আংশিক রঙিন, রঙিন ঝিলমিল পর্দা আমাকে টেনে নিতে পারেনি। প্রেমের কত লোকজ, পৌরাণিক কিংবা আধুনিক গল্পে রঙিন পর্দা ঝলসে গেছে। কতজনই এলো-গেলো কিন্তু সাদা-কালো পর্দাটা আমাদের আশি ও নব্বই তরুণদের কাছে আপন হয়ে রইলো। আমাদের সাদা কালো রঙ মুছে দিতে ইচ্ছে হলো না। আজও হয় না। ভয়, যদি কবরীর মিষ্টি হাসিটাই মুছে যায়।
কর্ণফুলির কলকল ধ্বনি শোনার আগেই টেলিফোনের এ প্রান্ত থেকে শুনেছিলাম, তাঁর মিষ্টি কল কল হাসি। ঢেউয়ের পর ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে এপাড়ে। আমি ভিজে যাচ্ছি ঢেউয়ের ভালোবাসায়। আচ্ছা নিঃসঙ্গ শেরপা’র হাসি কি এমনই হয়? তিনিও তো উঠে ছিলেন খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে। তার মতো উচ্চতায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আর কোনও নায়িকা পৌঁছাতে পারেননি। তিনি যতো উঁচুতেই উঠুন না কেন, বরাবরই মনে হয়েছে কবরী আর আমরা এক উঠোনেই থাকি। বেড়ার ফাঁক দিয়ে পাশের বাড়ির যে মেয়েটির বেড়ে ওঠা খুব সহজেই দেখা যায়, কবরী আমাদের পাশের বাড়ির সেই সরল কিশোরী। আসমানের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হওয়াতেই বুঝি তিনি একলা হয়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের মাঝে থেকেও যেমন নিঃসঙ্গ, তেমনি পেশাগত জীবনে, রাজনৈতিক জীবনের হৈ হল্লুরের মাঝেও তিনি ছিলেন একা। কত প্রেম, কত ভালোবাসা কুয়াশার মতই জানালার কাঁচে এসে ভিড় করেছিল। কিন্তু কোথায় যেন স্বরলিপি লেখা ও পড়াতে ভুল হয়ে যাচ্ছিল বারবার। তাই ভালোবাসা শুধু বাস্প হয়েই উড়ে গেছে। প্রজাপতি হয়ে বসেনি তাঁর খোঁপাতে।
রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। রাজনীতির উপসর্গ এড়াতে পারেননি। নানা তর্ক-বিতর্ক তাকেও ঘিরে ছিল। নষ্ট রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গেলেন। কিন্তু দূরে সরে যাননি কখনোই মানুষের কাছ থেকে। কারণ ভালোবাসার ছাড়া তিনি কিছু চাননি। মুঠো মুঠো ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন চারপাশের মানুষের মাঝে। তাই ফিরে এসেছিলেন আবার রূপালী রঙে। আশ্চর্য বিষয় হলো- কখনোই কাউকে দেখিনি ‘সখি’কে ছেড়ে যেতে। রাজনীতির চরম বিতর্কের সময়েও। এককাপ চা খেতে সঙ্গ দেওয়ার মানুষ ছিল না তাঁর। এই কঠিন বাস্তবতা ছিল তাঁর জীবনে সত্যি। স্থায়ীভাবে কোনও ভালোবাসা নোঙর করেনি তাঁর সৈকতে সত্যি। কিন্তু বাংলার দর্শক রূপালী পর্দা, সিনেপ্লেক্স ও ইউটিউবের কালেও আমাদের প্রথম প্রেম কবরী।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী