সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলীকে সামাজিক মাধ্যমে এই নতুন বিশ্ব যোগের একটি অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে চরম জঘন্যতা মনে হলেও, আবেগ বর্জিত বিশ্লেষণে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রাথমিক পর্যায়ে, প্যারিসের নিন্দনীয় হত্যাযজ্ঞের সাথে মুম্বাইের রক্তাক্ত ঘটনার মিল পেয়েছিলেন গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা। এটি কাকতালীয়, তা ভাববার কোনও কারণ নেই। রহস্যজনকভাবে অনুসন্ধান হবার আগেই, তত্ত্বটি নিয়ে আলোচনা হারিয়ে যায়। অনেকের মনে থাকতে পারে মুম্বাই ঘটনায় বীর অ্যান্টি টেরর স্কোয়াডের প্রধান হেমন্ত কারকারে বুকে তিনটি গুলির আঘাতে নিহত হয়েছিলেন। অথচ, সে সময়ে সন্ত্রাসীরা তার পেছনে অবস্থান করছিলেন। যা নিয়ে পরবর্তীতে আর কিছু শোনা যায়নি। পরিবার থেকে প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন তোলা হলেও পরে সব কিছু চুপচাপ হয়ে যায়। ধৃত সন্ত্রাসী কাসাবের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করা হয়, কিন্তু আজ প্রযন্ত পুরো ঘটনার অন্তরালের বিবরণ পাওয়া যায়নি।
সময় বলে দেবে প্যারিসের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সংস্থার অপারগতার কারণ। তবে চরম এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়া কঠিন। বছরের প্রথম দিককার শার্লি এবদো পত্রিকা কার্যালয়ে নৃশংসতার পড়েও যদি অবলীলাক্রমে এমন আক্রমণ ঠেকাতে তারা ব্যর্থ হন তা দুঃখজনক নয়, রীতিমত ভয়াবহ। ভুললে চলবে না যে ফ্রান্স, পৃথিবীর সামরিক শক্তির ক্রমতালিকায় পঞ্চম।
মুজাহিদিন, তালেবান এই দুইয়ের সৃষ্টিতে পরাশক্তিদের ভূমিকা আজ সর্বজনবিদিত। জাতিসংঘকে ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট তথ্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে ইরাক হামলার কারণেই যে আইএস-এর সৃষ্টি হয়েছে, তা যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার স্বীকার করেছেন। প্রচ্ছন্ন স্বীকারোক্তি ব্যরাক ওবামার, আইএস-এর উৎপত্তি জর্জ বুশের ভুল সিদ্ধান্তের ফল। মার্কিনি রাজনীতিতে, অতীতের ভুল নিজের বলেই ধরে নেওয়া হয়।
তবে এটা আজ পরিষ্কার যে রাশিয়ার কার্যকরী বিমান হামলার পর জানা গেল আইএস দমনের নামে সিরিয়ায় পশ্চিমা বোমা হামলা ছিল ধূম্রজাল, যার নেপথ্যে বাশার আল আসাদের বিপরীত শক্তিকে সহায়তা ছাড়া কিছুই ছিল না।
করবিনের প্রকাশ্য মন্তব্যের ফলেই কিংবা নিংষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রুশ অর্থনীতির কারণেই অথবা সিরিয়ার লোভনীয় তেল ক্ষেত্রে সহজ লভ্যতার অন্নেষণেই হোক ভ্লাদিমির পুতিন এখন সোচ্চার।
যে সিরিয়ার সমস্যা ছিল এতদিন দুর্বোধ্য, তা এক জি২০ অধিবেশনেই সুরাহা হয়ে গেল, ব্যাপারটি এত সহজ বলে মেনে নেওয়া কঠিন। অর্থনৈতিক মন্দার যুদ্ধ-বিগ্রহ বজায় রাখা পুরনো কূটকৌশল নতুন কিছু নয়।
তবে প্যারিসের নৃশংসতার ফল ভাল কিছু বয়ে আনবে না। লা মঁদের সাংবাদিকদের মুঠোফোনে তোলা ভিডিও প্রাথমিকভাবে মনে দাগ কেটেছিল। এখন তা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। জানালা থেকে এক হাতে ঝুলন্ত নারীটি ব্যায়ামপটু বা সুপার উইম্যান না হলে, কিছুতেই এতক্ষণ ঝুলে থাকতে পারেন না। আর বাইরে শুয়ে থাকা একজন পুরুষকে কেউই সাহায্য করল না, তা অভাবনীয়। অনেক্ষণ পর তিনি প্রথমে মুঠোফোনে এ টেপাটিপি করলেন, তারপর উঠে হেঁটে চলে গেলেন। অবাক করা নয় কি?
বৈষম্য বহির্ভূত বিশ্ব অর্থনীতিকে সকলেই স্বাগত জানাবে। তবে বৈষম্যহীন অর্থনীতি সোনার হরিণ ছাড়া কিছুই নয়। নতুন বিশ্ব যোগ, সে তুলনায় ভয়ানক।
লেখক: কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।