থানা হেফাজতে আসামির মৃত্যু: ওসির নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা!

জৈন্তাপুর থানা হেফাজত থেকে নজরুল ইসলাম বাবুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবির নিজের কক্ষে বসেই নিয়ন্ত্রণ করেন থানায় লাগানো সিসি ক্যামেরা। বাইরে গেলে কক্ষটি তালাবদ্ধ করে যান। তিনি ছাড়া থানার আর কেউ সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না। শুক্রবার (১৯ মে) ভোরে জৈন্তাপুর থানা হেফাজতে এক আসামির মৃত্যু হলে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে  প্রশ্ন উঠেছে। থানা সূত্রের দাবি, সিসি ক্যামেরার মনিটরিং ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকলে এ ঘটনা এড়ানো যেত।

পুলিশের দাবি, থানা হেফাজতে থাকা নারী নির্যাতন মামলার আসামি নজরুল ইসলাম বাবু আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি আত্মহত্যার দৃশ্য থানার সিসি ক্যামেরায় ধরাও পড়েছে। এলাকাবাসী বলছে, ওই সময় ডিউটি অফিসারের সামনে যদি সিসি ক্যামেরার মনিটর থাকতো তাহলে থানা হেফাজতে আসামি কী করছেন, সেটি তদারক করা সম্ভব হতো, এমনকি ঘটনা এড়ানো যেত।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবির শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার রুম (ওসি) থেকেই সিসি ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। থানায় আটটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। রাতে রুম বন্ধ থাকার কারণে কেউ সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি।তবে কিভাবে সে আত্মহত্যা করেছে তার রেকর্ড সিসি ক্যমেরায় রয়েছে।’

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে এই থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ডিউটি অফিসারের ডেস্ক থেকে যদি সিসি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করা যেত, তাহলে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

তারা আরও জানান, সিলেটের অন্য থানাগুলোতে ওসি ও দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসাররা থানার সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু জৈন্তাপুর থানার ওসি নিজেই তার কক্ষে বসে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করেন । আর বেরিয়ে গেলে কক্ষে তালা লাগিয়ে যান। 

থানা সূত্রে জানা যায়, থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর প্রথম দিকে ডিউটি অফিসারই ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করতেন। পরবর্তীতে ওসি তার কক্ষে নিয়ে যান।

 শুক্রবার (১৯ মে) ভোরে জৈন্তাপুর থানা হেফাজতে আসামির মুত্যুর ঘটনাটি ঘটে। আসামি নজরুল ইসলাম বাবু জৈন্তাপুর উপজেলার কহাইগড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দিবাগত রাত তিনটার দিকে শহরের বটেশ্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার এসআই  সফিক ও এএসআই হুমায়ুনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ঘিলাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাসরিন ফাতেমার বিয়ে হয়। নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তারা বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে নাসরিন ফাতেমা বাবার বাড়িতে চলে যান। সম্প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ এনে জৈন্তাপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।

ওসি নিজেই সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে থানার এক পুলিশ অফিসার জানান, জৈন্তাপুর থানা দিয়েই সিলেটের জাফলংয়ে যেতে হয়। পাথর কোয়ারির ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক এ পথ দিলে চলাচল করে। একারণে  তিনি নিজেই তার কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করেন।

সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, থানার ডিউটি অফিসারের সামনে থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে ওই থানার পুলিশ অফিসাররা তাকে জানিয়েছেন।

পরে এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল কবিরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে ওসি (তদন্ত) আনোয়ার জাহেদ জানান, থানা হাজতে নারী নির্যাতন মামলার আসামি নজরুল ইসলাম বাবু কম্বল ছিড়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, শনিবার (২০ মে) সকালে বাবুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

থানার সিসি ক্যামেরাগুলো কোথা থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ক্যামেরাগুলো ওসি স্যার নিজেই তার কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন।’

/এপিএইচ/