১. লকডাউন শিথিল করার সমর্থন:
আজকের লেখা শুরু করছি আমাদের জাতীয় জীবনে এ মুহূর্তের সবচেয়ে বার্নিং কোয়েশ্চন নিয়ে।
এই ভয়াল মহামারির মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতির কথা ভালো জেনেও সরকারের ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই লকডাউন শিথিল করার প্রজ্ঞাপন দেশপ্রেমী জনগণ সমর্থন করে—কী, করে না?
নিঃসন্দেহে অতি কম জানা জনগণ অত কিছু জানুক আর না জানুক, বুঝুক আর না বুঝুক—সে এতটুকু জানে ও এতটুকু বোঝে যে সে নিজে কিছুই জানে না ও কিছুই বোঝে না। সে ‘বিলকুল বেকুব’।
পেটের জ্বালায় যার দিন কাটে তাকে যা বলবেন সে তা-ই বিশ্বাস করবে নীরবে ও নিভৃতে। তবে যতই সে ‘বেকুব’ হোক, যতই তাকে শোষণ-শাসন-নিপীড়ন করেন—সে তার অদ্ভুত এক প্রাণশক্তির ওপরে ভর করে বেঁচে থাকে।
সেই শক্তিকে সে বহু নাম ডাকে—শিবশক্তি, কুণ্ডলিনী, জীবাত্মা, কাহারসিলাবিয়া, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি এবং তার অর্থ না বুঝলেও সে তার আত্মাতে শক্তভাবে ধারণ করে ও তার পবিত্র আত্মার সঙ্গে কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
এই সরল স্বীকারোক্তি জনগণ করছে, কারণ আগামী ২১ জুলাই ২০২১ পবিত্র ঈদ উল আজহা তথা কোরবানি ঈদ। তা পালন করার ক্ষেত্রে যেকোনও বাধা কেউ সহজে মানতে রাজি না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
সরকারের কাছে শাশ্বত বিজ্ঞানের সব তথ্য-উপাত্ত নখদর্পণে থাকা সত্ত্বেও এই ভয়াবহ আত্মঘাতী ঝুঁকি নেওয়াটা ‘সাহসী’ বলা একেবারেই ভুল হবে না।
তবে একটু ক্ষান্ত দিন। আমরা আজ সরকারের সাফাই গাইতে মঞ্চে উঠিনি এবং তেমনটা মনে করা হবে খুবই দুঃখজনক ও অযাচিত।
খেটে-খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দেশের ৮০ শতাংশ জনগণের সম্মুখে কেবল দুটি স্পষ্ট পথ খোলা।
আমরা অনাহারে নাকি ভাইরাসের ছোবল খেয়ে মরবো?
দৃশ্যমান শত্রুর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপ্নে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার বাংলাদেশে—এক অদৃশ্য শত্রু ক’টা প্রাণই বা কেড়ে নিতে পারে? ১-২ লাখ?
না, এই প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশ তো অনেক দূরের কথা—পৃথিবীর কেউ দিতে পারবে না।
আতঙ্কপ্রবণ ‘বাঘ আসছে বাঘ আসছে’ ঘন ঘন বিপদ সংকেত বাজানো ‘মিডিয়ার মানুষ’ আমরা নই ও নিঃসংকোচে স্বীকার করি সরকারের কাছেও এই দুটি অপশনের যেকোনও একটি বাছাই করা ছাড়া আর কি কিছু করার ছিল?
কী করবেন আপনারা যখন ‘বাঘমামা’ আসলেই এসে হাজির হয়েছেন ও গড়ে প্রতিদিন ২০০ মানুষ খাচ্ছেন—এমনকি ঢাকা নামের ‘কংক্রিট জঙ্গল’-এ?
তবে আমরা নিরক্ষর জনগণের ইদানীংকার ‘থিম সং’ ‘আমি বাঘ শিকার যামু/ বন্দুক লইয়া রেডি হইলাম আমি আর মামু’। আমরা লড়াই করতে চাই। অদৃশ্য বাঘকে খতম করতে চাই।
গরিব মরার সময়েও হাসিমুখে গান করতে জানে—যেমনটা সে করেছিল একাত্তরে। যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ‘কান্দে আবার হাসতে জানে’ ছিল জাতির পিতার প্রিয় গান।
এ হলো অত্যন্ত ক্ষারকীয় সমীকরণ—তা রাষ্ট্রচিন্তার মোটা মাথাগুলোকে ঘোলা করে অচেতন করতে বাধ্য।
সরকারের এই দৃঢ় সংকল্প ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বা ‘সাপ মারবো কিন্তু লাঠি ভাঙবে না’ প্রচলিত প্রবাদবাক্যগুলোর সঙ্গে তুলনা করা গেলেও যেতে পারে—তবে সেই তুলনা হবে করোনার মতো নিদারুণ নিষ্ঠুর ও করুণ।
সরকার যে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এক নিগূঢ় বাধ্যবাধকতার মাঝে দিন কাটাচ্ছে তা জনগণ ভালোই উপলব্ধি করে।
একদিকে হতদরিদ্রের ‘ভাত দে ভাত দে’ আর্তচিৎকার অপরদিকে ব্যবসায়ীদের ‘সবকিছু খুলে দে’ বিরামহীন দাবি।
প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রের এই ব্যবসায়ী শ্রেণির লুণ্ঠনের রাজত্বে ১৬ কোটি জনগণকে ‘ভাতে-ডালে’ একবেলাও কি খেয়ে বাঁচিয়ে রাখার সামর্থ্য আছে?
নেই। কারণ, নব্য ব্যবসায়ী শ্রেণি মানবজীবনের চেয়েও মুনাফাকে বেশি তারিফ করে। তাদের কত টাকা আছে তা তারা জানে—কিন্তু কতটা সময় আছে তা জানে না।
তাদের আত্মার ও কলিজার সাইজ খুবই ছোট।
তারা কিছু পারুক আর না পারুক, জনসংখ্যার ১ শতাংশ বা তারও কম হলেও রাষ্ট্রসহ সরকারকে নানাবিধ অজুহাত দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করারও ক্ষমতা রাখে।
এই একরোখা দাম্ভিকতা অথচ তাদের কোনও কিছুরই কমতি নেই।
তারা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কালো টাকা সাফেদ করার আইন পাস করালেও তার নিজের লোভ-লালসা থামানোর আইনে বিশ্বাসী না।
সমগ্র বাংলাদেশ আজ ব্যবসায়ী শ্রেণির খপ্পরে। জনগণের ভাগ্যকে রেখেছে জিম্মি, কেবল তার একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে।
তাদেরই একজনের বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কয়েক ডজন ছোট নিরীহ গরিবের সন্তানদের আগুনে দগ্ধ হয়ে ছাই করে দিলেও তাদের দিলে একটুও রহম আসে না।
বড়জোর কয়েক দিন কারাগারের ‘বিরিয়ানি খাবার শাস্তি’ পেলেও পেতে পারে। তার ক’দিন পর তারই নিজেদের ‘মাজহাব’-এর ভাই-ব্রাদারগণ দ্বারা রাষ্ট্রকে হালকা কুস্তির পটকন দিয়ে, জামিন নিতে পারলেই—আমরা সবাই বিষয়টা সারা জীবনের জন্য ভুলে যাই।
সরকার এই ‘সাহসী’ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে, কারণ গরিবের দুর্দান্ত বেকুবি সাহস যথেষ্ট চিন্তার উপাদান রাখে।
সে গেলো ১৬ মাসে ‘করোনায় আমগো কিসুই হইবো না। হেইডা দাহা শহরের বড় লোকের রুগ’— ধারণা কি নিতান্তই কল্পকাহিনি ছিল?
জেলা শহর গ্রামাঞ্চলে না ছিল করোনার লক্ষণীয় কোনও প্রমাণ, না ছিল সংক্রমণের কোনও ঝুঁকি। তাদের এই সুখ শহুরে বড় লোক শ্রেণি আর সহ্য করতে পারলো না।
গেলো রমজানের ‘খুশির ঈদের’ বাড়িতে ফেরা জনগণ দ্বারা সংক্রমণ ঘটিয়ে, গরিবের কপালে বাড়িটা দিয়ে উপচে-পড়া মহাআনন্দে—‘দিজ ডার্টি পিপল, ল্যাংটা পিপল’দের ‘সো স্যাড বাট কুল’ বাউল সং গাইতে গাইতে ঢাকা ফিরিলো।
২. গরুর “সীমিত পরিসরে” সমাচার:
দু’মাস দশ দিন পর:
‘ওইসব লকডাউন ফকডাউন বুঝি কম। গরু না খাইতে দিলে আমি লীগরে আস্ত খাইয়্যা ফালামু হুম’ হুমকি দিয়ে সেই আগের কাউন্টার ঘুঁটি চাল দিয়া বসলো।
যুক্তি: ‘ম্যান ৪০ লক্ষ টাকার আমেরিকার টেক্সান বুল কি বুলশিট করার জন্য অনলাইন-এ অর্ডার দিয়েছি?’
‘আফ্টার অল আল্লাহর সন্তুষ্টি তো লাভ করতে হবে ভাই’।
হুজুরগণ পেছন থেকে ‘খতরনাক রুহানি’ চেহারায় তর্জনী ঝাঁকিয়ে এন্ডোর্সমেন্ট দিলেন—“হুমম কথা ঠিক না?— ঠিক ঠিক ঠিক”—জবর জবর তিন বড়!
এ মতো অবস্থায় আপনারাই বলুন আনস্মার্ট জনগণ কী করবে, বা তার কী করার আছে?
‘জাস্ট গিভ ডেম অ্যা লট অফ গরুর গোশত। ডিজ পুওর পিপল নিড প্রোটিন’।
ঈদের দিন গরিব দুই টুকরো মাংস পাবে তাতেই সে মহাখুশি।
আর ‘গরুর রচনা’? থাক...
৩. আত্মরক্ষার কৌশলের প্রতুলতা ও শত্রুর অনুপ্রবেশ:
জীবনে দুটো যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে।
তবে যেকোনও যুদ্ধে ‘সিভিল ডিফেন্স’ বা বেসামরিক আত্মরক্ষার বহু কৌশল রাষ্ট্র জনগণকে শিক্ষায় শিক্ষিত কেবল করে না—তা মানতে বাধ্য করা হয়।
করোনা নিঃসন্দেহে একটা যুদ্ধ এবং বলতে একটুও দ্বিধা নেই যে তা ‘অঘোষিত তৃতীয় মহাযুদ্ধ’।
যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—শত্রুর মূল অস্ত্র মিথ্যাকে সত্য বানানো ও সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে আপনাদের কনভিন্স করা।
গোয়েবেল কেবল হিটলারের প্রোপাগান্ডা মন্ত্রীর নাম ছিল না। সে ছিল তথ্য দ্বারা সত্য গোপন করার এক ‘জীবন্ত সত্তার’ নাম।
মস্তিষ্ক ধোলাইয়ের কিংবদন্তি।
সেই সত্তা আজ ফাইন টিউনড হয়ে তথাকথিত ‘আলোকন ও বিশ্বায়ন’-এর যুগে আমাদের গোলকধাঁধার চক্করের ফাঁদে ফেলে মানবমস্তিষ্ক দংশন করতে হাজির হয়েছে আমাদের দ্বারপ্রান্তে এবং এসেছে রঙ-বেরঙের ছদ্মবেশে।
আমরা আমাদের বেকুবিতে তাকে নির্দ্বিধায় অনুপ্রবেশ অধিকার দিয়েছি বৈঠকখানা থেকে শয়নকক্ষ হয়ে শৌচাগার অবধি ।
বাপদাদা, মুরুব্বিরা এ কি জিনিস তা বোঝানোর জন্য একটা ইংরেজি সংজ্ঞা ব্যবহার করতো ‘ইডিয়ট বাক্স’ বা ‘বেআক্কেলের ভাণ্ড’।
ওটা আবার কী?
‘আক্কেলমান-এর জন্য ইশারাই যথেষ্ট’– বাকিটা আক্কেল খাটিয়ে বুঝে নিন।
এরপর যা লিখবো তা হবে সান্ধ্য ভাষায় —যারা “বুঝতে” চান বুঝে নিয়েন নিজগুণে।
মহামারি যুদ্ধে যেসব আত্মরক্ষার কৌশল ইদানীং শেখানো হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল এবং আমাদের জনগণকে বিন্দুমাত্র নিরাপদ কোনোভাবেই রাখতে পারে না।
আসুন একেকটা করে আলাপ করা যাক:
– হাত ধৌতকরণ বা স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিয়ে কোথাও কোনও উচ্চবাচ্য আর তেমন নেই। তা বাতিলের খাতায় চলে গেছে। কেন?
তা আপনারা না জানলেও একটা শক্ত যুক্তির কাছে বেদম পিটুনি খেয়ে সে ভেগে গেছে।
জনগণের এক বিলকুল বেকুব বলে বসলো:
‘এমনি এক ভাইরাস যা দুই ডোজ ভ্যাকসিন দিলেও মরে না কিন্তু সাবান দিয়ে দুই হাতে ডলা দিলেই সে মরে যায়... বেচারা।’
বিষয়টা মোটেও অদ্ভুত না— এ বহুজাতিক বেনিয়া প্রসাধনী কোম্পানিগুলোকে ৯৯.৯ পার্সেন্ট “অদ্ভুত ভূত” বাঁচানোর ধান্দা।
– ‘মাস্ক মাস্ক আর মাস্ক’–কেবল বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে তেমন সিরিয়াস পাত্তা পাচ্ছে না। পাবে না তার কারণ?
করোনা বায়ুবাহিত ভাইরাস তেমন কনফারমেশন পাওয়া যাচ্ছে না।
– সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্ব—সেটা কোথাও কোনও দেশে ১০০ ভাগ কার্যকর করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ‘ধরার উপরে সরার’ জ্ঞানের ফ্লপ।
– ভ্যাকসিন? বাংলাদেশের ১ কোটি মানুষের দেহে এ অবধি কী দেওয়া হয়েছে?
যদি ৫ বছরেও সমগ্র দেশে দেওয়া হয় তাহলে এই মধ্যবর্তী সময়ে মানুষ কি মরতেই থাকবে?
কতজন মারা যাবে তা কি হানড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে কেউ বলতে পারবেন?
৪. সুশক্তি বনাম কুশক্তি:
এই মহামারি যুদ্ধ হচ্ছে এনার্জি বা শক্তির খেলা।
খেয়াল করবেন শুধু পজিটিভ (ইতিবাচক) আর নেগেটিভ (নেতিবাচক) নিয়ে হই-হুল্লোড় অথচ নিউট্রাল (অনির্ণেয়) নিয়ে কোনও শব্দ নেই।
পশ্চিমা বিজ্ঞান মানবদেহের শক্তিকে সর্বদা ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে তুচ্ছ করে এসেছে।
তবে সত্যটা হলো মানবদেহের প্রাকৃতিক শক্তির বা এনার্জির কাছে মানবসৃষ্ট অপ্রাকৃতিক শক্তির কোনও তুলনাই চলে না।
খেলাটা হচ্ছে মানুষ যখন আনন্দ-উল্লাস, হাসিঠাট্টা, বিনোদন বা মন ভালো থাকার কোনও কর্ম করে– তার সমগ্র দেহে অর্থাৎ মূলাধার হতে ব্রহ্মরন্ধ্র বা ‘সুলতান আধিকর’ অবধি নিরবচ্ছিন্ন ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হতে থাকে।
এই শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে এর দ্বারা অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করা সম্ভব।
অপরদিকে অশান্তি, ক্ষোভ, রাগ, অনিশ্চয়তা, দুঃখ, শোক, ব্যথা বেদনা ইত্যাদি বিপরীত গতিতে প্রবাহিত হতে থাকলে তাকে বলা হয় নেগেটিভ বা নেতিবাচক শক্তি।
যেসব মানুষ এই দুই ধরনের অল্টারনেটিভ ফিলিংস, মুড সুইং বা অনুকল্প অনুভূতি দ্রুত দমন করে স্বাভাবিক হতে পারে– তাদের বলা হয় নিউট্রাল বা অনির্ণেয়, ইকুইলিব্রিয়াম বা সুস্থিতি।
এখন খেলাটার সূত্রপাত হয়: কোনটা পজিটিভ আর কোনটা নেগেটিভ তা নিয়ে ইচ্ছাকৃত দিকভ্রান্ত করে সবার মাথায় গড় বড় বাঁধিয়ে দেওয়া।
যে মুহূর্তে আপনি চিন্তা করা শুরু করবেন ‘আমাকে কি করোনা ধরলো’ ঠিক সেই মুহূর্তে এই ভয়াল নেগেটিভ শক্তি আপনাকে ওভারটেক করে গ্রাস করবে।
কিছু সময়ের ভেতরেই আপনি যা চিন্তা করবেন। আবার বলছি আপনি যা চিন্তা করবেন ঠিক তা-ই ঘটবে।
আপনার দেহের প্রতিটি কোষে, প্রতিটি ডিএনএ-তে ওই একই সিগন্যাল প্রতিলিপিত হতে থাকবে।
যে মুহূর্তে আপনি সর্বত্র জানান দেবেন ‘আমি কোভিড পজিটিভ’, আপনি শত্রুকে সিগন্যাল দিচ্ছেন সে ‘পজিটিভলি জিতেছে’।
খেয়াল করুন এই ভয়াবহ সময়ে যখন টোকিও অলিম্পিক হাজার রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে অথচ “ইউরো কাপ” জুয়াখেলা কোন যুক্তিতে এতটা ‘খুল্লমখুল্লা’ স্টাইল-এ অনুষ্ঠিত হলো?
তার ফলশ্রুতিতে সমগ্র ইউরোপ আবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের খপ্পরে পড়েছে।
ঠিক একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফুটবল নিয়ে রামদা, লাঠিসোঁটা মারামারির খবর আন্তর্জাতিক হেডলাইন নিয়ে যারা খুব খুশি হয়েছিলেন– ক’দিন অপেক্ষা করুন বুঝতে পারবেন।
৫. শারীরিক দূরত্ব কার্যকরীভাবে কত ফিট?:
শারীরিক দূরত্ব পাক্কা ৩ ফিট থেকে ৬ ফিট হতে হবে। ২ ফিট বা ৯ ফিট-এ কেন নয়? এই প্রশ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কেউ কি করেছে?
এই ফাঁকটা সৃষ্টি করা হয়েছে করোনাকে বীরদর্পে ঢুকে তার ‘টার্গেট সিলেকশন’-এর কাজ সহজে ও অনায়াসে সহায়তা করার লক্ষ্যে।
পজিটিভ যোগ পজিটিভ যেমন সব সময় পজিটিভ হয় না, নেগেটিভ যোগ নেগেটিভও সব সময় নেগেটিভ হয় না।
যখন একাধিক পজিটিভের ঘাড়ে ১০ গুণ নেগেটিভ বাঁদরঝাঁপ দেয় ঠিক তখনই ফলস নেগেটিভের মতো ফলস পজিটিভের আগমন ঘটে।
যারা নেগেটিভ বা পজিটিভ অনুভূতি দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে না। খেয়াল করে দেখবেন তারা কখনোই কোভিড-এ আক্রান্ত হন না।
একি মানুষজনের গাদাগাদি করে হাঁটাচলা ও বসার কারণে, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং?
না, তা মোটেও নয়।
আনন্দ-উল্লাসরত খেলা বা কনসার্টের দর্শক, হাটবাজার, শপিং মল ইত্যাদির ভিড়ে করোনা প্রবেশ করতে পারে না কারণ এত পজিটিভ এনার্জির ভেতরে প্রবেশ করা ইম্পসিবল।
কিন্তু ঠিক যে মুহূর্তে খেলার হারজিত নিয়ে অনুভূতিগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে, সুস্থিতি বিনষ্ট হয়ে ‘মাথা গরম করে পাগল’ মারামারি শুরু হয়—ঠিক তখনই করোনা দেহে না—মস্তিষ্কের উপরে বাঁদরঝাঁপ শুরু করে দেয়।
৬. বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করি?
ধরুন, আপনাদের বাম হাত যদি হয় নেগেটিভ আর ডান হাত হয় পজিটিভ তাহলে নিউট্রাল কোথায়? সহজ উত্তর মস্তিষ্ক- তাই তো? মস্তিষ্ক কি কেবল সাদা বা কালো রঙ চেনে নাকি রংধনুর শত রঙ চেনে?
মূক, বধির বা অন্ধেরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। সে রকম খবর কি আছে? না থাকারই কথা।
প্রাচীন গানে বলা হয়েছে:
“হায় রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ—এ-জীবন জ্বইলা পুইড়া শেষ তো হইলো না”...
উপসংহার: করোনা নিয়ে চোখে যত কম দেখবেন, মুখে যত কম বলবেন, ততই মঙ্গল।
৭. দোহাই লাগে:
শেষ করছি আমার প্রিয় বন্ধু অনিক খান-এর ২০০৬-তে রচিত ছড়া দিয়ে। তার বয়স তখন ছিল ২২:
দোহাই লাগে দু-চোখ খুলে দেখুন আশেপাশে
দেশপ্রেমিকের বেশে কারা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে?
সুদূর থেকে আসছে শুনুন নানান রঙের মন্ত্র —
বৃদ্ধ শকুন-হায়েনারা করছে ষড়যন্ত্র!
বাংলাদেশের তরুণ— লাল-সবুজের পতাকাটা শক্ত করে ধরুন।
জি হুজুরের মার্কা গায়ে কেমন করে সাঁটি?
রক্ত দিয়ে কেনা আমার বাংলাদেশের মাটি।
সেই মাটিরই আমরা ফসল নোংরা শেকড়-বাকড় না,
মুখের ওপর বলতে শিখুন— আমরা কারো চাকর না!
বাংলাদেশের তরুণ —দুঃসাহসের বারুদ দিয়ে মস্তিষ্ক ভরুন।
আর কতকাল আর কতদিন থাকবে মাথা নিচু?
আর কতদূর হাঁটতে হবে আপসগুলোর পিছু?
নতুন মগজ, নতুন পেশী, নতুন দিনের ঢেউ...
তুলতে পারে এমন তুফান নেই কি কোথাও কেউ?
বাংলাদেশের তরুণ—দোহাই লাগে, একটা কিছু করুন।
শেষ কথা: ‘নিজের মস্তিষ্ক কারও কাছে স্বেচ্ছায় ইজারা দেবো না’—এ হোক এবারের কোরবানির আমাদের দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা।
লড়াই চালিয়ে যান। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
লেখক: সংগীতশিল্পী