বিশ্ব যখন এক উঠোনে এসে মিলেছে, তখন জ্ঞানও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। একক বিষয়ে বা ঘরানার জ্ঞান নিয়ে বাজারে যাওয়া সম্ভব নয়। অসম্ভব টিকে থাকাও।
বিশ্বকে মানবিক, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্যতে বিভক্ত রাখা সম্ভব নয়। চিকিৎসকেরও প্রয়োজন মানবিক ও বাণিজ্যিক জ্ঞান। প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে বিজ্ঞান ছাড়া সকল জ্ঞানই আবার অচল পয়সা। চলতি শতকে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত জ্ঞান বা শিক্ষার। এখন কাউকে কোনও জ্ঞান থেকে দূরে রাখা বা বিচ্ছিন্ন রাখা মানে তার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা। আমাদের সঙ্গে এই বৈষম্যমূলক আচরণ ঘটে আসছে সেই ইংরেজ শাসনামল থেকেই। পাকিস্তান হয়ে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত আসতে, নানা নিরীক্ষা ও সংস্কারের পরেও শিক্ষাকে বৈষম্যমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং নানামুখী ও মাধ্যমের শিক্ষা, এই বৈষম্যকে আরও দৃঢ় করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তৈরি বৈষম্য সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য তৈরির আঁতুড় ঘর। শিক্ষায় বৈষম্য নির্মূল না করতে পারলে সমাজ থেকে তা দূর করা সম্ভব না।
আনন্দের বিষয় হলো, আমাদের কিশোর, তরুণরা বিষয় বৈচিত্র্যের প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। জ্ঞানের আরোপিত বাঁধ ভেঙে তারা অসীমের পথে যেতে চায়। আমরা দেখছি মানবিকের শিক্ষার্থীর প্রযুক্তি উৎকর্ষতা। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর মানবিক কোনও বিষয়ে গবেষণায় সাফল্যের খবর আমাদের আলোড়িত করছে নিত্য। একই সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীরা বিষয় নির্বাচনে নিজের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। অভিভাবকদের সনাতন ধারণাকে পাল্টে দিতে চায় তারা। এই বাস্তবতায় দেখছি সরকারও চাইছে জ্ঞানের সাম্য। মাধ্যমিকে সকল শিক্ষার্থীকে তিন বিষয়ে পাঠে অভ্যস্ত করতে। এতে উচ্চশিক্ষায় বৈষম্য দূর হবে। চাকরির বাজারে প্রায় সমান জ্ঞানের ভীত নিয়ে প্রবেশের একটা সুযোগ তৈরি হবে। রাষ্ট্রের এই ভাবনাকে শিক্ষাকে বৈষম্যমুক্ত করার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখতে চাই। যদিও এখনও এ নিয়ে নিরীক্ষা ও যত্নের যথেষ্ট অবকাশ আছে। তারপরও ভাবনার অঙ্কুর প্রস্ফুটিত হবার অপেক্ষায় আছি।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি