ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে তার হয়তো দাবিদার পাওয়া যাবে। পুলিশ হয়তো শনাক্তও করতে সক্ষম হবে তাদের। কিন্তু যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করলে সাদা চোখেই দেখা যাবে- প্রথমত তারা মুসলমানদের অভ্যন্তরে একটি বিরোধের আগুন জ্বালাতে চাচ্ছে। মুসলমানদের একে অপরের বিরুদ্ধে সাংঘর্ষিক অবস্থানে যেতে উস্কানি দিচ্ছে। যে সাংঘর্ষিক অবস্থানে বাংলাদেশকে তারা নিয়ে যেতে চাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ নেই। এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম নিজ আচার মতে করে যাচ্ছে। মাঝে আহমাদিয়াদের নিষিদ্ধের একটি দাবি উঠেছিল, সেটাও আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক উস্কানিতে। কিন্তু নিকট অতীতে এ নিয়ে আর সরগোল শোনা যাচ্ছিল না। একইভাবে বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় কখনও জঙ্গিদের টার্গেটে ছিল না। এখন তারাও পরিণত হয়েছে টার্গেটে। তবে মূলকথা হলো ঘটনার যারা নকশাকার, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে আতঙ্ক তৈরি করা। আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে আলোচনায় আসা। তাই আহমেদিয়া বা শিয়া সম্প্রদায় আসলে মূল লক্ষ্য নয়, চার্চও নয়। মূল বিষয় হলো অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। মসজিদ, গির্জা যেকোনও ধর্মানুসারীর কাছেই স্পর্শকাতর ও পবিত্র স্থান। এ কারণেই তারা অস্থিরতা তৈরির জন্য মসজিদকে বেছে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামেও মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের ‘এক রাত্রি’র সমাধান নেই। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে এর মোকাবেলাও সম্ভব নয়। মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে। রাজনৈতিক সহিষ্ণু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে, এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একই দর্শনে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রকে নজর রাখতে হবে তৃণমূলের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের দিকে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি, সামাজিক ব্যবস্থার বিপরীতে রাষ্ট্রকে অবস্থান নিতে হবে। এখানে মূল ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে শিক্ষার সংস্কার। মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাষ্ট্রের নজরদারীর বাইরে রাখা যাবে না। সব মাধ্যমের শিক্ষার পাঠ্যক্রমে সাম্যতা আনতে হবে। এই কাজগুলো এখনও আমরা শুরু করতে পারিনি। এজন্য যেই রাজনৈতিক শুদ্ধতার প্রয়োজন, তার অনুপস্থিতি রয়েছে। সেই সুযোগেই জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। এখনই সময় সেই প্রবেশ প্রতিহতের। তবে তা হতে হবে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে। তবেই তা হবে ফলদায়ক।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।