এখন যেমন ভাবা হচ্ছে বা প্রস্তাব পাখা হয়েছে একুশের বইমেলা স্থগিত করার। চীনের উহানে আবির্ভাব হওয়া কোভিড-১৯ যখন চীন কাবু করে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছিল, তখন ঢাকায় চলছিল একুশের বইমেলা। মেলা মাঠে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা হচ্ছিল করোনা নিয়ে। কেউ তুখোড় ধুলোর মাঝেও সহজে কাশতেন না। মাঠে ভিনদেশি কাউকে দেখলেই দূরে সরে যেতেন অন্য দর্শনার্থীরা। এর মধ্যেই বেশ গোছালো মেলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। আমাদের এখানকার বই প্রকাশের রেওয়াজ এখনও একুশে বইমেলা কেন্দ্রিক। আগস্টের শুরু থেকে লেখক প্রকাশকেরা আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেন। বই বিক্রির ব্যাপারটিও চলে বছরজুড়ে। কিন্তু গত বইমেলা শেষ হওয়া মাত্র কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া, সাধারণ ছুটি, সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ থাকা, বিদ্যায়তন বন্ধের কারণে ২০১৯ এ প্রকাশিত বই এখনও অনেকে গুদাম থেকে বের করতে পারেনি। বড় পুঁজির ও কিছু প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম ও ছোট প্রকাশক এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাকি সিংহভাগই লোকসান ও বিপর্যয়ের মুখে আছে। এই বাস্তবতায় আগস্ট থেকেই আলোচনায় আসতে থাকে ২০২১-এর বইমেলা। বইমেলা হবে, নাকি হবে না? অবয়বপত্রে মাস দুই আগে থেকেই নতুন বই লেখা ও প্রকাশের ঘোষণা আসতে দেখছি, কেউ কেউ অগ্রিম বিক্রয় বা প্রি অর্ডার নিতে শুরু করেছে। কিছু বই প্রকাশও হয়ে গেছে। তবে এই সংখ্যা নগণ্য। সকল ছোট বড় প্রকাশকই ২০২১ সালের বইমেলার অপেক্ষায়। তবে কতিপয় বড় বা প্রভাবশালী প্রকাশক বইমেলা না হওয়ার পক্ষে। তাদের অনেকেই এই ব্যবসার অবসর প্রান্তে। তাদের উত্তরাধিকাররা এই ব্যবসায় আসতে চান না। কারও কারও সরবরাহ কাঠামো এতো দৃঢ় যে, মেলা মাঠে না গড়ালেও ক্ষতি নেই। ক্ষতি তাদের, যারা মধ্যম ও ছোট আকারের প্রকাশক এবং নবীন। গত প্রায় এক দশকে নবীন প্রকাশকরা, প্রকাশনা শিল্পে বিপ্লব এনেছে, একথা মানতেই হবে। বইমেলা না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মেলা যদি মাঠ অবধি না যায়, পরাবাস্তব অবস্থায় থাকে, তবে বই প্রকাশের সংখ্যাও কমে যাবে। কারণ ১২ আনা প্রকাশক অনলাইন বিপণনে সিদ্ধহস্ত হতে পারেনি। অনেকের ওয়েবসাইটও নেই। ক্রেতাদেরও কয়জন অনলাইনে কেনার অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে? তাই মেলা কেন্দ্রিক যে অর্থনৈতিক চক্র সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই মন্দাকালে।
বইমেলা মাসব্যাপী হতেই হবে এই সংকটকালে এমন নয়। সংক্ষিপ্তভাবেও করা সম্ভব। পৌষ, মাঘে শীতের তীব্রতা এড়াতে ২১ ফেব্রুয়ারিতেও মেলা শুরু করা যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৭ মার্চ এই ১৫ দিন জমজমাট মেলা করা সম্ভব। এতে মুজিববর্ষের শেষলগ্ন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপনের শুরুর লগ্ন স্পর্শ করা হবে। অবশ্যই মেলার স্টল বিন্যাস, গেইট এমন নকশা স্বাস্থ্য বান্ধব হতে হবে। পাঠক, দর্শনার্থী প্রবেশ, স্টলের সামনে অবস্থানকেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব অনেকটাই। দরকার শুধু সমন্বিত পরিকল্পনা নকশা তৈরি। সেই নকশাকাররাও তৈরি ২০২১ মেলা আয়োজনে অংশ নিতে। তাই আশা ছাড়ছি না, যে সীমিত-সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দেখা হোক একুশের বইমেলায়।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী