বেনাপোলে ট্রাক সংকটে পণ্যজটের আশঙ্কা, স্থবির আমদানি-রফতানি

বেনাপোল স্থলবন্দরপণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সংকটে বেনাপোল বন্দরে পণ্যজটের আশঙ্কা দেখা গেছে। জানা গেছে, ট্রাকের অবৈধ বাম্পার, হুক, অ্যাঙ্গেল অপসারণে ভ্রাম্যমাণ আদাল অভিযান পরিচালনা করায় বন্দরে এ ট্রাক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ভাড়া রাতারাতি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলানায় অনেক কম। ফলে পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। 

খাঁজা মইন উদ্দিন চিশতি রহ. ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক আলী আজম জানান, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জরিমানার ভয়ে ট্রাক চালকরা রাস্তায় বের হচ্ছেন না। ফলে পণ্য পরিবহনে পর্যাপ্ত ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রাতে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করলেও ভাড়া আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর সময়মতো পণ্য পণ্য খালাস করতে না পারায় আমদানিকারকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পরছে দু’দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে।’

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন জানান, ‘বন্দরে আগে প্রতিদিন ৭/৮শ’ ট্রাক পণ্য লোড হতো, এখন হচ্ছে ৪শ’ ট্রাক। এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলতে থাকলে পণ্য পরিবহনে ট্রাক পাওয়া সম্ভব না। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।’

বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ‘বন্দরে ট্রাক সংকটের কারণে পণ্য পরিবহনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান হবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, জায়গা সংকটের কারণে বন্দরে খোলা আকাশের নীচে অযত্ন আর অবহেলায় পরে আছে মেশিনারিজ, গাড়ী ও ক্যামিকেলসহ  কোটি কোটি টাকার মালামাল। বন্দরে আধুনিকায়নের কোনও ছোয়া না লাগায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বন্দরের শেডে জায়গা না থাকায় রেল লাইনের পাশের গর্তে পরে আছে ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। এছাড়া বন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট  থাকায় বিঘ্ন ঘটছে মালামাল খালাস প্রক্রিয়া।

জানা গেছে, বন্দরে আমদানি করা মালামাল রাখার জন্য ৪০টি শেড, ৫টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, ২টি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি রফতানি ট্রার্মিনাল আছে। এসব গুদামে পণ্য ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সব সময়ই বন্দরে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন পণ্য মজুদ থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে  দ্বিগুণ মালামাল ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। এমনকি ট্রাক টার্মিনালে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থের মালামাল রাখা হচ্ছে। জায়গা সংকটে প্রতিদিন কয়েকশ ভারতীয় ট্রাক মালামাল নিয়ে বন্দরের দিনের পর দিন  দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তার ওপর।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন পণ্য ওঠা-নামা করা হচ্ছে। প্রতিদিন পণ্য বোঝাই অন্তত ৩৫০টি ট্রাক লোড-আনলোডের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কাযর্ক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করতে জায়গা সংকট দূর করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শত শত কোটি টাকার পণ্য খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।  ফলে ভারত থেকে পণ্য আসদে দেরি হচ্ছে। পণ্য বোঝায় ট্রাকগুলো বেনাপোলে বন্দরে প্রবেশ করতে ৮ থেকে ১০ দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়।’

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের বন্দর সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ‘বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের অত্যাধুনিক নতুন ইক্যুইপমেন্ট। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি শেড নির্মাণ করতে হবে।’

বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক)  আমিনুর রহমান জানান, ‘সাসেক্সের আওতায় বেনাপোল বন্দরে একশ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে নতুন করে ৮টি শেড নির্মাণ, ফ্লোর পাকা করা, ড্রেন নির্মাণসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থাকছে। কাজ শেষ হলে বন্দরে পণ্যজট কমে যাবে বলে আশা করছি।’

/এসএনএইচ/