আজ ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস

mymensingh pic-1, (10-12-16)আজ ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করেছিল ময়মনসিংহ। এই দিনের ভোর বেলা থেকেই মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে জাতীয় পতাকা হাতে শম্ভুগঞ্জ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে দলে দলে সার্কিট হাউজ মাঠে জমায়েত হতে থাকে। অবরুদ্ধ শহরবাসী এ খবর পেয়ে আনন্দ উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসে। একদিকে বিজয় উল্লাস অন্যদিকে স্বজন হারানোর বেদনা সব মিলিয়ে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে দিনটি ছিল অত্যান্ত খুশির, আনন্দের ও মুক্তির দিন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের পর থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ময়মনসিংহকে দখলমুক্ত রেখেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে ২৩ এপ্রিল ময়মনসিংহের পতন ঘটলে শহর ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ সীমান্তের ওপারে চলে যায় মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে স্থাপন করা হয় পাক হানাদার বাহিনীর বিগ্রেড হেড কোয়ার্টার। হানাদারদের সহযোগী হিসাবে গড়ে তোলা হয় আলবদর, আল সামস, রাজাকার বাহিনী। জেলা পরিষদ ডাক বাংলোটির “শান্তি ভবন” নাম দিয়ে টর্চার সেল ও কিলিং সেন্টার গড়ে তোলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে গড়ে তোলা হয় আরও ২টি আস্তানা। এছাড়াও অবাঙ্গালী বিহারিরা শহরের ছোট বাজারে গড়ে তোলে “কিলিং জোন”। ৭১ এ পাক সেনা আর রাজাকার, আল বদররা এসব আস্তানায় বাঙ্গালী নিধনে মেতে উঠেছিল। প্রতিদিনের সেই নৃশংসতার নিদর্শন দেখা যেত ব্রহ্মপুত্রের চরে। মুক্তাগাছা, গৌরীপুর  ও নান্দাইলের  এই নৃশংসতার মাত্রা ছিল ভয়াবহ। প্রায় ৭ মাস পাক সেনাদের দখলে থাকার পর নভেম্বরের শেষের দিকে একের পর এক মুক্ত হতে থাকে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা।’

আব্দুর রব বলেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নেত্রকোনা থেকে একটি গ্রুপ অগ্রসর হয় ময়মনসিংহের দিকে। একই সময় হালুয়াঘাট, ফুলপুর হয়ে মিত্র বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেক একটি দল অগ্রসর হয় শহরে অভিমুখে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অবস্থান টের পেয়ে শহরে কারফিউ জারি করে হানাদাররা। অপরদিকে টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায় পাক সেনারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ের বেশে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন ঢালু যুব শিবির প্রধান বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বিগ্রেডিয়ার সামস শিংহ বাবাজি। ১০ ডিসেম্বর সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন বর্তমান ধর্মমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান। মিত্রবাহিনীর কমান্ডার বাবাজির নেতৃত্বে শহরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ থেকে হানাদার মুক্ত করেন।’

জানা গেছে, দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে ১৯৮৩ সালে ময়মনসিংহি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস পালন করতে উদ্দোগ নেন। ঐ বছরই জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রবল ইচ্ছা ও দায়িত্বশীল ভুমিকার ফলে সামরিক আমলেও ১০ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস পালন করতে সামর্থ হন। ছোট বাজার জিকেএমসি সাহা রোডে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে একদিনের একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক সুচনা শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর প্রথমে এক দিন থেকে তিন দিন এবং পরে তিনদিন থেকে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। যা বর্তমানে শহরের ছোট বাজার বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা স্মরণীতে পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এদিনটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আয়োজনে সাতদিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হবে। ১০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি সকাল ১১টায় ছোট বাজারে মুক্তিযোদ্ধা জনতার র‌্যালি উদ্বোধনের মাধ্যমে দিনটির শুভ সূচনা করবেন। বিকালে বিরোধী দলীয় নেত্রী মুক্তমঞ্চের আলেচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া সাতদিনব্যাপী কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ব্যক্তিরা পৃথক দিনে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।

/এসএনএইচ/