পোস্টারে শীর্ষ নেতা, নেত্রী, তাদের উত্তরসূরি, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, গ্রাম, ওয়ার্ডের নেতারা। যেকোনও দিবস ও উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট ও পদ প্রত্যাশীরা এমন পোস্টার সেঁটিয়ে দিচ্ছেন দেশজুড়ে। পোস্টার দেখে বুঝার উপায় নেই কে ভোট চাইছেন বা কে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। পোস্টার থেকে দলীয় আদর্শ ও মতবাদ উধাও। পোস্টার মানে হচ্ছে নেতা তোষণ। সেখানেও বিপত্তি, কাকে রেখে যে কাকে তোষণ করা হবে। সবাইকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে পোস্টার বীভৎস্য রূপ নেয়। জনগণ পোস্টার দেখে এখন আর রাজনীতির গতি প্রকৃতির আভাস পায় না। তার শিরায় কোনও আদর্শ তরঙ্গায়িত হয় না। বরং শহর গ্রামের দৃশ্য দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোস্টার।
কেবল বাস্তব জগতের দেয়ালই নয়, পরাবাস্তব বা ভার্চুয়াল জগতের দেয়ালেও দেখা দিয়েছে এমন দূষণ। এখানেও সেই পরিবার ও নেতা কেন্দ্রিক তোষণ। সকল ভাই বোনই সাদা মনের। সকলেই স্বপ্নদ্রষ্টা। পদ প্রাপ্তি, পদে যোগদান, জন্মদিন, কারও পরিজনের মৃত্যু কিংবা যেকোনও ছুঁতো তুলেই চলে সহমতের স্লোগান, জয়ধ্বনী। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই জিকির আজকারে আদর্শ, শুভচিন্তা, আত্মসমালোচনার অনুশীলন উধাও। অবয়বপত্রজুড়ে চলে সহমতের মাতম, প্রতিপক্ষকে হেয় করার নোংরা প্রতিযোগিতা। সার্বিকভাবে আমাদের রাজনৈতিক অনুশীলনের জায়গাটিতে যে আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা নেই, সেখানে দলীয় আদর্শ নিয়ে কোনও সংলাপ নেই তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। মূলকথা হলো সৃজনশীলতা থেকে আমাদের রাজনীতি অনেকটা দূরে সরে গেছে। সেটা মিছিলের স্লোগান এবং অবয়বপত্রের দেয়াল লিখন দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। সৃজনশীলতার উপস্থিতির এই যে অনুপস্থিতি তার আরেকটি কারণ নেতা তৈরির প্রক্রিয়ার কলটি বন্ধ থাকা। প্রায় তিন দশক পর একটি কল পরীক্ষমূলকভাবে চালু হলে, বন্ধ রাখার কুফল আঁচ করতে পারি। একই কারণে রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গুলোকেও লম্ফজম্ফ করতে দেখা যাচ্ছে বেশি। রাজনীতির সৌন্দর্য দেয়াল লিখন, কার্টুন কিংবা ভাস্কর্য এখন রাজনীতিতেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই সৃজনশীলতা থেকে রাজনীতির দূরে সরে যাওয়া। আদর্শ থেকে রাজনীতিতে ব্যক্তি মুখ্য হয়ে ওঠা। ব্যক্তিই আদর্শের প্রবর্তক, আদর্শের মাধ্যমে ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, এই মন্ত্রটিও যেন রাজনীতির মানুষেরা ভুলে বসে আছে। রাজনীতির এই ক্রান্তিলগ্নেও আমরা আদর্শ ও সৃজনশীলতা বিমুখ। যা বিজয়ের ৫০ উদযাপন করতে গিয়েও, আমাদের সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয়, আমরা কি সত্যি পথ ভুল করে বসে আছি? অস্বীকার করছি না। ভুল পথে কিছুটা হেঁটেছি ঠিকই, কিন্তু সঠিক পথ থেকে খুব দূরে নয়। এখনও সময় আছে, ঠিক পথে ফিরে যাওয়ার । ৫০ -এ এসে আর সঠিক পথে হাঁটতে দেরি না করি। শুরু হোক সুন্দর বাংলাদেশের পথে হাঁটা।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী