X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে গল্পের পুরোটাই আনফেয়ার

মাহমুদুর রহমান
১৪ মে ২০২৩, ১৬:২৩আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৬:২৩

প্রতি বছরই বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (কমার্শিয়ালি ইম্পোর্টেন্ট পারসন- সিআইপি) তালিকা প্রকাশিত হয়। সম্মানের পাশাপাশি এই তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা বিশেষ কিছু সুবিধা ভোগ করে থাকেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিআইপি সুবিধা, আন্তর্জাতিক সফরের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, দেশীয় বিমান ও ট্রেনের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ছাড়াও বঙ্গভবন ও গণভবনের বেশিরভাগ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান তারা। দেশের মুষ্টিমেয় জনগণ শীর্ষ করদাতার এই সম্মাননা পান।

এই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিরা প্রায় সময় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রধান বা পরিচালনা পর্ষদে থাকেন। তাদের শীর্ষ করদাতা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি হারিয়ে গেছে। জাতীয়ভাবে স্বীকৃত শিক্ষক বা আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও কৃষক এমন কোনও তালিকায় স্থান পান না। এই দুই শ্রেণির মধ্যে শিক্ষকেরা দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তোলেন এবং দেশের জিডিপির প্রায় ৬৩ শতাংশে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অবদান রাখেন কৃষকেরা। তারা তাদের এমন অবদানের জন্য কোনও সম্মাননা চান না। নিজেদের কষ্টে উপার্জিত অর্থে এমন নিরানন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চান না এবং নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সন্দেহের চোখে দেখুক, তাও চান না তারা।

প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই কৃষক শাখা থাকে। এই শাখার সুবাদে মঞ্চে ওঠার সুযোগ জোটে কেবল পদাধিকারীদেরই। আবার মে দিবস নিয়েও রয়েছে বেশ মাতামাতি। তবে এ মাতামাতি শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই কেন্দ্রীভূত। এসব আলোচনায় কৃষক কিংবা দিনমজুরের অধিকারের কথা কদাচিৎ উঠে এলেও বেশিরভাগ সময় অন্যান্য বিষয়ের ভিড়েই চাপা পড়ে থাকে। ইটভাটার কর্মী কিংবা কুলিরা কখনও এসব মনোনয়নে নির্বাচিত হন না। কেননা, তারা অপরিচ্ছন্ন, নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের বাইরে ‘নির্ধারিত’ জামাকাপড় পরিধান করেন না, মিডিয়াবান্ধব বক্তব্য দিতে তারা অভ্যস্ত নন। এমন জীবন যে তাদের কাম্য নয়, সে কথা বলারও সুযোগ পান না তারা।

ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী শাইখ সিরাজের বদৌলতে আমরা দেখতে পাই কৃষকদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছিলেন প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট প্রণয়নের আগে কথা বলে তাদের চিন্তা-ভাবনা ও মন্তব্য জানার চেষ্টা করতেন তিনি। এসব কৃষকেরা সামষ্টিক বা ক্ষুদ্র অর্থনীতি সম্পর্কে জানেন না। তবে নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রতিদিনের সংগ্রাম সম্পর্কে অবশ্যই জানেন তারা। টেবিলে বসে একবেলা খাওয়ার চেয়ে তাদের কাছে আরেক বেলার খাবারের জোগান নিশ্চিত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  

দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে এখন কৃষি নিয়ে কাজের চেয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রতি আগ্রহ বেশি। তার ওপর সেচের জন্য নদী কিংবা জলাশয়ের পানি ব্যবহারে করারোপ করে যেন কৃষিকে আরও কঠিন করে তুলেছে সরকার। একই রকম ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন মৎস্যজীবীরাও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোদে পুড়ে দুর্গম সমুদ্র থেকে মাছ এনে তা দালাল কিংবা বিনিয়োগকারীদের কাছে নামমাত্র দামেই দিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের। এ যেন এক দুষ্টচক্র।

ক্ষুদ্র কৃষিঋণ পরিশোধ না করতে পারলে কৃষকদের নির্মমভাবে জেলে ঢোকানো হয়। অথচ নামিদামি গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানো লোকেরা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর তা পরিশোধ করেন না। এক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার কাছে নতি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। কেননা, তাদের চাপ দিতে গেলে কর্তৃপক্ষকে উল্টো চাপে ফেলতে পারেন কথিত মার্সিডিজ বেঞ্জে চলাফেরা করা সমাজের লোকেরা। কৃষক কিংবা দিনমজুরেরা এমন ধরনের দুর্নীতি করেন না, সমাজের উঁচু স্তরের মানুষেরা করেন।

তথাকথিত শিক্ষিতদের মতো প্রতারণা করেন না কৃষকরা। এমনকি কোনও রেমিট্যান্স যোদ্ধাকেও দেশের জিডিপিতে অবদানের জন্য কখনও স্বীকৃতি দিতে দেখা যায় না। তবে সমাজের একশ্রেণির মানুষেরা ঠিকই দেশে বসে সেসব রেমিট্যান্সের অর্থে দামি গহনা, নামিদামি গাড়ি ব্যবহারসহ ‘বিজনেস ক্লাস’ নাগরিক হয়ে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়ান। তবে এসবের নেপথ্যে যারা ঘাম ঝরাচ্ছেন তাদের কিন্তু ভিআইপি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, অভিবাসন ফরম পূরণ কিংবা কর্মী হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না তারা। উল্টো তাদের বহন করা ব্যাগের দিকে সন্দেহের চোখে তাকায় নিরাপত্তাকর্মীরা। আর বঙ্গভবনে তাদের উপস্থিতি? অকল্পনীয়?

বাজেটের সময় এলে ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য সবকিছুতে করমুক্তির জন্য কান্নাকাটি করেন। কিন্তু কেউই এই দুঃসময়ে অভাবনীয় মুনাফা লাভ করা থেকে নিজেদের দূরে রাখার পরামর্শ দেন না।

যেকোনও বাজারে ঢুকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। প্রতিবার অজুহাত একই- সরবরাহ কম...।

একজন সাধারণ মেয়ে থেকে মারি অঁতোয়ানেতের রানি হয়ে ওঠার সংগ্রাম খুব ভালোভাবে নথিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তার একটি তির্যক মন্তব্য থেকে একটি বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। মানুষ যখন রুটির জন্য হাহাকার করছিল তখন তার প্রতিক্রিয়ায় যে মন্তব্য করেছিলেন সেটির অর্থ ছিল: ‘রুটি না থাকলে তাদের কেক খেতে দিন!’

লেখক: কলামিস্ট ও কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ

/এটি/এএ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ