বিশ্ব বরেণ্য আলেম মুফতি তকি উসমানি তার বক্তৃতা সংকলন "ইসলাহি খুতুবাত" বইয়ে জুমাতুল বিদা নিয়ে বলেন, রমজানের সর্বশেষ জুমাটি বিশেষভাবে এই কারণেই অধিক তাৎপর্যপূর্ণ যে, এই বছরে এই দিনটি আর পুনরায় ফিরে আসবে না। রমজান মাসে আমরা চার পাঁচটা জুমা পেয়ে থাকি। তন্মধ্যে একটা সর্বশেষ জুমা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অনুগ্রহ করে এই নেয়ামত দান করেছেন। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের হায়াতকে দীর্ঘায়িত করেন তাহলে হয়তো আগামী বছর পুনরায় এই নিয়ামত প্রাপ্ত হবো। এজন্যে মহান এই নিয়ামত হাত থেকে চলে যাচ্ছে যখন, তখন বিশেষভাবে তার কদর করা উচিত।
এই বিবেচনায় যত বেশি সম্ভব আমলের মাধ্যমে এই জুমাকে সাফল্যময় করে তোলা ঈমানের দাবি। মূলত জুমাতুল বিদার এটাই মূল মর্ম। অন্যথায় ইসলামের জুমাতুল বিদা নামে কোনও অনুষ্ঠান নেই। জুমাতুল বিদা নামে বিশেষ কোনও আমল এবং ইবাদতও নেই। তবে যখন রমজানের শেষ জুমাটি এসে উপস্থিত হয় তখন মানুষের মনে দুই ধরনের চেতনা নাড়া দিয়ে ওঠে। মুমিনের মনে এই চেতনা এবং আবেদন অবশ্যই সৃষ্টি হওয়া উচিত যে এটা আমাদের জন্য একটা আনন্দের এবং কৃতজ্ঞতার বিষয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আমাদেরকে এই বরকতময় মাস দান করেছেন। এই মাসে রোজা রাখার তৌফিক দিয়েছেন। তৌফিক দিয়েছেন তারাবি পড়ার, কোরআন তেলাওয়াত করার।
এটা শুকরিয়ার বিষয় এবং আনন্দের বিষয়। আল্লাহ তায়ালার এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবো আমরা ততই সামান্য। কারণ আমরা তো জানি না আল্লাহ তায়ালা কত বান্দা এমন আছেন যারা গত বছর আমাদের সাথে রোজা এবং তারাবিতে শরিক ছিলেন অথচ এ বছর তারা শায়িত আছেন মাটির নিচে। যারা আমাদেরকে ছেড়ে পরকালে বাসিন্দা হয়েছেন। তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় রমজানের একটি মুহূর্তের মূল্যের কত? তখন তারা গভীর আক্ষেপের সাথে কথা বলবে, এখন যদি রমজানের কয়েকটি মুহূর্ত ফিরে পেতাম, তাহলে নিজের আমলনামায় কিছু সঞ্চয় করতে পারতাম। কিন্তু তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে আমাদের রমজানের এই বরকতপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে দান করেছেন। এটা একান্তই তারই অনুগ্রহ। (ইসলাহি খুতুবাত, নির্বাচিত বয়ান খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে রমজান মাসের প্রতিটি আমল যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন। আমাদের নামাজ, রোজা, তারাবি ইফতার ও সেহরিসহ প্রত্যেকটি নেক আমল কবুল করেন।
লেখক: খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা। প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানী (মাদ্রাসা)।