ব্রিটিশ রাজনীতি‌তে বাংলা‌দেশিদের পেছা‌নোর নেপ‌থ্যে বিভ‌ক্তি

ব্রিটে‌নে নির্বাচন আসন্ন। দেশ‌টি‌তে এখন ১৫ লক্ষা‌ধিক বাংলা‌দেশির বাস। লেবার-কনজারভে‌টিভ বড় দুই দ‌লের মে‌নি‌ফে‌স্টোতে,‌ সাম‌গ্রিক ভোট ব্যাংকের হি‌সাব- নি‌কাশ, সমীকরণে কোথাও বাংলা‌দেশিরা নেই। কোনোদিন ছিলও না। ব্রিটে‌নে বাংলা‌দেশ বি‌শেষত ‘সি‌লেটি মানু‌ষে’র গড়ে ওঠা ক‌মিউনিটির একশ‘ বছর পে‌রি‌য়ে‌ছে। ভারতীয়সহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ও দেশ‌টি‌তে বসবাসরত অন্য অনেক অ্যাথ‌নিক মাইনোরি‌টি কমিউনিটির তুলনায় দেশটিতে শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতির মূলধারা, এমনকি স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশিরা। তবে ব্রিটে‌নে সাম্প্রতিক বছরগু‌লো‌তে স্কুল-ক‌লেজ থে‌কে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গ‌বেষণায় সাফ‌ল্যের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশিরা। ব্রিটে‌নে স্বাস্থ‌্য, শিক্ষা, রে‌স্তোরাঁ, জনপ‌রিবহন সেক্ট‌রে সুনা‌মের সঙ্গে কাজ কর‌ছেন ক‌য়েক লাখ বাংলা‌দেশি‌। ব্রিটে‌নের ছোট-বড় এলাকাগু‌লো‌তে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ আগের চে‌য়ে বে‌ড়ে‌ছে ব্রিটিশ রাজনী‌তির মূলস্রো‌তে।

ব্রিটে‌নে সি‌লে‌টের হাজার হাজার প‌রিবা‌রের চতুর্থ প্রজন্ম চল‌ছে। ব্রিটে‌নের সংস‌দের হাউজ অব কম‌ন্সেই কেবল সংসদীয় আসন ৬০০‌টি। তার ম‌ধ্যে বাংলা‌দেশি এম‌পি মাত্র চার জন। চতুর্থ প্রজ‌ন্মের প্রবাসীদের অন্তত চার-তৃতীয়াংশ সি‌লে‌টের। অথচ ব্রিটে‌নের সংস‌দে বৃহত্তর সি‌লেট থে‌কে উঠে আসা এম‌পি মাত্র দুজন।

বাংলা‌দেশি বং‌শোদ্ভূত চার এম‌পির সবাই লেবার পা‌র্টির। সবাই নারী। এ দে‌শের রাজনী‌তি‌তে আমা‌দের নারী‌দের সাফল‌্য বে‌শি। বর্তমান এম‌পির চার জনই দ্বিতীয় প্রজ‌ন্মের ব্রিটিশ বাংলা‌দেশি।

দেশটা‌তে বাংলাদেশি‌দের শতব‌র্ষের প্রতি‌ষ্ঠিত ক‌মি‌উনি‌টি। ভ‌ারতীয় পা‌কিস্তানিদের বাসও শতব‌র্ষের। ব্রিটিশ পা‌কিস্তানি‌রা ব্রিটে‌নের মন্ত্রিসভায় গে‌ছেন। লন্ড‌নে বারবার নির্বা‌চিত মেয়র সা‌দিক খানও পা‌কিস্তানি বং‌শোদ্ভূত। ব্রিটে‌নের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় ব্রিটিশ। ব্রিটে‌নের বর্তমান সংস‌দে ভারতীয় বং‌শোদ্ভূত এম‌পি ১৫ জন। চল‌তি সরকা‌রের সংস‌দে ব্রিটিশ ভ‌ারতীয় মন্ত্রী ছি‌লেন তিন জন। লেবার পা‌র্টি ক্ষমতায় গে‌লে এ সংখ‌্যা আ‌রও বাড়‌বে।

দুই.

ব্রিটিশ বাংলাদেশি‌রা এখনও ব্রিটে‌নের বু‌কে একজন মন্ত্রীও পায়নি। পূর্ব লন্ড‌নের দু‌টি আসন ছাড়া ব্রিটে‌নের নী‌তিনির্ধারক‌দের কা‌ছে বাংলা‌দেশি‌দের ভো‌টের ফলাফ‌লের বিচা‌রে দে‌শের আর কোনও জায়গায় অবস্থান নেই। ‌ব্রিটে‌নে এম‌পি মন্ত্রী হওয়ার ম‌তো, মূলধারায় যাওয়ার ম‌তো যোগ‌্য নেতৃত্ব শতবর্ষী বাংলা‌দেশি ক‌মিউনি‌টি গ‌ড়ে তুল‌তে পা‌রেনি পূর্ববর্তী প্রজ‌ন্মের দূরদর্শিতার অভাব, বর্তমান প্রজ‌ন্মের ইগো আর ঈর্ষাজ‌নিত বি‌রোধিতার কার‌ণে।

আসন্ন নির্বাচ‌নে স্বতন্ত্র তো দূরের কথা, শুধু লেবা‌রের টি‌কিট ছাড়া, কনজার‌ভে‌টিভ বা অন‌্য কোনও দল থে‌কে নির্বাচ‌নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক‌রে জি‌তে আসার ম‌তো একজন ব্রিটিশ বাংলা‌দেশি এম‌পি প্রার্থীও সারা দেশে নেই। এবার লেবার পা‌র্টি ক্ষমতায় গে‌লে বাংলাদেশি বং‌শোদ্ভূত‌দের ম‌ধ্যে মন্ত্রিত্বের লড়াই‌য়ে চারবারের বর্তমান এম‌পি রোশনারা আলী ও তিনবা‌রের এম‌পি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দী‌কের ম‌ধ্যে অন্তত একজন ব্রিটে‌নের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা র‌য়ে‌ছে।

ব্রিটে‌নে যে‌কোনও দল থে‌কে একজন ভারতীয় বা পা‌কিস্তানি বং‌শোদ্ভূত প্রার্থী হ‌লে শ্রম অর্থ দি‌য়ে তার দে‌শের স্থানীয় বা‌সিন্দারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণায় এগিয়ে আসেন। তখন তারা নিজ নিজ দে‌শে কে কোন দল ক‌রেন, কে কোন ধ‌র্মের বিশ্বাসী সেসব ইস‌্যু তু‌লে বিভা‌জিত হন না, ছড়ান না বিভ‌ক্তি নিজেদের ক‌মিউন‌ি‌টি‌তে।

কিন্তু আমা‌দের লজ্জার সঙ্গে স্বীকার ক‌র‌তে হ‌বে, ব্রিটে‌নের রাজনী‌তি‌তে বাংলা‌দেশি‌দের এগিয়ে যাওয়ার প‌থে প্রধান অন্তরায় বাংলা‌দেশিরাই। বাংলা‌দেশি কেউ একজন হাউজ অব কমন্স বা হাউজ অব পার্লা‌মে‌ন্টে যাওয়ার সু‌যোগ সৃ‌ষ্টি হ‌লে তা‌কে আটকা‌তে ভিনদেশি প্রার্থীর পক্ষে প্রকা‌শ্যে প্রচারণা, প্রার্থীর ব‌্যক্তিগত, পারিবা‌রিক জীবন নি‌য়ে কুৎসা রটা‌নো, লিখিত অভিযোগের কদর্যতা থে‌কে ১৫ লাখ মান‌ু‌ষের কমিউনি‌টির সামা‌জিক রাজ‌নৈ‌তিক নেতৃত্ব দি‌তে চাওয়া মানুষরা বে‌রি‌য়ে আস‌তে পা‌রেননি। দে‌শের কাউকে এগিয়ে দেওয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকা কা‌রও পেছনে টে‌নে ধরার চর্চায় সাধারণ মানুষ হতাশ।

রোশনারা আলী‌কে প্রতি‌টি নির্বাচ‌নে কেবল বিরোধিতার জন‌্য বি‌রোধিতা কর‌তে আসা কিছু বাংলাদেশি‌ প্রার্থী‌র মু‌খোমু‌খি হতে হ‌য়ে‌ছে। পাস ফে‌লের ভো‌টের রে‌সে ধর্মকে হা‌তিয়ার বানানোর চেষ্টা ক‌রে এক‌টি পক্ষ।

আফসানা বেগম দুবা‌রই যা‌তে লেবার পার্টির দলীয় ম‌নোনয়ন না পান তার জন‌্য সব‌চে‌য়ে বেশি প্রকা‌শ্যে স‌ক্রিয় ছি‌লেন তার সংসদীয় আ‌সনের তার নিজ দ‌লের কিছু ব্রিটিশ বাংলা‌দেশিরাই। টিউলিপ সি‌দ্দী‌কের বিগত নির্বাচনগু‌লো‌তে আমরা ল‌জ্জিত চো‌খে দেখলাম বিএন‌পির যুক্তরাজ‌্য ক‌মিটির নেতাকর্মীদের দ‌লে দলে শুধু বি‌রোধিতা করার জন‌্য তার প্রতিপক্ষ কনজার‌ভে‌টিভ পা‌র্টির প্রার্থীর প‌ক্ষে প্রচারণা চালা‌তে।

টাওয়ার হ‌্যাম‌লেট‌সের বাইরে লন্ডনের ক‌্যাম‌ডে‌নে, লন্ড‌নের বাইরে ওল্ডহাম ও বা‌র্মিংহা‌মে বিপুল সংখ‌্যক বাংলা‌দেশি বসবাস ক‌রেন। এসব আস‌নে নিজ দে‌শের হাজার হাজার স‌চেতন ভোটার থাকায় বহু আগেই বাংলাদেশি বং‌শোদ্ভূত এম‌পি নির্বা‌চিত হওয়ার সুযোগ ছিল। সে‌টি হয়‌নি, কেবল বাংলা‌দেশি ক‌মিউনিটির ঐক‌্যবদ্ধতার অভা‌বে। সামা‌জিকভা‌বে নতুন প্রজ‌ন্ম‌কে রাজনীতি‌তে উৎসাহ দেওয়ার চে‌য়ে কৌশ‌লে নিরুৎসা‌হিত করার নে‌তিবাচক প্রবণতার অভিযোগ ক‌রেন তরুণরা।

বি‌দে‌শে বহু বছর বসবাস ক‌রেও দেশীয় রাজনী‌তির জন‌্য বি‌রোধিতার অপচর্চা, কোনও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস‌্যুতেই ঐক‌্যবদ্ধ হ‌তে না পারা; ব্রিটে‌নের মূলধারার রাজনী‌তি‌তে বাংলা‌দেশিদের পি‌ছি‌য়ে রে‌খে‌ছে। এ দেশে স্থানীয় সরকারের কাউন্সিলর নির্বাচনগু‌লো‌তেও দে‌শের গ্রাম, ইউনিয়ন পর্যা‌য়ের আঞ্চ‌লিকতার জন‌্য সমর্থন ও বি‌রোধিতার সংস্কৃ‌তি থে‌কে আমরা ‌যত‌দিন বের হ‌তে পারবো না, তত‌দিন মূলধার‌ার রাজনী‌তি‌তে অপেক্ষাকৃত যোগ্য মানুষকে স্থান নিতে পার‌বেন না।

আশার কথা, নি‌জের নাক কে‌টে অন্যের যাত্রা ভ‌ঙ্গের এই নে‌তিবাচকতার ম‌ধ্যেও ব্রিটে‌নের মূলধারার রাজনী‌তি‌তে, কাউন্সিলরসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে বাংলা‌দেশি নতুন প্রজ‌ন্মের অংশগ্রহণ আগের চে‌য়ে বে‌ড়ে‌ছে। ‌চল‌তি বছর কোনও দ‌লের সমর্থন ছাড়া স্বতন্ত্র নির্বাচন ক‌রে মাত্র ১৯ বছর বয়সে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে চমক দে‌খিয়ে‌ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইসমাইল উদ্দীন। বে‌ড়ে‌ছে বিনা ভো‌টে কাউন্সিলগু‌লো‌তে মেয়র প‌দে বাংলা‌দেশি‌দের অংশগ্রহণ। তারপরও, সাধ‌ারণ নির্বাচ‌নে বড় দ‌লের প্রার্থী হ‌য়ে বাংলা‌দেশি‌দের অংশগ্রহ‌ণের হার ভারতীয় ও পা‌কিস্তানি‌দের তুলনায় অনেক কম।

সংক‌টের বড় জায়গা‌টি হলো– এ দেশে রাজনী‌তির ময়দা‌নে অনুকরণীয়, আইডল হি‌সে‌বে দৃষ্টান্ত হওয়ার ম‌তো, নতুন প্রজন্ম‌কে উদাহরণ দেওয়ার ম‌তো বাংলা‌দেশি ক‌মিউনি‌টি‌তে সব মহ‌লের গ্রহণযোগ‌্য রাজ‌নৈ‌তিক নেতৃত্ব গ‌ড়ে ওঠেনি। যেটি অন‌্য অনেক অ্যাথনিক মাইনোরি‌টি ক‌মিউনিটি‌তে আছে। ভো‌টের মৌসুম ছাড়া নি‌জে‌কে বাংলাদেশি ক‌মিউনি‌টির গ‌র্বিত প্রতি‌নি‌ধি হি‌সে‌বে প‌রিচয় দেন, ক‌মিউনি‌টির মানু‌ষের বিপ‌দে পা‌শে দাঁড়া‌ন, যা‌কে দে‌খে উজ্জী‌বিত হয়ে নতুন প্রজন্ম ব্রিটে‌নের মূলধারার রাজনী‌তি‌তে ক‌্যা‌রিয়ার গড়‌তে আস‌বে, সেই জায়গা‌টি‌তে বিশাল শূন‌্যত‌া র‌য়ে গে‌ছে।

বাঙালিপাড়ার মেয়র লুৎফুর রহমা‌ন টাওয়ার হ‌্যাম‌লেট‌সে মেয়র ও কাউন্সিলর প‌দে ভোট রাজনী‌তির ম‌্যা‌জি‌শিয়ান। তা‌কে ঘি‌রে বিত‌র্ক ছিল, আছে। পাশাপা‌শি ক‌্যা‌রিশমে‌টিক একজন রাজনী‌তি‌বিদ হি‌সেবে তাঁর অন্তত এম‌পি হওয়ার সম্ভাব‌্যতা ছিল। সাধারণ ভোটার‌দের ধ‌রে রাখার কৌশল টাওয়ার হ‌্যাম‌লেট‌সে তার চে‌য়ে বে‌শি কেউ জা‌নে না।

ব্রিটেনে বাংলা‌দেশি কমিউনিটির কার্যক্রমগু‌লো‌তে সব‌চে‌য়ে সময় দেওয়া সা‌বেক ডেপু‌টি মেয়র অহিদ আহমদ অতী‌তে মেয়র প‌দে নির্বাচন ক‌রে‌ছেন, ক‌য়েক দশক আগে লেবার পা‌র্টি থে‌কে এম‌পির ন‌মি‌নেশনও পে‌য়ে‌ছি‌লেন।

আশি ও নব্বই দশ‌কের দু‌টি সাধারণ নির্বাচ‌নে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও বো আসনে এমপি প‌দে লেবার পা‌র্টির ম‌নোনয়‌নের জন‌্য শর্টলিস্টেড ছিলেন চার বাংলা‌দেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। তারা হলেন প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর রাজন উদ্দীন জালাল, পলা ম‌ঞ্জিলা উদ্দিন ও কুমার মু‌র্শিদ। দুবারই শর্টলিস্ট থে‌কে বাদ পড়েন প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম ও কাউন্সিলর রাজন উদ্দিন জালাল। ব্রিটে‌নে বাংলাদেশি ক‌মিউনি‌টির পুরুষ অনেক সম্ভাবনাময় রাজনী‌তি‌বিদ হা‌রি‌য়ে গে‌ছেন দলীয় মনোনয়ন না পে‌য়ে দল ত‌্যাগ, দলীয় সিদ্ধা‌ন্তের বি‌রোধিতা, বিপক্ষ দ‌লের প্রার্থী‌কে সমর্থন ও বারব‌ার দলবদল ক‌রে।

রোশনারা আলী বাঙালিপাড়ার এম‌পি হ‌লেও চারবার লেবা‌রের ভোট ব‌্যাংকের নিরাপদ সি‌টে এম‌পি হ‌য়ে‌ছেন। বাঙালিপাড়ার অপর এমপি আফসানা বাংলা‌দেশি বং‌শোদ্ভূত এম‌পিদের ম‌ধ্যে বয়সে সর্বক‌নিষ্ঠ হ‌লেও এ দেশে বাংলা‌দেশি সাধারণ মানু‌ষের সঙ্গে যোগা‌যোগ, সামা‌জিক বি‌ভিন্ন অনুষ্ঠা‌নে অংশগ্রহ‌ণে এগিয়ে। টিউলিপ সিদ্দীক ব্রিটে‌নের লেবার পা‌র্টিতে তার প্রজ‌ন্মের সম্ভাবনাময়, ব‌্যক্তিগত ক‌্যা‌রিশমা দি‌য়ে তুম‌ুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আস‌নে বারবার জিতে আসা রাজনী‌তি‌বিদ। বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষকতা থে‌কে রাজনী‌তি‌তে আসা পাবনার সম্ভ্রান্ত পরিব‌া‌রের সন্তান রূপা হক তার নির্বাচনি এলাক‌া‌তেই নি‌জে‌কে ব‌্যস্ত রা‌খেন।

এবার ফি‌লি‌স্তিন ইস‌্যুকে কা‌জে লা‌গি‌য়ে অনেকে লেবার পা‌র্টি ছে‌ড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হ‌চ্ছেন। তা‌দের ম‌ধ্যে নিউক‌্যাসল সি‌টি কাউন্সিলের সা‌বেক মেয়র হা‌বিব রহমানের নামও শোনা যা‌চ্ছে।

তিন.

নির্বাচন‌কে সাম‌নে রে‌খে অভিবাসী‌দের জন‌্য বড় দু‌টি দ‌লের এখন পর্যন্ত ঘো‌ষিত প্রতিশ্রু‌তিগু‌লো‌তে বাংলা‌দেশিসহ অভিবাসী ক‌মিউন‌ি‌টিগু‌লোর জন‌্য আদ‌তে কোনও সুখব‌র নেই। কাউন্সিল ট‌্যাক্স, বিদ‌্যুৎ, গ‌্যা‌স, পা‌নির দফায় দফায় মূল‌্যবৃদ্ধি, আবাসন সংকটসহ নানা কারণে এখন নাকাল বি‌লে‌তের বাংলা‌দেশি ক‌মিউনি‌টি। নতুন প্রজ‌ন্মের ক‌য়েক লাখ ব্রিটিশ বাংল‌াদেশি বাংলা ভাষায় পড়‌তে ও লিখ‌তে না পারায় ব্রিটে‌নে বাংলা ভাষা চর্চার জায়গা‌টি ক্রমেই সংকু‌চিত হ‌চ্ছে।

বহু প‌রিবা‌রে আমা‌দের সন্তানরা ঘ‌রেও বাংলায় কথা ব‌লতে চায় না। বাংলা ভাষা শেখা‌নোর স্কুলগু‌লো সরকার বা‌জেট না থাকার অজুহা‌তে বন্ধ ক‌রে দেওয়ায় সংক‌টের প্রা‌তিষ্ঠানিক জায়গা‌টি দৃশ‌্যমান হ‌য়ে‌ছে। দুঃখজনক হ‌লো, বাংলা‌দেশি‌দের স্বাস্থ‌্য, শিক্ষা, সংস্কৃ‌তি ও জীবিকায় আত্ম-উন্নয়‌নে, অগ্রযাত্রার প‌থের অন্তরায়গু‌লো ব্রিটে‌নের প‌লি‌সি লে‌ভে‌লে তু‌লে ধ‌র‌তে আমা‌দের রাজনী‌তি‌বিদ‌দের প‌রিকল্পিত ও সম‌ন্বিত কোনও উদ্যোগ নেই।

ব্রিটে‌নে বাংলা‌দেশি‌দের ক‌মিউনিটি সংগঠন শত শত। ৫০ বছ‌রের পুরনো ক‌মিউনিটি সংগঠনগুলো ব‌্যক্তিস্বা‌র্থে ভে‌ঙে টুক‌রো হ‌চ্ছে, বিভ‌ক্তি ছড়া‌চ্ছে। ব্রিটে‌নের নির্বাচ‌নের বাকি মাত্র দুই সপ্তাহ। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলা‌দেশি ক‌মিউনিটির কোনও সংগঠন এ দেশে বাংলা‌দেশি‌দের মূল সমস‌্যাগুলো যা‌তে ব্রিটে‌নের বড় দলগুলোর নির্বাচনি অঙ্গীকা‌রে উঠে আসে সেজন‌্য ন্যূনতম কোনও উদ্যোগ এবা‌রও ছিল অনুপস্থিত।

আগামী ৪ জুলাই‌য়ের নির্বাচনে যেসব আস‌নে বাংলা‌দেশি প্রার্থীরা জি‌তে আসার সম্ভাবনা আছে, তা‌দের জন‌্য যেন আমরা ঐক‌্যবদ্ধভা‌বে কাজ ক‌রি। ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নেতৃত্ব নির্বাচ‌নে স‌চেতনতার মধ‌্য দি‌য়ে ব্রিটে‌নে বাংলা‌দেশি ক‌মিউনি‌টির ভি‌ত্তি আরও মজবুত হোক। দল মত রাজ‌নৈ‌তিক বিভাজ‌নের বাইরে শুধু বাংলা‌দেশি প‌রিচয় সব আস‌নে বাংলাদেশিদের ঐক‌্যবদ্ধ কর‌তে পার‌লে বাংলা‌দেশি ক‌মিউনি‌টি শ‌ক্তিশালী হ‌বে। ব্রিটেনের মতো ঐতিহ্যময় জাতিরাষ্ট্রের সার্বভৌম যাত্রায় বাংলা‌দেশি‌দের অধ‌্যায়‌টি সমুজ্জ্বল হোক। ব্রিটে‌নের মূলধারার রাজনী‌তি‌তে, সংস‌দে ও মন্ত্রিসভায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা যেন তা‌দের ব্রিটিশ প‌রিচ‌য়ের সঙ্গে বাংলা‌দেশি শেক‌ড়ের প‌রিচয়ও সগ‌র্বে তু‌লে ধর‌তে সমর্থ হন। নির্বাচ‌নে লেবার পা‌র্টি একক সংখ‌্যাগ‌রিষ্ঠতা পা‌বে নাকি কোয়া‌লিশ‌নের ঝুলন্ত পার্লা‌মেন্ট হ‌বে, সে প্রশ্নের উত্ত‌রের জন‌্য ভোটের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক: লন্ড‌নে কর্মরত সাংবা‌দিক।