সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফেসবুক, ভাইবারে প্রবেশ তো লুকিয়ে চুরিয়ে আসা। বিষয়টি এমন যে, আমরা যে ফেইসবুকে আছি এটা সরকার দেখতে পারছে না। দেখতে পেলেই টিলোএক্সপ্রেস বলে চিৎকার করে উঠবে। জানি না সরকার টের পেয়ে গেলে বা দেখে ফেললে আমাদের কী হবে! তবে নির্ভয় পাই এই ভেবে যে, আমরা কেউ আর এখন একা নই, সবার বরাতে যা জুটবে তাই হবে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদেরও নাকি ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। অতএব ভয়ের কথা আপাতত সরিয়ে রাখি।
বুধবার সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজের পর দুপুর ১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাংলাদেশের ৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অন্তর্জাল দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার বন্ধ করতে গিয়ে ইন্টারনেট সংযোগেও চ্যুতি ঘটেছে। রাষ্ট্র ও জাতির নিরাপত্তা স্বার্থে এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে বলেও দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তাদের মতে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপস দিয়ে অপরাধীরা যোগাযোগ রক্ষা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। প্রশ্ন এখানেই, সরকারকে ডিজিটাল যুগে এই এনালগ পরামর্শ দিলেন কারা? ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্কুল পড়ুয়ারাও যখন ফেসবুক, ভাইবারে ঢুকে পড়তে পারছে, তখন অপরাধীরা নিশ্চয়ই নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে মগডালে উঠে বসে থাকবে না। সন্ত্রাসীরা অপরাধ সংঘটনের জন্য যোগাযোগ স্থাপনে কেবল এই অ্যাপসগুলোর ওপর নির্ভর করে বসে আছে ধারণাটাও প্রাচীন। লেখাটি যখন লিখছি তখন মালেসহ কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসের খবর এলো, মালেতে জরুরি অবস্থাজারির খবরও পেলাম, কিন্তু কোথাও নিরাপত্তার জন্য ইন্টারনেট বা অ্যাপস বন্ধের খবর পেলাম না। আসলে সেখানে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্নরকমের অ্যাপস সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে না তা নয়। তবে তারা এজন্য দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়নি। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধকে মোকাবেলা করবে প্রযুক্তি দিয়েই। সেখানেই প্রশ্ন দেখা দেয়, অামাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ কি এখনও প্রতিরোধ স্বক্ষমতা অর্জন করেনি? ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ে অামাদের প্রযুক্তি জ্ঞান নিঃসন্দেহে বিশ্ব অাসরের তুল্য। সমস্যা সেই অাদিকালের অামলাতান্ত্রিক মনস্তত্ব। সরকার দেশকে যে গতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চাইছে, সেই গতি ধারণের স্বক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো। তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা সরকারকে ভুল তথ্য ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। যদি তারা সত্যিই স্বক্ষমতা অর্জন করতো তাহলে সাইবার অপরাধের লাখো অভিযোগে তাদের কিঞ্চিৎ সাফল্য দেখতে পেতো দেশবাসী। অতএব নিজেদের সক্ষমতার ঘাটতিকে আড়াল করতেই তারা নিজেদের যেমন সরকারের সঙ্গে লুকোচুরি করছে, তেমনি জনগণকে এখন নামিয়েছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ডিজিটাল টিলোএক্সপ্রেস খেলতে। সরকার বা রাষ্ট্রকে তার এনালগ আমলাতন্ত্রের অক্ষমতার বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে তা না হলে বিপদ কিন্তু সত্যি আসন্ন!
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।