কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বরাবরই অগোছালো মনে হয়েছে। কমিশনের সদস্যদের একাট্টা মনে হয়নি। সবাই সবার মতো কথা বলে যান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও বৈঠক করেছেন সহকর্মীদের সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা ছাড়া। নির্বাচন কমিশনের এই অগোছালো বিষয়টির নেতিবাচক প্রভাব ভোটের মাঠে পৌঁছেছে স্পষ্টভাবেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তার টাটকা উদাহরণ।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সঙ্গে এবারের পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে দলগত নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে দলগত প্রতীকে। যখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলো, তখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের সর্তক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রথমত দলীয় ভিত্তিক নির্বাচনে মনোনয়ন কেনা-বেচার সুযোগ তৈরি হয়। পৌরসভা হয়ে সেটা ইউনিয়নে এসে ঠেকলো এবার। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলেরর প্রার্থী হওয়ার জন্য টাকা উড়েছে ইউনিয়নে।
টাকা, লবিং'এ যারা মনোনয়ন পাননি তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর আর্বিভাব ক্ষমতাসীন দল থেকেই হয়েছে। নির্বাচনের বাজারে প্রচার ছিল ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক মানেই নিশ্চিত বিজয়। তাই তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য নিজেদের দলের মধ্যেই লড়াই বাঁধে। সংঘর্ষের শুরু তখনই। যা ভোটের দিন এবং ফল ঘোষণা পরবর্তী সময় পর্যন্ত গড়ায়। নিজদলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটের আগে পরে সংঘর্ষে দুই দফায় ৩২ জন নিহত হয়। আহত দুইশতাধিক। ২০১১ সালে ১১ ধাপের নির্বাচনে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল চার। যেহেতু দলীয় ভিত্তিক নির্বাচন এবং পৌরনির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীক সাংঘর্ষিক রূপ দেখেছিল নির্বাচন কমিশন, সেহেতু তাদের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় করার প্রয়োজন ছিল। তারা এই কাজটি করেননি। একই সঙ্গে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে কমিশন সচিবালয়ে। কিন্তু আগের সকল কমিশনই মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এতে প্রশাসনের সঙ্গে কমিশনের কর্মকর্তাদের দূরত্ব অনেকটাই কমে আসতো। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বমূলক স্বীকারোক্তি-প্রশাসন আমাদের কথা শুনছে না। এর দায় শতভাগ তাই কমিশনের।
এবার প্রথম দফা নির্বাচনের পর কমিশন বলেছিল দ্বিতীয় দফা নির্বাচন ভালো হবে। ভোটগ্রহণ শেষে তারা সেই কথাই বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন-দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে রাতে কেউ ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে পারেনি। তাদের আত্ম-তৃপ্তি তাহলে- ব্যালট বাক্স দখল ও ভর্তি যা হয়েছে তা দিনের আলোতেই হয়েছে? আসলে নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক ক্ষমতার দুই আনাও ভোটের মাঠে প্রয়োগ করেনি। করলে ভোটের চিত্র এমনটা হতো না। কেউ কেউ বলবেন- এই নির্বাচন কমিশনই গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো করেছে। সুতরাং তারা তো ভালো নির্বাচনও করতে পারে। এখানে পাদটিকা হিসেবে বলতে হয়-ওই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু আয়োজনে সরকারের শুভ ইচ্ছা ছিল। এই নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে সরকার উদাসীন থাকলেও, নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক শক্তি দিয়ে অনেকটাই সুষ্ঠু করতে পারতো। অন্তত তারা নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করতে চেয়েছিল, সেই চেষ্টাটি দেখলেও ভোটাররা সন্তুষ্ট হতেন।
দুই দফায় নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে সেই চেষ্টাটির কানাকড়ি ও দেখা গেল না। ফলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রার্থী, ভোটার, এজেন্ট,পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে সঙ্গত প্রশ্নই উঠে আসে- দেশে নির্বাচন কমিশন আছে তো ?
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি