সবকিছু ছাপিয়ে বাস্তবতা হলো শতভাগ শিক্ষার্থী এইচএসসি’র ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিক পরীক্ষা হলে হয়তো পাসের গড় হার ৭০ এর উপরে থাকতো। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। পরীক্ষার ফলতো মিললো, এখন উত্তীর্ণদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির লড়াই। প্রথম লড়াইটি হচ্ছে, কবে ভর্তি পরীক্ষা বা প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে? এরই মধ্যে এই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি শিক্ষা বছর চলে গেছে। যতো বিলম্ব হবে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে, ততোই শিক্ষাবর্ষ অপচয়ের ব্যপ্তি বাড়তে থাকে। তাই সরকারি, বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু এবং ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকতে হবে। মেধার ভিত্তিতে যেন শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ করে নিতে পারে, সেই পথটি মসৃণ করে দেওয়ার দায়িত্ব এখন সকলের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ দিকটিতে নিবিড় তদারকি করতেই হবে। শতভাগ পাসের সুযোগে যেন কোথাও শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাণিজ্যের খদ্দেরে পরিণত না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোকেও এবার আরো সচেতন থাকতে হবে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে। শতভাগ পাস করা শিক্ষার্থীরা সাধারণভাবেই, সকলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে না। তাই কারিগরি শিক্ষার প্রতি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রণোদিত করার প্রয়োজন রয়েছে।
কন্যার ফল খুঁজে দেখবার আগেই আমি ওর হাতে একটি বই তুলে দিয়েছি। ও যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী, সেই বিষয়ের এক দিকপালের লেখা বই। কন্যার ফলের গ্রেড যাই হোক না কেন, স্বপ্নের গ্রেড তো সোনালী। অতএব বইটি ওর প্রাপ্য ছিল। তারপর ফলের খোঁজ পেলাম। দৌড়ে গেলাম মিষ্টির দোকানে। কন্যার পছন্দের মিষ্টির খোঁজ করতে গিয়ে, কোথাও উচ্ছ্বাস দেখলাম না। মিষ্টির দোকানে ভিড় নেই। বরং টিপা টিপ্পনী কানে এলো কিছু। এটা অটো প্রমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই চলছে। সামাজিক মাধ্যমে চলেই আসছে, আজও হচ্ছে। এমন একটি কঠিন সময় এই শিক্ষার্থীরা যে পেরিয়ে এলো, আগামীতেও পেরোতে হবে, এনিয়ে কোনও সহানুভূতি নেই। বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি ও মানসিক পীড়নের ষোলআনা প্রদর্শন চলছে। অভিভাবক সুলভ আচরণ দুর্লোভ। দেখে মনে হচ্ছে করোনাকালে কেবল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবির হয়ে আছে। আমরা কেউ অস্বীকার করছি না, শিক্ষার বা জ্ঞানের বেলাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেই দায় কেন শিক্ষার্থীদের কাঁধে চড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঠিক দিকেই নজর দিয়েছেন।
মানসিক পীড়নের এই দিকটি তিনিও খেয়াল করেছেন, তাই তিনি বললেন, ‘আমাদের ছোট ছেলে মেয়েদের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই হতাশাগ্রস্থ না হয়ে পড়ে। এমনিতেই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। এটা তাদের জীবনে বিরাট বাধার সৃষ্টি করছে। সেখানে যদি ফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, কিংবা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা হয়, এটাও কিন্তু মানসিক চাপ তৈরি করে।’ প্রধানমন্ত্রী এধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন। অভিভাবক হিসেবে আমি বলবো আমাদের সকলেরই যার যার অবস্থান থেকে অভিভাবক সুলভ আচরণ করতে হবে। যারা আগে পাস করে বেরিয়ে গেছে বা আগামীতে পরীক্ষা দেবে, তাদের কাছ থেকেও সংযত ও বন্ধুসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিশ্বজুড়ে এই বিষন্নতার সময়ে আমরা উদযাপনের উপলক্ষ্য পেলাম, সন্তানদের মাধ্যমে। তাই তিতা না ভেবে মিঠাই ভেবেই ফলের স্বাদ নিতে শুরু করি। সকল সন্তানের জন্য সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা রইলো। সকল উত্তীর্ণদের বলতে চাই, পরীক্ষা এবং ফল একটি প্রক্রিয়া মাত্র। জীবন সাজাতে হয় নিজের স্বপ্নের মতো করে। তোমরা সেই স্বপ্নের মাইলফলকে পৌঁছার পথচিত্র নিজের হাতেই আঁকো। দেখবে গন্তব্য দূরে নয়।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী