অসতর্ক অর্থমন্ত্রী, উদ্বিগ্ন নাগরিক

তুষার আবদুল্লাহউদ্বেগের মধ্যে পড়ে গেলাম। এমনিতেই ধুলোবালির মতো চারপাশে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা উড়াউড়ি করছে। সেখানে আবার অর্থমন্ত্রী সেখানে নতুন করে ধুলিঝড় আনলেন। ওই ধুলিঝড়েই উদ্বেগের মাত্রা গেলো বেড়ে। প্রথম দোষ হয়তো আমারই। কী দরকার ছিল পত্রিকায় প্রকাশিত তার সাক্ষাৎকারটি পড়ার। পড়েছি বলেই না উদ্বেগের ঘুর্ণিতে পড়ে গেলাম। অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি অর্থখাতের বিশৃংখলার কেবল ইঙ্গিতই প্রমাণ রাখে। সদ্য পদত্যাগী গভর্নর আতিউর রহমান বরাবরই মনে করতেন, তাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে তিনি অর্থমন্ত্রীকে জমা-খরচের খাতায় রাখতেন না। তার শেষ প্রমাণ পাওয়া যায় অর্থমন্ত্রী আতিউর রহমানের বিদেশ থেকে ফিরে আসার অপেক্ষায় বাড়িতে বসে আছেন। আর আতিউর রহমান গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদ্যতাগ পত্র দিয়ে এলেন।
অর্থমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে বলেছেন- আতিউর রহমান ঘটনার গভীরে প্রবেশ করতে পারেননি। এবং তার জন্যই দুই ডেপুটি গভর্নরের চাকরি গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সদ্য বিদায়ী গভর্নরের অবদান ‘জিরো’। তাকে তিনি জনসংযোগ কর্মীর কাতারে নিয়ে গেছেন। অর্থমন্ত্রী কেবল যে আতিউর রহমানের দিকেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন তাই নয়, তিনি তার ক্ষোভের তীর রেখেছেন রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দিকেও। তিনি বলেছেন আগের অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর। কারণ চেয়ারম্যান কোনও কাজ করে না। তিনিও নাকি শুধু বক্তৃতা আর জনসংযোগ করে বেড়ান। এনবিআর চেয়ারম্যান জানেনইনা তার প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে। এতোটুকুতে উদ্বেগের পাশাপাশি বিস্ময়ও দেখা দিতে পারে যে কারও, যেমন আবার নিজেই উভয় অনুভূতি অনুভব করছি। কি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক খাত গত সাত বছর পার করে এলো, যেখানে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে গভর্নরের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব যোজন-যোজন। বিস্মিত এই কারণেও যে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানও তার নাগালের বাইরে। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বিষয়ে যদি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান এমন হয়, তবে রাজস্ব এবং অর্থখাতের শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। সামনে আরও আসছে নতুন অর্থবছর।

 


অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার থেকেই আভাস পাওয়া গেল সরকারের ভেতরে শক্তিশালী আমলা ও রাজনীতিকদের একটি অংশের সঙ্গে তার বনিবনা ভালো নেই। ওই অংশের শক্তি হয়তো তার চেয়েও বেশি। যে কারণে বেসিক ব্যাংকের অর্থ-কেলেঙ্কারির বিষয়ে তিনি শক্ত অবস্থান নিতে পারেননি। একই কারণ বা প্রভাবে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নিজ ছায়াতলে আনতে পারছেন না।

অর্থমন্ত্রী খোলামেলা ভাবে কথা বলেছেন। যারা ব্যাংকিং ও রাজস্বখাত ঘনিষ্ঠ তারা বলতে পারবেন কথাগুলো কতোটা বাস্তবতার কাছাকাছি। তবে আমরা যারা দূরে আছি, তারা এতোটুকু বুঝতে পারি কোথাও একটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দখল, পাল্টা দখলের প্রতিযোগিতা আছে। এই প্রতিযোগিতা বরাবরই সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে থাকে। দল বা সরকারের পক্ষ-বিপক্ষের বিরোধ ও টানাপোড়নে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় রাজস্ব বোর্ডের কাজে। তখন তো উদ্বিগ্ন হতেই হয়। অর্থমন্ত্রীর কাছেও সাধারণ নাগরিকেরা প্রশ্ন রাখতেই পারেন- গভর্নর ঘটনার গভীরে যাননি। কিন্তু আপনি কতোটা গভীরে পৌঁছে ফেডারেল রির্জাভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিলেন?

লেখার শেষ প্রান্তে যখন, তখনই অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে বার্তা এলো প্রকাশিত সাক্ষাৎকার গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বার্তায় আরও বলেছেন বয়সের ভারে তিনি সতর্ক থাকতে পারেন না সকল সময়ে।

অর্থমন্ত্রী এই বার্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের আরও উদ্বেগের মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। সত্যিইতো একজন অসতর্ক মন্ত্রী কতোটা নিরাপদ রাখতে পারবেন অর্থখাত? নাগরিকরা এবিষয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সতর্ক হবার তাগিদ বোধ করছেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি