কিছু অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত কাট মোল্লাদের সাধারণ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রতিযোগিতা। তারা তাদের কিছু অন্ধ ভক্তকে জানিয়ে দিলো করোনা মুসলমানদের জন্য আসেনি, এসেছে ইহুদি খ্রিস্টানদের জন্য। করোনা একটি অতি সংক্রামক রোগ, একজনের কারণে ৪০৬ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারেন বলে গবেষকরা বলছেন। বলা হলো একজন হতে আরেক জন কমপক্ষে তিন ফিট দূরত্ব রাখবেন। কে শোনে কার কথা। এই রকম কয়েকজন অর্ধশিক্ষ স্বঘোষিত ইসলামি চিন্তাবিদ এখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আর কয়েকজন মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কয়েকজন দেশ ছেড়েছেন। কয়েকজন আন্ডারগ্রাউন্ডে।

সরকার একবার বলে ঈদের সময় যে যেখানে আছেন সেখানে থাকবেন। কেউ বাড়ি যাবেন না। নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেশ জোর গলায় জানালেন যদি ঈদের ছুটিতে নিজ আবাসস্থল ছাড়েন তাহলে ঈদ করতে হবে রাস্তায়। ক’দিন পর সরকার ঘোষণা করলো ঈদে বাড়ি যান (সঙ্গে করোনাভাইরাসও নিয়ে যান)। ছুটলো মানুষ বাড়ির দিকে হাজারে হাজারে। সরকার ঘোষণা করলো ৩১ তারিখ হতে অফিস আদালত খোলা। কিন্তু যারা দেশের বাড়িতে গিয়ে করোনার চাষ করে এসেছেন তারা কি এসেই অফিসে ঢুকে যাবেন? তাদের কি ১৪ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না? এসবের কোনও ব্যাখ্যা নেই। সরকার আরও জানালো গণপরিবহনে চড়া বা অফিস করা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। প্রশ্ন, তা মনিটর করবে কে? অনেকে বললেন এটা একধরনের মস্করা।

যখন দেশের সকল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক ড. এবিএম আবদুল্লাহ সহ অনেকে বললেন এখন বাংলাদেশে করোনা বিস্তার ও মৃত্যুর হার তুঙ্গে, তখন দেশে অন্তত দশ দিনের জন্য কারফিউ জারি করা উচিত, কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টা। ভারতে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমি সব সময় খুব বেশি ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করি না। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে কিছু একটা হচ্ছে। শেখ হাসিনার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রশ্ন এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিচ্ছেন? আর যদি প্রধানমন্ত্রী নেন তাহলে তাঁকে কি সকল প্রকৃত তথ্য দেওয়া হচ্ছে? বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে ৪৩ জন দলীয় কর্মী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন দুর্নীতি আর অযোগ্যতার কারণে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কি সম্ভব?

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক