হাঁটা-ই দায় আবার রিকশা!

গোপারগঞ্জ-১বৃষ্টি মৌসুমে রাস্তা খুঁড়ে ড্রেনেজ নির্মাণ করায় চরম ভোগান্তিতে গোপালগঞ্জ পৌরবাসী। কয়েক মাস ধরে শহরের রাস্তগুলো খুঁড়ে রাখায় সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে এসব রাস্তায়। এলাকাবাসী এখন না পারছেন পায়ে হেঁটে চলতে, না পারছেন রিকশা-ভ্যানে যাতায়ত করতে। এ মুহূর্তে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে পৌর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেকেলে হওয়ায় শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই ভোগান্তি কমাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে পৌরসভা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর ‘গোপালগঞ্জ পৌরসভা ড্রেনেজ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাঁচ কিলোমিটার সড়কে এই পাইপ লাইনের কাজ করতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

গোপারগঞ্জ-২আরও জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কজ শুরু করে। আগামী ১৫ আগষ্ট নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ দেখভালের জন্য এলজিইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের আবাসিক এলাকা বা বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। কোনোটির কাজ অর্ধেক, আবার কোনোটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আবার অনেক সড়কের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। এসব রাস্তাগুলো খুঁড়ে ফেলাতে এবং রাস্তার দুই পাশে মাটি রাখায় মানুষজন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না। বাসা থেকে বেরিয়ে না পারছেন পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে, না পারছেন রিকশা-ভ্যানে চড়ে কোথাও যেতে। এখন উভয় সংকটে পড়েছেন পৌরবাসী।

গোপারগঞ্জ-৪এছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক খোঁড়াখুড়ির কাজ চলায় রাস্তার মাঝে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য রাখা হয়েছে বড় বড় পাইপ ও মাটি। ফলে রাস্তার পুরোটাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে পৌরবাসী ঝুঁকি নিয়েই কাঁদা মাটি মাড়িয়েই চলাচল করছেন।

বৈশাখী রোডের বাসিন্দা মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক ধীর গতিতে ড্রেনের যে কাজ হচ্ছে। রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এখনও অর্ধেক কাজ হয় নি। আমাদের বাসা থেকে রেরিয়ে বাজারে যেতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েতো বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই কাজটি বৃষ্টির সময় না করে শীত মৌসুমে করলে মানুষের এতো ভোগান্তী হতোনা।’

গোপারগঞ্জ-৩পৌর এলাকার মিয়াপাড়ার বাসিন্দা সালমা আক্তার, মোহসিন উদ্দিন সিকদার, মো. জামিল হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃষ্টির সময় মানুষ এমনিতে ঘর থেকে বের হতে পারে না। তারপর আবার রাস্তা সম্পূর্ণ খুঁড়ে ফেলেছে। ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তাদের কাজটি দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

গোপালগঞ্জ জেলার সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির (সুজনের) সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘পৌর এলাকাটি মূলত জেলা শহর। এখানে একটি সড়কের কাজ শেষ করে অন্য সড়ক উন্নয়নের কাজ ধরা উচিৎ ছিল। সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে বৃষ্টি মৌসুমে কাজ করায়। একদিকে বৃষ্টি আবার শহরের রাস্তায় মাটির ডিবি তৈরি করে রাখায় পৌরবাসী ভোগান্তিতে রয়েছে। জনদুর্ভোগ বলতে যা বুঝায় তা গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় চলছে। মানুষের চলাচলের পথ ঠিক রেখে এবং কাজগুলো দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

গোপারগঞ্জ-৫গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলি পৌরবাসীর সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ চলায় জনগণকে সাময়িক অসুবিধা মেনে নিতেই হবে। তাছাড়া কয়েকবছর গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় উন্নয়ন কাজ হয়নি। আগামী দুই বছরের মধ্যে পৌর এলাকার সমস্ত ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ করা হবে।’

/এসএনএইচ/