ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দিকনির্দেশনা নেই, বিস্মিত ত্রাণমন্ত্রী

হাওরে অসময়ে পানি এসে ডুবে গেছে ফসলহাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতির সঠিক তথ্যও নেই তাদের কাছে। সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে দফতরগুলোর মধ্যে। আর সে কারণে বন্যার পর কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে পারেননি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কী করা প্রয়োজন, তারও কোনও পরিকল্পনা নেই প্রশাসনের কাছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য জানতে চেয়ে বিস্মিত হন। পরে দ্রুত সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল, মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর অধিকাংশ বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বারহাট্টা, আটপাড়া, কেন্দুয়া, কলমাকান্দারসহ আরও কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আংশিক ত্রাণ বিতরণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
বন্যা পরিস্থিতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিস্থিতি জানতে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নেত্রকোনা পৌঁছান সোমবার রাতে। পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় রাতেই অংশ নেন মন্ত্রী। এসময় জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান তার গৃহীত পদক্ষেপ ও পরবর্তী পরিকল্পনা মন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন।
পরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রী জেলার অকাল বন্যা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সরকারি দফতরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানতে চান। এছাড়া, আগামীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, মন্ত্রণালয় থেকে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন— এসব তথ্যও জানতে চান মন্ত্রী। কিন্তু সভায় উপস্থিত কোনও কর্মকর্তাই এসব বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা, পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে কিছুই জানাতে পারেননি। এতে বিস্মিত হন মন্ত্রী।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান তার পদক্ষেপ ও পরবর্তী পরিকল্পনা মন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের পর মন্ত্রী সভায় উপস্থিত উপ-পরিচালক (কৃষি) বিলাশ চন্দ্র পালকে এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কী ধরনের ফসল ফলানো যেতে পারে তা জানতে চান। এই প্রশ্নে কোনও জবাব দিতে পারেননি বিলাশ চন্দ্র। জেলায় সার্বিক ক্ষতির পরিমাণও জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা। পরে মন্ত্রী মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মাছের মড়ক, মড়কে মারা যাওয়া মাছের পরিমাণ ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনিও কোনও ধারণা দিতে পারেননি।
একইভাবে স্থানীয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের মজুদের তথ্য দিতে পারেননি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী। সংশ্লিষ্ট দফতর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রীর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও মেডিক্যাল টিম রয়েছে কিনা, মন্ত্রীর এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সিভিল সার্জন। স্থানীয় সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব কার্যালয়ের কর্মকর্তারাই মন্ত্রীর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এসময় উপস্থিত সংসদ সদস্য রেবেকা মোমিন বলেন, ‘জেলার এত বড় দুর্যোগের প্রতিকারের কোনও ব্যবস্থা কেন নিতে পারেননি? এটি দুঃখজনক।’ এসময় জেলা কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
নেত্রকোনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় কমিটির সভায় বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের এমন পরিস্থিতি দুঃখজনক। কেনও তারা মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য উপাত্ত আনতে পারেননি? এই সব দায়িত্বহীন কর্মকর্তাদের জন্যই বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকার জনগণের জন্য অনেক বরাদ্দ দিলেও এইসব কর্মকর্তাদের জন্যই বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সংসদ সদস্য ওয়ারেছাত হোসেন বেলাল, ইফতেকার উদ্দিন তালুকদার, ছবি বিশ্বাস, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিতি ছিলেন।

আরও পড়ুন-

হাওরে পানি বাড়ছেই

তৈরি হয়নি সেতু, গ্রামবাসীরা বানালেন বাঁশের সাঁকো

/এসএমএ/টিআর/