পড়ন্ত বিকেলের দুরন্ত বিজয়






আবদুল মান্নানএ বছর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনীর (যৌথ বাহিনী) কাছে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেছিলেন । যৌথ বাহিনীর পক্ষে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এই অত্মসমর্পণ দলিলেও স্বাক্ষর করেছিলেন । পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল নিয়াজি । সেদিনের পড়ন্ত বিকেলে এই ঐতিহাসিক দলিলে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করেছিলেন । সেটি ছিল এই পড়ন্ত বিকেলের এক দুরন্ত বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত । এই দৃশ্য সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সেই রাতে দেখেছে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রকাশ্যে কোনও সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঘটনা এই প্রথম এবং এই শেষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামোরু সিজেমিটসু মার্কিন জেনারেল ম্যাকার্থারের নিকট ঠিক একইভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অনেকে প্রশ্ন তোলেন নিয়াজি কেন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওসমানীর নিকট আত্মসমর্পণ করেননি । সহজ উত্তরটা হচ্ছে জেনারেল ওসমানী একটি স্বাধীন দেশের সেনাপ্রধান, কোনও আঞ্চলিক কমান্ডার নন । তিনি সেদিন সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সেই আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করতেন না । আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জেলের ভেতর নিহত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে নিহত ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর তিন লক্ষ মা বোনকে, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা, আমাদের এই অবিস্মরণীয় বিজয় । আজকের দিনটি বাংলাদেশের বিজয় দিবস যেমন সত্য ঠিক তেমনভাবে সত্য এই দিনটি পাকিস্তানেরও পরাজয়ের দিন, বিশেষ করে জিন্নাহর পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছিল এই দিনে।

একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বরের বাঙালির ইতিহাস বেশ দীর্ঘ । এই ষোল ডিসেম্বর হঠাৎ করে আসেনি। এর পিছনে আছে বাঙালির দীর্ঘ তেইশ বছরের ত্যাগ তিতিক্ষা ও ব নার ইতিহাস, অনেক রক্তপাতের ইতিহাস, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের শুরু দেশ ভাগের পূর্বে। ১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাস ভূমির সৃষ্টির যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল সেটি করেছিলেন একজন বাঙালি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক । তবে তা কোনও স্বাধীন দেশ সৃষ্টির প্রস্তাব ছিল না। ছিল ভারতে অবস্থানরত মুসলমানদের জন্য একাধিক রাষ্ট্র। এর আগে উপমহাদেশের বিশ্বখ্যাত দার্শনিক ও কবি আল্লামা ইকবাল বলেছিলের, উত্তর পশ্চিম ভারতে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি সৃষ্টি করা উচিত। তিনি কখনো ভারত ভাগ করে পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির কথা বলেননি। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির কথা বলার কারণ ছিল অনেকটা শিক্ষাদীক্ষায় অর্থেবিত্তে পিছিয়ে পড়া একটি জনগোষ্ঠীর জন্য অনেকটা একাধিক সংরক্ষিত অঞ্চল তৈরি করা, অনেকটা ফেডারেল কাঠামোয়, যেমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাজনীতিবিদদের অদূরদর্শিতার ফলে এক সময় তা হয়ে গেল মুসলমানদের জন্য একাধিক পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র । ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে তা হতে পারতো ইকবালের প্রত্যাশা অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য একাধিক আবাসভূমি সৃষ্টি। এই ধারায় পূর্ব ভারতে অবিভক্ত বাংলা ও আসামকে নিয়ে আর একটি অঞ্চল বা রাষ্ট্রও হতে পারতো। কারণ এই সময় এই অঞ্চলে মুসলমানরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ও অদূরদর্শিতার কারণেই তা না হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান নামের একটি বিকলাঙ্গ রাষ্ট্র । যদিও চলতি ধারণায় বলা হয়, ভারত বা দেশ ভাগ বাস্তবে হয়েছিল অবিবেচনাপ্রসূত রাজনীতিবিদদের কারণে পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগ, সঠিক অর্থে ভারত ভাগ নয় । এই ভাগ ছিল ইতিহাসের এক বড় ট্র্যাজেডি। এই ভাগের ফলে বাংলা ও পাঞ্জাবে সংঘটিত দাঙ্গায় মারা পড়েছিল কয়েক লক্ষ মানুষ আর গৃহহারা হয়েছিল কমপক্ষে পনের লক্ষ। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির জন্য সবচেয়ে বেশি আন্দোলন হয়েছিল বাংলায়। কারণ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বাংলার মুসলমানরাই ছিল সবচেয়ে বেশি পশ্চাৎপদ । মনে করেছিল পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা হয়ে উঠলো ঠিক উল্টো । ইংরেজ শাসকদের পরিবর্তে তাদের ওপর শাসক হয়ে বসলো তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের ভূস্বামী, পুঁজিপতি, জোতদার আর জমিদাররা । তাদের সার্বিক সহায়তা করলো পাঞ্জাবের সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র। এই শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন বাঙালি রাজনীতিবিদরা, যাদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসিমসহ অনেকে। আন্দোলন করার জন্য চাই সংগঠন । ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলো পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ (পরে আওয়ামী লীগ)। মাওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট আর মুহাম্মদ শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক । তরুণ শেখ মুজিব হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম ১৯৪৭ সালের পর হতে। শুরু ছাত্রদের হাত ধরে, যখন পাকিস্তানের বড় লাট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় এসে ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তানের ছয় ভাগ মানুষের ভাষা উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা তখন হতে। প্রতিবাদ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাজ । তরুণ শেখ মুজিব জানতেন সংগঠন ছাড়া আন্দোলন হয় না। সেই বছরই তিনি গঠন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়)। যেমনটা বলেছি ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ (পরে দলকে অসাম্প্রদায়িক দলে রূপ দিতে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়)। পাকিস্তানের দীর্ঘ তেইশ বছরের ইতিহাসে বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য একাধিক রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ। বাঙালির ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলনের কারণে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব (১৯৬৯ হতে বঙ্গবন্ধু) পাকিস্তানের তেইশ বছরে কারাগারে কাটিয়েছেন তের বছর, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দু’বার। শত জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েও বঙ্গবন্ধু কখনও পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর সাথে আপস করেননি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে পাকিস্তান দীর্ঘ দিন সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সকল মৌলিক অধিকার নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন । ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোড়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন আইয়ুব খান। ক্ষমতা ছাড়ার আগে পাকিস্তানের শাসনভার হস্তান্তর করেছিলেন আরেক সেনাপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে । আবার সামরিক আইন। তবে ইয়াহিয়া খান বুঝেছিলেন সামরিক আইন দিয়ে তার পূর্বসূরির মতো তিনি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারবেন না। ঘোষণা করেছিলেন পরের বছর একটি সাধারণ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি কথা রেখেছিলেন তবে তার কিছু হিসাব-নিকাশে ভুল ছিল। ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য দিয়েছিল যে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে তিনশ’টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ আশিটি আসন পাবে। আর ভুট্টোর পিপলস পার্টি পাবে সত্তরটির মতো আসন। সরকার গঠন করতে হলে দুই দলকে একসাথে হয়ে তা করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব হবে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান তৈরি করা। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনি ইশতেহার ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী ঠিকই জানতেন ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করার অর্থ হচ্ছে পাকিস্তানের সব প্রদেশের সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা, যা আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন দাবি করে আসছিল। এমন একটা শাসনতন্ত্র সংসদে গৃহীত হওয়ার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রের হাতে শুধু দেশ রক্ষা ও বিদেশ নীতি অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছিলেন সংবিধান যদি তার কাছে গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তিনি সংসদ বাতিল করে দেবেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন এমন একটি আত্মঘাতী কাজ ইয়াহিয়া খান করবে না, কারণ তিনি বাঙালির সম্মিলিত শক্তি দেখেছেন। আর বঙ্গবন্ধু জানতেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাঁর পিছনে আছে। অন্যদিকে ইয়াহিয়া খান ধারণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু আর ভুট্টো মিলে সরকার গঠন করলে একা মুজিবের পক্ষে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না ।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ববাংলার জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে জয়ী হয়েছিল ১৬৭টি আসনে। উল্টে গিয়েছিল ইয়াহিয়ার সকল হিসাব নিকাশ। গণতান্ত্রিক রেওয়াজ অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই সরকার গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী (পাঞ্জাবের সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র) কোনও অবস্থাতেই পাকিস্তানের শাসনভার বাঙালির হাতে যাক তা মেনে নিতে পারেনি। শুরু হলো পাকিস্তান শাসক শ্রেণির অন্যতম হাতিয়ার প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। তারা সাথে পেল তাদের দোসর পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলি ভুট্টোকে। বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্য নানা রকমের অজুহাত ও কালক্ষেপণ। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের নাগপাশ হতে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাঙালিকে নিজেদের মুক্ত করতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হলো ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি অসম যুদ্ধ। কারণ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। অন্যদিকে ছিল নিরস্ত্র বাঙালি। তাদের একমাত্র শক্তি দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। বাঙালির দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল এই দেশের আপামর জনগণ। বাদ ছিল শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই দেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদর আর অতি বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও তাদের অনুসারীরা। বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল একাধিক বিদেশি শক্তি, যাদের মধ্যে ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যতম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যা হতে বাঁচার জন্য এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার ও তাঁর দেশে শরণার্থী হয়ে যাওয়া এক কোটি মানুষকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছিলেন। সাধারণ মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। তখনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি কারাগার হতে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল । তিনি লন্ডন হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন । তখন দেশটি সম্পূর্ণ একটি ধ্বংসস্তূপ। স্বাভাবিক কারণেই সেই ধ্বংসস্তূপের ভবিষ্যৎ দেখতে পাননি বিশ্বের কোনও অর্থনীতিবিদ বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কিন্তু সেই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে হাঁটতে শিখিয়েছেন। আর বর্তমানে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের একটি রোল মডেল আর তিনি একজন স্বীকৃত রাষ্ট্রনায়ক ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালে মনে হয় বাংলাদেশের এই সাফল্যের সাথে দীর্ঘ পথ চলা সম্ভব হয়েছে এই দেশের সাধারণ মানুষের দেশপ্রেমের কারণে। বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চাইলে ‘এমন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে আপনি কীভাবে টিকিয়ে রাখবেন’? উত্তরে তিনি বলতেন ‘আমার মানুষ আর মাটি আছে। এই মানুষ আর মাটি এই দেশের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। আজ বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে অনেক আগেই যাওয়া যেতো যদি না ঘাতকরা দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতো।
পিতা শেখ মুজিব আর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলা নামের এই দেশটাকে জন্ম হতে এই পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন অনেক দূর। দিয়েছেন একটি আত্মপরিচয়। যে দেশটিকে শুরুতে শুধু মুজিবের দেশ হিসেবে বিশ্বের মানুষ চিনতো সেই বাংলাদেশকে এখন স্বনামে চেনে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে বসে এটাই বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন। বাংলা আর বাঙালির জয় হোক। চিরজীবী হোক ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। জয় বাংলা।


লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক।