রাউধার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সিআইডির তদন্ত শুরু

রাউধা আথিফরাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ও মডেল রাউধা আথিফের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের হোস্টেলে রাউধার কক্ষটি পরিদর্শন করেছে সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে কক্ষের ফ্যান, বাইরের সিসিটিভির ফুটেজ এবং কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করেছে সিআইডি।

পরিদর্শন শেষে রাজশাহী সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যানে যদি ৫০/৫৫ কেজির কিছু ঝুলে থাকে তবে সেখানে চাপ পড়বে। যারা চাপ মাপেন, আমরা তাদের কাছে ফ্যানটি নিয়ে যাব। তারা পরীক্ষা করে দেখবেন ফ্যানটিতে আদৌ এই চাপ পড়েছে কি না। ফ্যানে কিছু ঝুললে কিছু দাগও থাকবে। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাউধার হত্যার বিষয়টি আমরা এখনও কোনোভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে চিকিৎসক আত্মহত্যা বললেও রাউধার বাবা এটাকে হত্যা বলে দাবি করছেন। তবে ঘটনা যাই হোক, আমরা নিশ্চিত হয়েই এ বিষয়ে কথা বলবো।’

রাউধারন বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ বলেন, ‘রাউধার ঘরের দরজা আটকে সিআইডি কর্মকর্তারা বার বার সজোরে ধাক্কা দিয়ে সেটি খোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দরজা খোলেনি, ভেঙেও যায়নি। তাহলে ঘটনার দিন দরজা কীভাবে খুলল? এটা একটা বড় প্রশ্ন।’

তিনি আরও বলেন, সিআইডি কর্মকর্তারা হোস্টেলের ছাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মালদ্বীপের ছাত্রীরা জানিয়েছে রাউধাকে কেউ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেনি বরং লাশ বিছানায় ছিল। পুলিশ আসার আগে কেন লাশ নামানো হলো? এটাও একটা বড় প্রশ্ন।’

পরীক্ষার আগের রাতে রাউধাকে জুসের সঙ্গে কেন ট্যাবলেট মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয়েছিল? কেউ তাকে আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ আথিফ।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসমাউল হক বলেন, ‘পুনঃময়নাতদন্ত করার জন্য আগামী রবিবারের পর যেকোনও দিন লাশ তোলা হবে। কারণ হাসপাতালে জায়গা না থাকায় এর আগে লাশ তোলা সম্ভব না। তাছাড়া লাশ তুলে রাখলে গন্ধ ছড়াবে। তাছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণেও দেরি হচ্ছে। আর লাশ পুনঃময়নাতদন্তের জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে।’

গত ১৭ এপ্রিল রাউধার হোস্টেলের কক্ষ পরিদর্শন শেষে রাজশাহী সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ শফী ইকবাল জানিয়েছিলেন, ‘এর আগে থানা ও ডিবি পুলিশ রাউধা মৃত্যুর দুটি মামলা তদন্ত করেছে। তবে সিআইডিতে মামলাগুলো হস্তান্তরের পর আমরা আজকে প্রথম রাউধার কক্ষটি পরিদর্শন করলাম।’

তিনি আরও জানান, ‘পরিদর্শনকালে রাউধার ঘরের ছবি তোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে রাউধার উচ্চতা, ফ্যানের উচ্চতা ও চেয়ারের উচ্চতা নেওয়া হয়েছে। অগ্রীম সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। তবে এতে করে মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করা সম্ভব। তবে অন্য কোনও মোটিভ আছে কিনা-  তা তদন্ত না করে বলা কঠিন।’

উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা রাউধার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ফেলে। গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ময়না তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে আরও পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধাও ছিলেন।

/এসএনএইচ/