ব্যাপারটি এমন যেন যারা ফেরিতে শরীর ঘেঁষে গিয়েছে, শুধু তারাই করোনার বিস্তার ঘটাবে। বাকিরা ছিল নিরাপদ গণ্ডিতে। তাই স্বাস্থ্য দফতর থেকেও বলা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে দেরিতে ফেরাতে। শুধু লকডাউন দিয়ে, আগের মতো ফেরি গণপরিবহন বন্ধ রেখে শহরে ফেরা বন্ধ রাখা যাবে? দফতরগুলো এবং তাদের কর্তারা এমন ভাবে কথা বলেন যেন, দেশ চলে সোনার কাঠি রুপোর কাঠিতে। মাঠের বাস্তবতা থেকে তারা দূরে থাকেন। কাজের জন্য যে ফিরবে তাকে কোনও বাঁধে আটকানো যাবে না। আটকানোর কোনও অবকাঠামো আমরা তৈরি করতে পারিনি। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করা যায়নি, তেমনি সড়ক ও পরিবহন অবকাঠামোটাও নড়বড়ে। সুতরাং মানুষ ফিরবেই, তাদের ফিরে আসাটা কতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করা যায়, তারই নকশা করা উচিত ছিল। কিন্তু এক দফতরের সঙ্গে অপর দফতরের সমন্বয় না থাকা, প্রজ্ঞাপন আর মাঠের মধ্যে সম্পর্কটা অনেক দূরের হওয়ায় সকল পরিকল্পনার পরই হাওয়া হয়ে যায়। বাস্তবে তাদের পাওয়া যায় না।
বলা হচ্ছে লকডাউন বাড়তে পারে। মাস্ক না পরলে মাঠে জরিমানা করার বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে পুলিশকে। পুলিশকে দেওয়া ঠিক নাকি সেনাবাহিনীকে, এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে। সাধারণের কথা হচ্ছে, যাকেই দেওয়া হোক, কেউ যেন অতি প্রয়োগের বাড়াবাড়িতে চলে না যায়। ‘কান ধরে কান ধরা’র ছবি যেন আর আমাদের দেখতে না হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সত্যি চলে গেছে কিনা জানি না। তৃতীয় ঢেউ’র ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে। ভয়াবহতার উদাহরণ হিসেবে আছে ভারত। দুরু দুরু বুকে ঈদ পার হলো। করোনাকালে তৃতীয় ঈদ পার করলাম। অবয়বপত্র উদযাপনের বিজ্ঞাপনে ঢেকে গেছে ঠিকই, বিজ্ঞাপনের আড়ালে ঠিকই জেঁকে বসে আছে স্বজন হারানোর বেদনা, আক্রান্তের যন্ত্রণা এবং রোজগারের অনিশ্চয়তা। করোনা থেকে মুক্ত হয়তো নিকট অতীতে হতে পারবো না। তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ বা সইয়ে আনার পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত উৎসবের পুরনো হাসি ঠোঁটে মুখে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
করোনা নিয়ে কথা বলতে বলতে মনে পড়লো বাংলা ট্রিবিউন তাদের সাত বছরে পূর্ণ করলো। এই সাত বছরে তাদের সাফল্যের বিস্তারে না গিয়ে শুধু যদি করোনাকালের কথাই বলি, তাহলে বলতে হবে কোভিড-১৯ নিয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা তারা করেছেন। আড়ালে থাকা বা নজর রাখা উচিত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত এমন অনেক বিষয় তারা পাঠকের সামনে তুলে এনেছেন। কোভিড যে শুধু রাষ্ট্র বা ব্যক্তির একক লড়াই নয়, প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিরোধের, এই নির্যাস রয়েছে বাংলা ট্রিবিউনে। এই নির্যাসটুকু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া জরুরি। তাই শেষে এসেও বলছি– প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে মাঠের আত্মীয়তা বাড়ুক। তাহলে কমবে জনদুর্ভোগ ও ঝুঁকি।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী