নারীদের পর্দা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর সামাজিক চাপে পড়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার এক কলেজশিক্ষিকা। এরপরও বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করায় সালিশ ডেকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন ওই শিক্ষিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আলেমসমাজের বিক্ষোভ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং পুলিশের তৎপরতার কারণে ওই শিক্ষিকার পরিবারের পক্ষ থেকে সালিশ ডাকা হয়। পরে সালিশে ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান ওই শিক্ষিকা।
শিক্ষিকার কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জুয়েল এবং সালিশে উপস্থিত মাওলানা মো. আখতারুজ্জামান জামাল এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। তবে ঘটনার পর থেকে শিক্ষিকার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তার পরিবারের কেউ।
গত দুই দিন আগে নাগেশ্বরী উপজেলার একটি কলেজের এক নারী প্রভাষক নিজের ফেসবুকে বোরকা পরা এক নারীর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘চেহারা যদি এভাবে ঢাকতে হয় তাহলে আল্লাহ চেহারা দিলেন কেন? পুরুষরাই নিজ স্বার্থে নারীদের ওপরে বেশি প্রমোট করে বা করছে অথচ নিজেরা সেটা গ্রহণ করে না।’
তার এই পোস্টের পরপরই ফেসবুকে সমালোচনা শুরু হয়। সেইসঙ্গে তার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করে স্থানীয় আলেমসমাজ। সমালোচনার মুখে শিক্ষিকা পোস্ট সরিয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আরেকটি পোস্ট দেন। কিন্তু তাতেও তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমছিল না। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষিকার পরিবার স্থানীয় আলেমসমাজকে বাড়িতে সালিশ বসিয়ে বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানায়। রবিবার (৪ মে) রাতে ওই শিক্ষিকার বাড়িতে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সালিশে শিক্ষিকার বড় ভাই ও পরিবারের সদস্যরাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আলেমসমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সবার সিদ্ধান্তে হেফাজতে ইসলামের কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক মুফতি শামসুদ্দিন কাশেমি সালিশ বৈঠক পরিচালনা করেন।
সালিশে উপস্থিত মাওলানা মো. আখতারুজ্জামান জামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকা ইসলামের পর্দা প্রথা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ার পর আলেমসমাজ ও মুসল্লিরা বিক্ষোভ করেন। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়। পরে শিক্ষিকার পরিবার থেকে বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে সালিশ ডেকে সমাধানের আহ্বান জানানো হয়।’
মাওলানা জামাল আরও বলেন, ‘রবিবার এশার নামাজের পর সালিশ বৈঠক বসে। এতে ওই শিক্ষিকা পর্দা নিয়ে তার পোস্টের জন্য ভুল স্বীকার করে মুসলিম সমাজের কাছে ক্ষমা চান। তার উপলব্ধি ও ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টিকে সবাই স্বাগত জানান। তিনি ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সেখানেই নিষ্পত্তি করা হয়। এ নিয়ে আর কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। পরে সম্মিলিতভাবে তওবা পাঠ করেছি আমরা সবাই।’
ওই শিক্ষিকার কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জুয়েল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সালিশ আহ্বান করে মীমাংসা করা হয়েছে বলে জেনেছি। শিক্ষিকা তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। প্রভাষক হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে শিক্ষিকা পোস্ট সরিয়ে নেন। পরে নিজের আইডিতে লিখিত ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ক্ষমা চান। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সালিশ বৈঠক আহ্বান করা হলে সেখানেও স্থানীয় আলেমসমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।’