কুসিকে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

কুসিকে ভোটগ্রহণ শেষ

একটানা ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচন। ভোট উৎসব শেষে এখন ফল গণনার অপেক্ষায় কুমিল্লা শহরবাসী। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। একটানা তা চলে বিকাল চারটা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই কেন্দ্রে উপস্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্সগুলো খুলে ব্যালট পেপারগুলো জড়ো করে ভোটগণনা শুরু হয়েছে।

এদিন ব্যালট ছিনতাই, ককটেল বিস্ফোরণ, বেশ ক’টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও জাল ভোটে দেওয়ার অপরাধে কয়েক ব্যক্তিকে জেল জরিমানাসহ বিভিন্ন বিশৃঙ্খল ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ।

এসব ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে কুমিল্লাবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোথাও কোথাও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হই চই ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।

নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা যে কোনও ফল মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোট গ্রহণ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন।

কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এটিই প্রথম বড় ধরনের নির্বাচন।

কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৯টায় কুমিল্লা ৮নং ওয়ার্ডের মডার্ন হাইস্কুল ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হোচ্ছা মিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।এ সময় তিনি সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ করেন।

এদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের চাইতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি ছিল। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকায় অনেকেই ভোট দিতে এসেছে বলে জানান ভোটাররা। 

এদিকে কুসিক নির্বাচনে কোটবাড়ি দক্ষিণ বাগমারার ধনিয়াবাড়ি ও পিরোজপুর গ্রামের ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই এলাকায় জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেন বলেও জানা গেছে। এ দুটি গ্রাম ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত।

কুসিক নির্বাচনে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজের পুরুষ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তবে এই কলেজের অন্য ভবনে নারী ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ চলে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে কেন্দ্রের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হওয়ায় ও দুটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এছাড়াও গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি দখল করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এদিকে নির্বাচনে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইদু মিয়ার (ঠেলাগাড়ি) বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোটেক আরিফের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

এদিকে হঠাৎ করেই দখল হয়ে যায় ৭নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। অভিযোগ রয়েছে ‘ওপর থেকে আসা নির্দেশ’ তামিল করতে গিয়ে কেন্দ্রটি হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শূন্য হয়ে পড়ে। আর এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে জোর করে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মারা হয়। এ সময় কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মো. দিদারুল ইসলামকে জাল ভোট না দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাতে ও ব্যর্থ হয়ে নীরবে কাঁদতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন মহিলা। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩টি এবং ভোট কক্ষ ৬২৮টি। প্রিজাইডিং অফিসার ১০৩, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৬২৮ এবং পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন ১ হাজার ২৫৬ জন।

/এআর/টিএন/