হাকালুকি হাওর সংলগ্ন শাহপুর, সাদিপুর, মিরশংকর, মহেশঘরি ও বাদে ভুকশিমইল গ্রামে গিয়ে কথা হয় বন্যাদুর্গত মানুষজনের সঙ্গে। তারা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় হাওরের মানুষদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। স্থানীয় জমসেদ মিয়া বলেন, ‘দিনে পানি কিছুটা কমতে দেখা গেলে রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। ফলে পানি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। আবহাওয়ার অবস্থা এই ভালো তো এই খারাপ। এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির কখনও কিছুটা উন্নতি হলেও, হাকালুকি হাওরের তিন উপজেলার মানুষ চরম কষ্টে আছেন।’
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, ‘বেসরকারিভাবে কে, কিভাবে ত্রাণ দেয় তা আমাদের কেউ জানায় না। সদিপুর গ্রামে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, লোকসংখ্যার তুলনায় খুবই কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৌকা দেখলেই দুর্গত নারী-পুরুষ ও শিশুরা কোমর পানি ডিঙিয়ে আঙিনায় বেরিয়ে পড়ছেন ত্রাণের আশায়।’ বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার সাতদিন ধরে পানিবন্দি। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে কেউ কেউ বসতভিটায় উঁচু মাচা করেও থেকে গেছেন।
হাকালুকি হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশত নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ার দুর্ভোগের পাশাপাশি ঘরে ঘরে এখন ভাতের কষ্ট। পাকার আগেই বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শূন্য গোলা। প্রচুর পানি থাকায় ধরা পড়ছে না মাছ। নেই কাজের সুযোগও। সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই পাচ্ছেন না অনেকে। দুর্গতরা জানান, আট দিনে প্রত্যেক পরিবার ১০ কেজি করে চাল ও ১০ কেজি করে আটা পেয়েছেন। এর বাইরে আর কিছু মেলেনি। এছাড়া, ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে চাল, চিড়া, গুড় ও খিচুড়ি দিয়েছেন। তা দিয়েই কোনোমতে তাদের চলছে।
জুড়ীর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের জন্য আরও ৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। তা বিতরণ করা হবে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, ‘ত্রাণবঞ্চিত দূর্গতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিয়েছি। সবাই একবার হলেও ত্রাণ পেয়েছেন। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হয়েছে।’
/এএম