‘সুন্দরবন ধ্বংস করতে ইউনেস্কো থেকে এনওসি আনতে লবিং করছে সরকার’

তেল-গ্যাস-খণিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটিদেশের মানুষের টাকা খরচ করে ইউনেস্কোর কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) আনার জন্য সরকার লবিং করছে বলে জানিয়েছেন তেল-গ্যাস-খণিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য এ লবিং করা হচ্ছে।’ 
বুধবার (১২ জুলাই) বিকালে নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুন্দরবন রক্ষা সমাবেশ তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) কবি আরিফ বুলবুলসহ জাতীয় কমিটির কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ করে তেল-গ্যাস-খণিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে খবর এসেছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ক্ষমতাবান ব্যক্তি, চোরাই টাকার মালিকরা  পুরো সুন্দরবনকে গ্রাস করার তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের কাছে সুন্দরবন হচ্ছে জমি, টাকা বানানোর জায়গা। এজন্য জমি দখল করতে হবে। আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, সুন্দরবন শুধু জমি নয়, সুন্দরবন হচ্ছে মহাপ্রাণ, মানুষের জীবন, সুন্দরবন হচ্ছে— বাংলাদেশের প্রাণ। আমরা এর আগেও দুদককে বলেছি, যদি দুর্নীতিবাজ খুঁজতে চান, সুন্দরবনের আশেপাশে যারা জমি দখল করেছে, বাণিজ্যিক তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের সম্পদের হিসাব নিন। তারা সবাই চোরাই টাকার মালিক। তারা সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার কিছু ভাড়াটিয়া বিশেষজ্ঞ জোগাড় তাদের দিয়ে তোতা পাখির মতো কথাচ্ছে— সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি হবে না। দেশ ও আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ দেখাচ্ছেন প্রতিদিন পানি কিভাবে দুষণ হবে, কীভাবে বায়ু দুষিত হবে।কিভাবে নরসংদী থেকে কলকাতা পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটবে। জন্মগতভাবে শিশুরা পঙ্গু হবে, কিভাবে প্রাণ ও জীব বৈচিত্র্য বিনাশ হয়ে মানুষের জীবিকা নষ্ট হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে কয়েক কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে, সেগুলো একে একে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখানো হয়েছে।’ সরকার কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছে, হারিয়েছে বিজ্ঞান, যোগ করেন তিনি।

শহীদ মিনারে হামলার প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপাল বিরোধী যেকোনও কর্মসুচিতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা তৎপরত হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার আমাদের কর্মসূচির আগেই খুলনা কার্যালয় দখল নিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ প্রতিরোধের দুর্গ। সেই নারায়ণগঞ্জে ভীতসন্ত্রস্থ সন্ত্রাসী বাহিনী শহীদ মিনারে হামলা চালিয়েছে। এই হামলার মধ্যেদিয়ে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হয়নি। বরং তাদের ভীতসন্ত্রস্থ শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। যারা কবিতা, গান, নাটকে ভীত তারা হামলার পথ বেছে নেয়।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সুন্দরবন আন্দোলনের গতি তরুণরা যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেখান থেকে আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই— তারা যত বেশি আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে। আমরা তত বেশি সোচ্চার হবো, সরব হবো। আপনারা অনেকেই জানেন না, নারায়ণগঞ্জে অশান্তির সৃষ্টি করছে তারা। যারা দেশি-বিদেশি কোম্পানির লোকাল এজেন্ট,  যারা আদানি, রিল্যায়েন্স, এনপিসি’র লোকাল এজেন্ট, তাদের একজন নারায়ণগঞ্জের খুনের রাজত্ব তৈরি করেছে। দখলের রাজত্ব তৈরি করেছে। ত্বকী হত্যাকারি পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হলেও সে ধরা পড়ছে না। কারণ তাদের সঙ্গে যুক্ত বড় ক্ষমতা, ভারতের বড় কোম্পানির টাকা। তাদের ধারণা, ওই কোম্পানির টাকার জোরে ক্ষমতার জোরে, অস্ত্রের জোরে যা খুশি তাই করতে পারবে।’

সংগঠনের জেলা কমিটির আহবায়ক রফিউর রাব্বি’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, সাবেক সভাপতি হালিম আজাদ, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, ন্যাপ জেলার সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, হামলার শিকার নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি অমল আকাশ, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ।

/এসএমএ/