X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনার সামনে অমরত্বের হাতছানি

আবদুল মান্নান
২২ জুন ২০২৪, ২৩:৫৭আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ১৭:২৫

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাভাবিক নিয়মে এই মেয়াদ শেষ করার পর তিনি হবেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এবার নিয়ে মোট পাঁচবার। এমন একটি রেকর্ড যেসব দেশে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা আছে তেমন উদাহরণ পাওয়া যাবে না। শেখ হাসিনা পাঁচবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণে বাংলাদেশ এখন অন্য উচ্চতায়। এই সময়ে তিনি বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন উন্নয়নের একটি রোল মডেল হিসেবে। জন্মলগ্নে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ বাঁচলে বিশ্বের যেকোনও দেশ বাঁচবে’। তারা আরও বলেছিলেন– বাংলাদেশ হতে পারে ‘উন্নয়নের একটি টেস্ট কেস’। এখন সময়  হয়েছে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের যে অর্জন আর যে ত্যাগ তার মূল্যায়ন করে আগামী দিনের বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করার। ২৩ জুন দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যার সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। পিতার হাতে জন্ম যে দলটির তার ৭৫তম জন্মজয়ন্তী কন্যার হাতে হবে তাও নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, কন্যা ক্ষমতায় থাকতে পিতার নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া বাংলা নামের দেশটি স্বাধীনতার পঁচিশ ও পঞ্চাশ বছরও পালন করেছে। আরও পালিত হয়েছে পিতার জন্মশতবার্ষিকী। এমন ভাগ্যও বিরল। শেখ হাসিনার বয়স ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স কম বেশি কাছাকাছি। শেখ হাসিনার জন্মের আনুমানিক দুই বছরেরও কম সময়ের মাথায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ) জন্ম। যদি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতেন এই বছর তাঁর বয়স হতো ১০৪। জাতির দুর্ভাগ্য, একটি দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে।

এখন আমরা পিছনে ফিরে তাকাতে চাই শেখ হাসিনা, যে এই রাষ্ট্রটি পরিচালনা করছেন, তাকে তিনি কোথায় নিয়ে যেতে পারতেন আর কেনই বা তিনি সেই প্রত্যাশিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে বারবার হোঁচট খেয়েছেন বা খাচ্ছেন, তার মূল্যায়ন করা।  যদিও এই মেয়াদের প্রায় সাড়ে চার বছর এখনও বাকি আছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনা অমরত্ব লাভ করার পথে বাধাগুলো কোথায়? সেই বাধাগুলো কি অতিক্রম করা খুব কঠিন? তেমন প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে। কারণ সবার ভাগ্যে অমরত্ব লাভ করার সুযোগ জোটে না। শেখ হাসিনার সামনে সে অমরত্ব লাভ করার একটা সম্ভাবনার দ্বার খুলে গিয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে কোথায় কোথায় হাত দেওয়াটা জরুরি তাও চিন্তা করতে হবে। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সামনে বাইরের বা ভিতরে রাজনৈতিক যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে তা তাঁর জন্য বড় কোনও প্রতিবন্ধকতার কারণ হবে বলে মনে হয় না। পশ্চিমা কোনও কোনও শক্তি তাঁর পথ আগলে ধরার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহস, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল প্রয়োগের দক্ষতা ও দূরদর্শিতার কারণে তারা তাঁকে তেমন একটা কাবু করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যার পথ আগলে আছে দেশের অপরিণামদর্শী মারাত্মক দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রশাসনযন্ত্র আর দলের ভেতরে থাকা নানা রঙের অনুপ্রবেশকারী, যাদের একমাত্র চিন্তা সরকার বা দলের বিভিন্ন পদ-পদবি দখল করে কীভাবে শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে নিজের আখেরটা গুছিয়ে নেওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে জাতীয় চার নেতার মতো দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতা বা ছাত্রলীগের মতো আদর্শবান সংগঠন পেয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তারা দলের আদর্শকে পুঁজি করে রাজনীতি করে জনগণের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের নেতারা যখন কারাগারে তখন দলের কর্মসূচিকে সামনে এগিয়ে নিতে দায়িত্ব কাঁধে নিতেন দলের দ্বিতীয় সারির নেতাকর্মী আর ছাত্রলীগ। আটষট্টি বা ঊনসত্তরের গণআন্দোলন অথবা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ তার বড় প্রমাণ। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি চিন্তা করাটাও এক ধরনের স্বপ্নবিলাস। একাত্তর পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু সব দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাংলা নামে দেশটিকে নিজ পায়ে দাঁড় করানোর পেছনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি ছিল তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা। তারা দেশের স্বার্থকে নিজের বা গোষ্ঠীর স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা পিতার মতো ভাগ্যবান তা মনে করার কোনও কারণ নেই। এটাও সত্য বঙ্গবন্ধুর পথের সঙ্গী হয়েছেন তাদের মধ্যে খন্দকার মোশতাকের মতো ব্যক্তিরাও ছিলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাও সত্য, তাঁর কন্যার আশপাশে এখন অনেক খন্দকার মোশাতাক খুব দাপটের সঙ্গে অবস্থান করছেন বলে জনমনে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে প্রায় প্রত্যেকটা বক্তৃতায় দুর্নীতি যে এক মহামারি রূপ ধারণ করেছে তা বলতে দ্বিধা করতেন না। বলতেন ‘মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। পাকিস্তান সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে কিন্তু সব চোরগুলোকে রেখে গেছে’। বঙ্গবন্ধুর ‘চাটার দল’ শব্দ দুটি বহুল প্রচারিত। রিলিফের গম চিনি আর কম্বল চুরি নিয়ে তিনি সভা সমাবেশে সোচ্চার ছিলেন ও ক্ষোভ ঝাড়তেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে বর্তমানে কোনও চোর নেই, এখন দেশে ডাকাতে কিলবিল করছে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের অর্থনীতির পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ নয় বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে চারশত ষাট বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পঞ্চাশ বছর আগে লুট করার মতো কোনও ব্যাংক ছিল না। আর এখন দেশে বাঙালির ব্যাংক আছে ৬১টি আর বিদেশি ব্যাংক আছে ৯টি। ব্যাংক ছাড়াও আছে আরও বেশক’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের যে অর্থনীতির আকার তাতে এক বিশাল সংখ্যার ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু এই ব্যাংকগুলো যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের অনেকেরই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার কোনও যোগ্যতাই ছিল না। তারা কীসের ভিত্তিতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন পেয়েছিলেন সেই প্রশ্ন করা যেতেই পারে। তাদের হাত ধরেই তো দেশে চালু হয়েছে এক ভয়াবহ লুটপাটের সংস্কৃতি।

ঢাকার রাস্তায় চলাচলের সময় এমন কিছু ব্যাংকের দেখা মিলবে, তার কেন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তেমন প্রশ্ন করলে তা অবান্তর হবে না। এমন একজন ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমার আগের কর্মক্ষেত্রে এসে আবদার করেছিলেন আমার প্রতিষ্ঠানের কিছু টাকা যেন তার ব্যাংকে জমা রাখি। আমি অপারগতা জানালে তিনি বায়না ধরেন, পাঁচ হাজার টাকা জমা রাখলেও তিনি অন্যদের বলতে পারবেন সরকারের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তার ব্যাংকের একটি মূল্যবান আমানতকারী। তাকে আমি বিনীতভাবে বলি, সরকারি অর্থ নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে পারি না। তিনি আমার ওপর কিছুটা বিরক্ত হয়ে চলে যান। পেশায় ছিলেন একজন জাঁদরেল আমলা, চাকরি জীবন শেষে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে একজন অত্যন্ত ক্ষমতাধর মন্ত্রী হিসেবে ক্যাবিনেটে জায়গা করে নেন। বাংলাদেশের প্রশাসনিক আমলাদের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের সরকারি কর্মজীবন শেষে তাদের সামনে অনেক নতুন নতুন দরজা খুলে যায়। কেউ হন সংসদ সদস্য, কারও ভাগ্যে জোটে টেকনোক্রেট মন্ত্রীর পদ, কেউ বিদেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে উড়াল দেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কেউ কেউ হয়ে যেতে পারেন সরকারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপদেষ্টা। দেশের বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারম্যানের পদ তো তাদের জন্য সংরক্ষিত আছেই।

বিভিন্ন ব্যাংক বা রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে জনগণের টাকা আমানত হিসেবে নেওয়া অর্থকে অনেকের নিজের মনে করে পাচার করেন বিদেশে। এই অর্থে বিদেশে  গড়ে ওঠে বেগম পাড়া আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জন্ম হয় বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাই বাচ্চু আর পিপলস লিজিংয়ের পিকে হালদার। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার জন্য তারা একশত একটা ফন্দি-ফিকির খুঁজেন। এসব ব্যক্তির কাছে সবসময় ব্যবসা খারাপ থাকে। সরকারকে যে তাদের আয়ের ওপর কর দিতে হবে তা তারা মানতে চান না। গত ৬ জুন কলকাতার বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষ চিকিৎসার নাম করে বিরাট অঙ্কের অর্থ ভারতে পাচার করে নিয়ে আসে। বলা বাহুল্য, এই কাজটি কোনও একজন সাধারণ চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য চাই কলকাতায় নিহত হওয়া সংসদ সদস্য আনওয়ারুল আজিমের মতো ‘কৃতী পুরুষ’।

 

শেখ হাসিনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জন্ম হয় সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের মতো ফ্রাংকেস্টাইন। যতই দিন যাচ্ছে বেনজীরের নজিরবিহীন কীর্তি কলাপের ফিরিস্তি বের হচ্ছে আর তা দেখে অনেকেই মন্তব্য করছেন, তিনি হয়তো নিজেকে ব্রুনাইয়ের সুলতান ভাবতেন। অনেকেই এখানে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমদের কথা বলতে চাইবেন। আজিজের প্রসঙ্গটা ভিন্ন, কারণ কী মতলবে যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে তা পরিষ্কার নয়, যদিও তারা প্রমাণ ছাড়া কিছু কারণ দেখিয়েছে। এই যুক্তরাষ্ট্রই জেনারেল আজিজকে সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের দেশে সফরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাকে তারা কী প্রস্তাব দিয়েছিল তা জনগণ জানে না। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজস্ব স্বার্থ ছাড়া অন্য কোনও স্বার্থ কখনও মুখ্য নয়।

 

ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিষয় বেশ জোরালোভাবে প্রচারিত হচ্ছে আর তা হচ্ছে ‘অমুক ব্যক্তি প্রস্তুত হচ্ছে নতুন বেনজীর হওয়ার জন্য’। শেখ হাসিনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রশ্ন, এসব বিষয় সম্পর্কে তাঁকে জানানোর কি কোনও প্রয়োজন কেউ মনে করেন না।

এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সর্বগ্রাসী প্রশাসনিক দুর্নীতিকে নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমূলে উৎপাটন করা। সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি ঘটনার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। গত ৯ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে সংসদ সদস্য ড. আবদুল মোমেনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম হচ্ছে ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অফিসাররা বলেন- লন্ডনে ছিলেন লন্ডনে চলে যান’। তিনি তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন একশ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে কীভাবে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে আসলে নিরুৎসাহিত করা হয় আর কীভাবে তাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। অথচ শেখ হাসিনা যখনই বিদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যান, তিনি প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের নিজে দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে আসেন তাদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী আচরণ করেন সেই খবর হয়তো তাঁর কাছে পৌঁছায় না।

দ্বিতীয় সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত। কানাডা প্রবাসী রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আবুল আহসান (আসল নাম নয়) দেশে এসেছিলেন পারিবারিক জায়গা জমিনের কাগজপত্র ঠিক করতে। ফিরে গিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘দিয়ে এলাম ঘুষ’ শিরোনামে একটি ছোট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তিনি তার কাজটি করার জন্য কত জায়গায় কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন তার একটি নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন। ৯ জুন আর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দুই বছরে ২৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । ঘটনাস্থল কুমিল্লা। এটি এখন ওপেন সিক্রেট যে সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা আছে তার প্রত্যেকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুর্নীতি এখন দুধভাত। এসব মন্ত্রণালয়ে মধ্যে জনপ্রশাসন, ভূমি, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ উল্লেখযোগ্য। দেশের একটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তার তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। কারণ তার খুঁটির জোর বেশ শক্ত। এরইমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ওই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কয়েকটি কলেজের ১৭ জন ছাত্র পরীক্ষা না দেওয়া সত্ত্বেও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়ে পাস করেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়াটা হবে ধৃষ্টতা। তারপরও বলতে হয়, বর্তমানে তিনি যে স্থানে আছেন এই স্থান থেকে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করতে পারেন। প্রয়োজন শুধু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন করা। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আর এসব করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে যথা স্থানে যথা মানুষকে পদায়ন করা। কাজটি তাঁর পিতা করার চেষ্টা করেছিলেন। অনেকাংশে সফলও হয়েছিলেন। তাঁর আমলে যে ক’টি কমিশন গঠিত হয়েছিল তার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে তিনি এই কাজটি কত সফলভাবে করার চেষ্টা করেছিলেন। আমলাতন্ত্রের মতো সর্বগ্রাসী দানবকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তেমন একটা সফল হতে পারেননি। নিজের জীবন দিয়ে তিনি তাঁর সেই না পারার মূল্য দিয়েছেন। এর ফল জাতিকে পরবর্তী ২১ বছর ভুগতে হয়েছে। দেশের মানুষ প্রার্থনা করেন, তাঁর কন্যা সেই ভুল করবে না, যা হয়েছে, এখানেই তিনি ইতি টানবেন আর এখান থেকেই তাঁর নব উত্থান শুরু হবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যার হারানোর তো কিছু নেই। সর্বদা শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনায়।

 

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সৌদি আরব পৌঁছেছেন ১৭৬৯৪ হজযাত্রী
সৌদি আরব পৌঁছেছেন ১৭৬৯৪ হজযাত্রী
তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন ইয়ং টেরিপাস ক্লাব
তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন ইয়ং টেরিপাস ক্লাব
৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়েছে প্রথম হজ ফ্লাইট
৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়েছে প্রথম হজ ফ্লাইট
খা‌লেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক সফরসঙ্গী যারা
খা‌লেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক সফরসঙ্গী যারা
সর্বশেষসর্বাধিক