কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এবং জুড়ী উপজেলায় ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টিলা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আটটি পরিবারের বসতবাড়ি। গত শনিবার (১৭ জুন) রাত থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ টানা চলেছে মঙ্গলবারেও (২০ জুন)।
চার দিনের টানা বর্ষণে কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা, বড়দল, কানেহাত, কালেশা, গৌড়করণ, মুক্তাজিপুর, বাদে ভূকশিমইল, চিলারকান্দি, শশারকান্দি, কোরবানপুর ও মদনগৌরী; কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন, ফরিদপুর, কিয়াতলা, রফিনগর, চুনঘর, গুপ্তগ্রাম, মৈন্তাম, গোপীনাথপুর, কৌলারশি, গোবিন্দপুর, কাকিচার, লক্ষ্মীপুর, সুলতানপুর, অলিপুর ও মিয়ারমহল; জয়চণ্ডী ইউনিয়নের কামারকান্দি, গিয়াসনগর, বেগমানপুর ও আবুতালিপুর এবং জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও, সোনাপুর, পশ্চিম কালিনগর, গৌরীপুর, ভোগতেরা ও জাঙ্গিরাই এবং পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল, চক, খাকটেকা, কালনীগড়, হরিরামপুর, বাছিরপুর ও ধামাই চা-বাগান এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কুলাউড়া কাদিপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, তার এলাকার গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ায় ছকাপন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ছকাপন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কুলাউড়া জয়চণ্ডীর ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু বলেন, ‘পানি বাড়তে বাড়তে এখন বাড়িঘরে ঢুকতে শুরু করেছে। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, অবিরাম বর্ষণে গত রবিবার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জুড়ীর গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও জায়ফরনগর ইউপির ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রওশন আরা খানমের বসতঘরের পাশের টিলা ধসে পড়ে। পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত বেরিয়ে পড়লেও রওশন আরা মাটিচাপা পড়েন। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সোমবার (১৯ জুন) সকালের দিকে একই এলাকায় টিলা ধসে দেলোয়ার হোসেন, হীরা মিয়া, তাজিরুন বেগম, জিবলু মিয়া, রাজেল মিয়া, নসু মিয়া, জয়নাল মিয়া ও তজম্মুল আলীর বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের অনেকে বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কেবি এহিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বীর কাছে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকটি এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জেলা প্রশাসন থেকে ১০৬ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে।’
জুড়ীর ইউএনও মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘চলতি জুন মাসে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ৯২ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন-
হাঁটু পানিতেই কাটবে জুরাইনবাসীর ঈদ!
/এমএ/