কাষ্ঠহাসি দিয়ে বলেছে- ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন। পুলিশ আসলে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই অবস্থান নিয়েছিল, গণমাধ্যম বিষয়টি বাঁকাভাবে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু গণমাধ্যম যখন নাছোড়বান্দা তখন ক্লোজড, প্রত্যাহার কৌশল নিতে দেখা গেছে। অল্প বিরতিতেই দেখা গেছে অভিযুক্ত পুলিশকে তিনি যত নিচু বা বড় পদেরই হোন, তাকে পুরস্কৃত করে পদায়ন করা হয়েছে।
সোহাগে সেই উচ্ছৃঙ্খলতা আরও চরমে গিয়ে পৌঁছায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকার বা রাষ্ট্রের শাসনের আয়ত্মের বাইরে চলে যায় তারা। কারণ সরকার তাকে কি অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, সেটা তার জানা। কেবল যে ব্যক্তিগতভাবে সে একা ব্যবহৃত হয়েছে, তা নয়। ব্যবহার করা হয় গোটা পুলিশ বিভাগকেই। তাই প্রশ্রয়ের সুযোগও ব্যক্তি একা নয়, সামষ্ঠিকভাবে পুলিশ বিভাগই নিতে চায়, নেয়ও।
কোনও রাজনৈতিক দল নৈতিকভাবে ওই অবস্থানে নেই যে বলতে পারবে- তারা পুলিশকে ব্যবহার করেননি। ব্যবহারের বিনিময় মূল্য দিতে হয়। সব সরকারকে তা দিতেও হয়েছে,হচ্ছে। বর্তমান সরকারও এর বাইরে থাকতে পারেনি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে দমনে তারা পুলিশকে ব্যবহার করেছে। এ প্রক্রিয়ায় পুলিশ যখন সীমা অতিক্রম করেছে, তখন সরকার সাফাই গেয়েছে পুলিশের পক্ষে। প্রশ্রয়ের মধ্যে স্পষ্ট ছিল বাহবা। পুলিশের দলীয় বা রাজনীতিকরণ নতুন নয়। সেই পুরাতন কাণ্ডটি এবারও ঘটেছে। সঙ্গে আছে অঞ্চলভিত্তিক মেরুকরণ।
সবমিলিয়ে পুলিশের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের রাজা’ অনুভূতি জাগ্রত হয়। এই রাজা আবার খেয়ালি রাজা। তার যখন যা খুশি করতে মন চায় তাই করে ফেলে।
তাদের যা খুশি তাইতে বিপন্ন হয় সাধারণ মানুষ। মানুষের বিপন্নতাকে বিচ্ছিন্নতা বলা হচ্ছে। পুলিশ গ্রেফতার বাণিজ্য করবে, পুলিশ মুক্তিপন বাণিজ্য করবে তাকে ব্র্যান্ডিং করবে রাষ্ট্র, সরকার। একের পর এক জনবিরুদ্ধ কাজ করার পরেও সরকার, রাষ্ট্র্রের কাছ থেকে সাধুবাদই এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী নিগৃহিত হবার পর পুলিশ বিভাগকে অস্বস্তি বা লজ্জিত হতে দেখা যায়নি। বরং উর্দির কলার উচিয়ে তাদের অহং প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের অহং যে আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই, সে কথা জানিয়ে রেখেছে মাঠের প্রশাসন।
কিন্তু তাতে মোটেও আদর কমেনি পুলিশের। তাই কমেনি বেহায়াপনাও। তারা চাঁদাবাজ নির্মূলের বদলে, নিজেরাই নেমে পড়েন চাঁদা তুলতে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায়, আগুনে পোড়াতেও তাদের বুক কাঁপে না। মিরপুরের শাহ-আলী থানা এলাকাতে চা দোকানদার বাবুলকে প্রাণ দিতে হয়েছে পুলিশের প্রতিহিংসার আগুনেই। যথারীতি সাময়িক শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে ক্লোজড-প্রত্যাহার পর্ব চলছে এখন। পাশাপাশি রাষ্ট্র, সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রচারণাও চলছে- পুলিশের ইমেজ বেড়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এই প্রচারণাকে দেখতে চায়- অবাধ্য সন্তান পরিচয়ে ইমেজ বাড়ার দৃষ্টিতে।
সরকারের উন্নয়ন মনস্কতা নিয়ে জন-মানুষের মাঝে সংশয় নেই। বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা, স্বচ্ছলতা। সাধারণ মানুষ চায় এই স্বচ্ছলতা ও উন্নয়নকে উপভোগ করতে। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র কাঠামোর যে অতি আদুরে অংশ রয়েছে। তাদের বখাটেপনা সেই আনন্দ উপভোগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশের সাম্প্রতিক আচরণ তার প্রমাণ। সরকার যদি তার আদুরে বিভাগকে সামালে না রাখে, তাহলে তার সব উন্নয়ন আয়োজন রসাতলে যাবে। সরকার তাই দুষ্টের দমনে এখনই উদ্দোগী হতে হবে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি