ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল দিয়ে বিস্ফোরক ডিভাইস বানিয়েছিল জঙ্গিরা

আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের অভিযান। ছবি-আইএসপিআর এর সৌজন্যে
ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল দিয়ে বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরি করেছিল জঙ্গিরা।এগুলো বাসার সামনে এমনভাবে রাখা হয়েছিল, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফ্ল্যাটের দিকে এগোলেই তারা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কিন্তু অভিযানে অংশ নেওয়া কমান্ডোরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন। ফলে তারা জঙ্গিদের পাতা ফাঁদে পা দেননি। অভিযানের শেষের দিন সেনা কমান্ডোরা সেসব বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করেন। নিষ্ক্রিয় করার সময় বিস্ফোরণে ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করার পর জঙ্গিরা তাদের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসে। ভবনের মূল ফটকের সামনে তারা বিশাল আকৃতির বিস্ফোরক পেতে রাখে। এমনকি একটি ফ্রিজ ও একটি মোটরসাইকেলে বিস্ফোরক রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।’

গত ২৪ মার্চ রাতে সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহল নামে একটি পাঁচ তলা ভবনের নিচতলায় জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় পুলিশ।পরদিন পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তবে বিস্ফোরকের মাত্রা ও ওই ভবনে আটকে পড়া লোকজনের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনায় অভিযানের জন্য সেনা কমান্ডোদের ডাকা হয়। গত শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা- কমান্ডোরা আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করে।  টানা ১১১ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তারা চার জঙ্গিকে পরাস্ত করে।মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান শেষ করে ভবনটি পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, পুলিশের কাছ থেকে তারা জানতে পারেন যে, ভবনের নিচ তলায় তিন জন পুরুষ ও একজন নারী জঙ্গি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ অবস্থান করছে। এরপর সেনা কমান্ডোরা অপারেশনে দুটি প্রায়োরিটি নির্ধারণ করেন। এর একটি হলো ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া। আর অপরটি হলো জঙ্গিদের নির্মূল করা।’

এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অপারেশনের প্রথম পর্বটি ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কমান্ডোরা তাদের জীবন বাজি রেখে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে ২৫ মার্চ দুপুর ১টার মধ্যে ভবন থেকে ৭৮  জনকে নিরাপদে উদ্ধার করেন। তবে নিচতলার উদ্ধার অভিযান ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কমান্ডো সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচতলার বাসিন্দাদেরও নিরাপদে বের করে আনেন। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের অভিযান। এসময় সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের পাশাপাশি স্নাইপার দল এপিসিসহ বিশেষায়িত অনেক সদস্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তিন দিন একটানা বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ২৭ মার্চ বিকেলের মধ্যে চার জঙ্গিকে নির্মূল করা হয়।’

সেনা সদরের নির্দেশে অভিযানের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত গতকালই  (সোমবার) অভিযান শেষ হয়। তবে আরও ব্যাপক তল্লাশি ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের দিনটি (মঙ্গলবার) ব্যবহার করা হয়। সোমবার দুটি মৃতদেহ বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুটি মৃতদেহের সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্ট থাকায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। নিরাপত্তা বিবেচনায় ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে ঘটনাস্থলেই এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের আগে প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হয়।সকল কার্যক্রম শেষে বিকেলে ভবনটি ক্রাইমসিন হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

সেনা কর্মকর্তা ফখরুল আহসান বলেন, ‘অপারেশন টোয়াইলাইট যে কোনও ক্রাইসিস মোকাবিলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মধ্যরাতে আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিদের অবস্থানের সংবাদ পেয়ে ভবনটি ঘিরে রাখেঝ পুলিশ। পরে সোয়াত ও সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযানের দায়িত্ব নেয়। অভিযান চলাকালে দুই শক্তিশালী বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। আহত হয়েছেন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন।

/এপিএইচ/