সংরক্ষণের অভাবে শেরপুরের বধ্যভূমিগুলো এখন গো-চারণ ভূমি

আহম্মদনগরের এই ব্রিজের নিচে শত শত মানুষকে হত্যা করে পাক বাহিনীস্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি শেরপুর জেলার বধ্যভূমিগুলো। বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমি ও গণকরবগুলো আজও চিহিৃত করা হয়নি। ফলে এসব বধ্যভূমি গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর শেরপুরের হেড কোয়ার্টার ছিল আহম্মদনগর। যুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী  মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ধরে এনে এখানে নির্যাতনের পর হত্যা করে গনকবর দিতো। আহম্মদ নগর এলাকার তৎকালীন পাক বাহিনীর ক্যাম্প ও ক্যাম্পের আশপাশের বধ্যভুমি ও গনকবরগুলো এখনও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার বধ্যভূমিগুলোর অন্যতম হলো, আহম্মদনগর, বগাডুবি, জগৎপুর ও জোলগাঁও। বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা না হলে ওই এলাকার নতুন প্রজন্ম একদিন ভুলেই যাবে এখানকার মাটি পাক সেনাদের হত্যাযজ্ঞে রক্তে রাঙা হয়েছিল।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এরপর ২১ মে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর গ্রামে আস্তানা গাড়েন পাক বাহিনী। শেরপুর-ঝিনাইগাতি সড়কের পশ্চিম পাশের আহম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাস রুমকে তারা ব্যবহার করে টর্চারসেল এবং মাঠে সাজানো হয় নানা সমরাস্ত্র। এখানে পাক বাহিনীরা আশপাশ ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরিহ নারী-পুরুষকে ধরে এনে নির্যাতন চালাতো। এক পর্যায়ে নারীদের ধর্ষণ করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ক্যাম্পে আটক রেখে এবং পুরুষদের হত্যা করে আশপাশের বিভিন্ন নালা ও জঙ্গলে মাটি চাপা দিয়ে রাখতো। কখনও কখনও নিরিহ মানুষকে স্কুলের সামান্য উত্তরে তৎকালের একটি কাঠের ব্রিজের নিচে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ফেলে রাখা হতো। ক্যাম্পের একটু দক্ষিণে মেইন রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি জঙ্গলে বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এনে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হতো। কিন্তু ওই বধ্যভূমি বা গণকবরটি স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পরও সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে ওই স্থানে সিদ্দিক নামে এক ব্যাক্তি তার শহীদ ভাই এবং আরও ৯ জন শহীদের স্মরণে নিজ উদ্যোগে ফলক নির্মাণ করেছেন। তবে গ্রামবাসীর দাবি সরকারিভাবে সেখানে বধ্যভূমি ও গণকবর চিহিৃতকরণসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।

আহম্মদনগর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তিবাহিনী সন্দেহ করে এলাকার যুবকদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো এ স্কুলে। এক পর্যায়ে স্কুলের বিজ্ঞান ভবনের ছাদ থেকে তাদের লাথি দিয়ে ফেলে হত্যা করা হতো।’

ঝিনাইগাতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও তৎকালীন ছাত্র নেতা আব্দুল মান্নান আক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেও দীর্ঘদিনেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সাক্ষ্যবহনকারী স্থানগুলো আজও অবহেলায় পড়ে রয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধা তালাপতুফ হোসেন মঞ্জু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা না হলে ভবিষৎ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না।’

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আহম্মদনগরসহ জেলার অন্যান্য বধ্যভুমি ও গণকবরের স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’

/এসএনএইচ/