বাংলাদেশে এটাই ঘটছে!

নাদীম কাদিরসম্প্রতি আমার অফিসের কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল দুই বিদেশি বন্ধু। একজন স্পেনের নাগরিক আর অন্যজন ব্রিটেনের। আমি জানি যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে সব বিদেশিদের একটা মনস্তত্ত্ব রয়েছে, কারণ হয় তারা লোকমুখে যা জেনেছে অথবা এই দেশ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
এই জনশ্রুতি এসেছে অধিকাংশ বাংলাদেশিদের কাছ থেকে যাদের নিজ দেশের প্রতি কোনও ভালোবাসা নেই। তারা যে কোনও পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশের সমালোচনা করাকে একটা ক্রেডিট বা ফ্যাশন মনে করেন। অন্য কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক উপাদান; যারা সরকারের সমালোচনার নামে দেশের বিরুদ্ধে যে কোনও কিছু বলছেন।
এটা লজ্জাজনক যে, কীভাবে আমরা ভুলে গেছি এই দেশ ছাড়া আমাদের কোনও পরিচয় নেই। এটা এমন দেশ যার জন্ম হয়েছে বিশাল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে; যা আমাদের জন্য গর্বের কারণ।
লন্ডনে আমার এক বছরে আমি বাংলাদেশে বহু মিডিয়া টিম পাঠিয়েছি। আমি জোরালোভাবে এটা বিশ্বাস করি যে, আমাদের গোপন করার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের গর্ব করার মতো বহু বিষয় আছে। আমার স্লোগান হচ্ছে- দুনিয়াকে সত্যিকার বাংলাদেশকে জানতে দাও।
আমার সফরকালে আমি বাংলাদেশজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। এ সময় নতুন রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও ভবনের মতো বহু কর্মকাণ্ড আমার নজরে এসেছে। লোকজন তাদের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোটা দৃশ্যমান।
ক্যারিয়ার গঠন বা ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার চেয়ে রাজনৈতিক আলোচনা তুলনামূলক কম ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের কর্মকাণ্ডে  ব্যবসায়ী নেতারা সন্তুষ্টু। একটা শব্দ আমার অভ্যাগতদের কাছ থেকে পরিষ্কার ছিল। বাংলাদেশে এটা ঘটছে এবং তোমাদের সঠিক নেতৃত্ব রয়েছে।
জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ সাংবাদিক পিটার গ্রিমসডিসকে দিয়েই শুরু করি। তিনি জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা ছিল এটা একটা বন্যার দেশ এবং এ দেশ থেকে উপসাগরীয় দেশগুলোতে শ্রমিক পাঠানো হয়। সফরের পর এই ইমেজটা দাঁড়ায় এ রকম ‘বিশাল শিল্প এবং লোকজনের কর্মতৎপরতা, অপরিমেয় আকর্ষণ ও বন্ধুপরায়ণতা, বাহ্যিকভাবে যেটা আঁকা হয় তার চেয়ে কম দারিদ্র। শহুরে পরিবহনে বিশৃঙ্খলা এবং ঢাকায় গণপরিবহনে জরুরি অগ্রাধিকার।’
বাংলাদেশে রাজনীতি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রতি আস্থা ও আশাবাদের কথাও বলেন পিটার গ্রিমসডিস। তার ভাষায়,  বাংলাদেশ এখন একটি অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প... স্থায়ী অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা-হতাশার একটি দেশ।’
পিটার গ্রিমসডিস বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত ছয় বছরে ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দুই হাতে নানা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। লোকজনের মধ্যে একটা উদ্বেগ কাজ করেছে। মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রী যদি অবসরে যান অথবা তার প্রতিস্থাপন ঘটে সেক্ষেত্রে একটা সম্ভাব্য দুর্যোগ দেখা দেবে। এমনকি যদি আওয়ামী লীগও ক্ষমতা ধরে রাখে তাহলেও একটা অবধারিত দুর্যোগ দেখা দেবে যদি বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণের পর তারা গণরায় অর্জনে ব্যর্থ হয়।’

আমার স্প্যানিশ সাংবাদিক বন্ধু ব্রুনো সিক্সটো লোপেজ-ব্রাভো। উপসাগরীয় দেশগুলোতে আমাদের কর্মী এবং দ্য ইকনোমিস্ট ম্যাগাজিনের সুবাদে বাংলাদেশকে তিনি একটা ‘দরিদ্র দেশ’ হিসেবে জানতেন। কিন্তু বাংলাদেশ সফর শেষে তিনি বলেন, “আমি একটা দেশ দেখেছি যারা গত ৫-৬ বছরে দর্শনীয় এবং উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি, কর্মশক্তিপূর্ণ জনসংখ্যা এবং নিজেদের দেশকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে তাদের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।”

ব্রুনো সিক্সটো লোপেজ-ব্রাভো বলেন, “আমি একটা সরকারকে দেখেছি যারা যথার্থ পলিসি তৈরিতে সক্ষম। সেখানে কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার মতো জরুরি বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় নেতাদের একত্রিত করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের এই ট্রেন ধরা উচিত, যদি  তারা দেশটির সঙ্গে এগিয়ে যেতে চান। অন্যথায় তারা একটা সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন। এই ট্রেনটি ধরা প্রয়োজন যেটি এরইমধ্যে পূর্ণ গতিতে চলছে। বাংলাদেশ একটা ভালো সম্ভাবনা।”

আমার এই স্প্যানিশ সাংবাদিক বন্ধু বলেন, “একটি জাতি যে স্বাধীনতার জন্য অতীতে কঠিন লড়াই করেছে তার গণতন্ত্র এখন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। যেসব বিষয়ে এরইমধ্যে অনেক বছর বিলম্বিত হয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলো অর্জনের জন্য এখন তারা প্রস্তুত। ঠিক এই সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীই যথার্থ ব্যক্তি। তার শরীরে সব সময় বইছে শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরাধিকার; যেটা  ডিএনএ সূত্রে তিনি পেয়েছেন। তিনি একজন নেতা যিনি সামাজিক শান্তি, আরও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

বাংলাদেশ সফর শেষে বিবিসি’র একটি প্রোগ্রামের প্রডিউসার দেবোরাহ মার্টিন বলেন, বাংলাদেশ সুন্দর ও সবুজ।

বিবিসি’র অন্য একটি প্রোগ্রামের প্রডিউসার লিয়াম চিভার্স বলেন, বাংলাদেশ রঙ ও বিরামহীন উত্তেজনায় পূর্ণ।

আমার সোনার বাংলা! এটা সত্যিই একদিন হবে। আমাদের মহান স্বাধীনতার এই মাসে আমি দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।