খুলনায় জঙ্গি আরিফের ফাঁসি কার্যকর

ফাঁসিঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার দায়ে জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রবিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। খুলনা জেল সুপার কামরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান।

রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময়  জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী, যশোরের ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান, সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কারাসুপার কামরুল ইসলামসহ বারোজন উপস্থিত ছিলেন। রায় কার্যকর করার পর ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আরিফের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে  ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বরগুনা সদরের বান্দরগাছিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে আসাদুলের পরিবারের সদস্যও সদস্যরা রয়েছেন।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দুই বিচারক হত্যার দায়ে আসামি জঙ্গি আরিফের ফাঁসি খুলনা কারাগারে কার্যকর করা হলো।’

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দুই বিচারক হত্যার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি আরিফের ফাঁসি খুলনা কারাগারে কার্যকর করা হলো। ফাঁসি কার্যকর করার আগে কারা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আতাউল্লাহ ফাঁসির আসামি আসাদুল্লাহকে তওবা পাঠ করান।’

এর আগে দুপুরে আসাদুলের সঙ্গে তার স্বজনদের দেখা করেন। এই স্বজনদের মধ্যে ছিলেন আরিফের স্ত্রী, দুই মেয়ে, ৬ বোন, ভাতিজা, শ্বশুর-শাশুড়িসহ নিকট আত্মীয়রা। এরপর খুলনার সিভিল সার্জন ৩ সদস্যের একটি মেডিক্যাল প্রতিনিধি দল নিয়ে দুপুরে কারাগার পরিদর্শন করেন।

আসাদুলের ভাতিজা মো. জামাল দুপুরে সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফাঁসির খবর জানার পরও আসাদুলের মনোবল শক্ত রয়েছে। তার সামনে আমরা পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়লেও তিনি দুর্বল হননি। বরং তিনি সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, এই মৃত্যুই তার কাম্য ছিল। ফাঁসি হলেও এ মৃত্যু নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।’

এদিকে খুলনা জেলা কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছিল। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র বিশেষ শাখার এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, জেএমবি নেতা আসাদুলের ফাঁসি উপলক্ষে কারাগার চত্বর, সামনে ও সড়কের ২ পাশে পুলিশ মোতায়েন করে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। সন্ধ্যায় নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়।

জেএমবির জঙ্গি হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহম্মেদ

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে জেএমবি। ২০০৬ সালের ২৯ মে এ হত্যা মামলার রায়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন। ইতোমধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ওই মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জেএমবি নেতা আরিফ ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার হয়। এরপর আপিল করেন আরিফ। গত ২৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফ ২০০৮ সাল থেকে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।

২০০৪ সালের ৯ মে খুলনা জেলা কারাগারে কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয়। এরপর জঙ্গি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে।

এর আগে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ এ মামলার আসামি জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের  ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। 

/এমএনএইচ/