আসল আনারসের স্বাদ আমরা ভুলেই গেছি!






অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক মুক্ত আনারস উৎপাদন করছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের ছানোয়ার হোসেন। ছবি- প্রতিনিধিঅর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক মুক্ত আনারস উৎপাদন করছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের মহিসমারা গ্রামের ছানোয়ার হোসেন। তার দাবি, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি পাঁচ বছর ধরে অর্গানিক পদ্ধতিতেই আনারস চাষ করছেন।

ছানোয়ার বলেন, ‘ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করে এই খাদ্য (আনারস) নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। আমার সন্তানকে যা খাওয়াবো না, অন্য মানুষের সন্তানকে তা খাওয়াবো কী করে। তাহলে বিবেকের কাছে হেরে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাসায়নিক যুক্ত আনারস খেতে খেতে আসল আনারসের স্বাদ আমরা ভুলেই গেছি। যদি কোনোভাবে মানুষকে রাসায়নিক মুক্ত আনারসের স্বাদ দেওয়া যায়, তাহলে রাসায়নিক যুক্ত আনারস কেউ আর মুখেই নেবে না। তখন বাধ্য হয়ে সবাই রাসায়নিক মুক্ত আনারস উৎপাদন করবে।’
এই আনারস চাষি বলেন, ‘রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে আনারসের আকার বড় এবং রঙ আকর্ষণী হয়। ক্রেতারা সেটি বেশি দামে কেনে। আর অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত আনারস সাইজে ছোট হয়, দেখতে আকর্ষণীয় নয়। তাই ক্রেতাও কম এই আনারসের।’
আনারস চাষিরা জানান, আষাঢ় মাসের শেষ দিক থেকে শ্রাবণ মাস হলো আনারসের ভরা মৌসুম। এই সময় আনারস পাকা শুরু হয়। তবে এসময়টা বর্ষা মৌসুম হওয়ার কারণে আনারস পরিবহনে ঝামেলা থাকে। বিধায় কেমিক্যাল ব্যবহার করে আগেই আনারস পাকিয়ে বিক্রি করে ফেলেন চাষিরা।

অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক মুক্ত আনারস উৎপাদন করছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের ছানোয়ার হোসেন। ছবি- প্রতিনিধিটাঙ্গাইল শহরের জগলু রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাসায়নিক মুক্ত আনারস দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাকে দেখে এর আগে দুই একজন চাষি অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারস চাষ শুরু করে। ঠিকমতো বাজারজাত করতে না পারায় তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। জেনে শুনে কে লস দিতে চায়?’
তিনি বলেন, ‘রাসায়নিক মুক্ত আনারস বাজারজাতের জন্য সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে চাষিরাও আনারসে রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করে দেবে।’
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দুই একজন কৃষক কেমিক্যাল ব্যবহার না করে অর্গানিক উপায়ে আনারস চাষ করছে। জুলাই মাস থেকে একটি প্রকল্প শুরু হবে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে মধুপুরে যারা আনারস চাষ করে তাদেরকে একত্র করে অর্গানিক পদ্ধতিতে আনারস উৎপাদনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এভাবে উৎপাদিত আনারস দেশের বাইরে রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনারস রফতানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তারা যে শর্ত দিয়েছে সেগুলো আমরা মাঠে নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। এছাড়াও ঢাকার কিছু সুপার শপ আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেমিক্যাল মুক্ত আনারস সরবরাহ করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুষম সার ব্যবহার করলে এমনিতেই আনারস ভালো হয়। চাষিদের বিভিন্ন গ্রুপে একত্রিত করে তাদের কাছ থেকে আনারস সংগ্রহ করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে যার যতগুলো আনারস পাকবে সেগুলো একত্রিত করে বাজারজাত করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে এবং তারা উৎসাহিত হবে।’
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘মধুপুরের যেসব কৃষক কেমিক্যাল মুক্ত আনারস উৎপাদন করছে তাদের উৎসাহিত করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভিন্ন পুরস্কার ও ক্রেস্ট প্রদানের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে আমাদের। সব চাষিকে একত্রিত করে সেমিনার করে সেখানে তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে। এগুলো দেখে অন্যান্য কৃষক অর্গানিক উপায়ে আনারস চাষে উৎসাহিত হবেন।

/এনআই/এসটি/